ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৫ বার
বগুড়া: বগুড়া জেলায় গেল রবি ও খরিপ মৌসুমে ভুট্টা চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন চাষিরা। জেলার ১২টি উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন ভুট্টা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বাজারে ভুট্টার দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষক ভুট্টা বিক্রি করে অপ্রত্যাশিত লাভবান হচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান এই পরিসংখ্যান দেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় রবি মৌসুমে ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষাবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৬০৩২ হেক্টর জমিতে। খরিপ-১ মৌসুমে মোট ৭শ’ ১৪ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়। রবি মৌসুমে যার মোট উৎপাদন লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন এবং খরিপে-১ মৌসুমে (৭১৪ হেক্টর জমিতে) ৩ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন ভুট্টা।
জানা গেছে, বগুড়া জেলার তিনটি উপজেলা (সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট) যমুনা নদী বেষ্টিত। এরমধ্যে সারিয়াকান্দির প্রায় ৭টি, সোনাতলার ৩টি ও ধুনটের ১টি ইউনিয়ন পুরোপুরি যমুনায় ঘেরা। এ তিন উপজেলাসহ জেলার কয়েকটি উপজেলায় অনেক কৃষক নিয়মিতভাবেই তাদের ফসলি জমিতে প্রতিবছর ভুট্টা চাষ করে থাকেন। জীবিকার তাগিদে এই ফসলের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল তারা।
বগুড়ায় এ বছর রোগবালাই ও বন্যায় তেমন ক্ষতি করতে পারেনি ফসলের। ফসলও গত বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে। এ ফসল উৎপাদনে কৃষক ত্রিমুখী ভাবে লাভবান হয়ে থাকে। কেননা জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায় ভুট্টার ফল ব্যতীত বাকি অংশ এবং গো-খাদ্যের জন্যেও উপযুক্ত ভুট্টার গাছ।
জেলার শেরপুর, ধুনটসহ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চাষিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, ভুট্টা চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করতে বীজ, সার, পানি, জমি প্রস্তুত- লাগানো, শ্রমিক মজুরি, কাটা-মাড়াইসহ প্রতিবিঘায় তাদের খরচ হয় সর্বোচ্চ ১২-১৫ হাজার টাকা। এরমধ্যে প্রতিবিঘায় উৎপাদন হয় গড়ে ৩০-৩৫ মণ হারে। আগের মৌসুমে তারা প্রতিমণ শুকনো ও সব থেকে ভালো ভুট্টা বাজারে বিক্রি করছেন এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা এবং একটু ভেজা ভুট্টা বিক্রি করছেন ৯০০ টাকায়। এ বছর প্রতিমণ শুকনো ভুট্টা বাজারে বিক্রি করেছেন এক হাজার থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা। এ ফসল ধানের তুলনায় লাভ জনক ও জমিতে সেচ কম দিতে হয়। ফলনও বেশি ভালো হয়। প্রায় সময়ই বাজারে দাম ভালো থাকে এ ফসলের।
সারিয়াকান্দি উপজেলার ভুট্টা চাষি মানিক মিয়া বলেন, তাদের এলাকায় চরাঞ্চলে ব্যাপক পরিসরে ভুট্টা চাষ হয়ে থাকে। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে তাদের টিকে থাকতে হয়। কেননা চরের পলি বা বেলে যুক্ত মাটি সাধারণত পানি ধরে রাখতে পারে না। পানির স্তরও তেমন একটা ভাল না। তাই স্বল্প সেচের ফসল চরের মাটিতে চাষের চিন্তা করতে হয় তাদের। তাই স্বল্প সেচের ফসলের কথা চিন্তা করে ও নিজেদের ভাগ্য বদলে ভুট্টা চাষ বেছে নেন তারা।
তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর আগে থেকে চরাঞ্চলের কৃষক অল্প অল্প করে ভুট্টার আবাদ শুরু করেন। সময়ের ব্যবধানে চাষের জমির পরিধি বাড়িয়ে দেন তারা। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরও চরের অনেক জমিতে ভুট্টা চাষ করেন চরাঞ্চলের চাষিরা। এ বছর ভুট্টা চাষ করে এতো লাভ হবে তা ভাবতেই পারেনি।
ধুনট উপজেলার চাষি দুই ভাই মজনু শেখ, ময়না শেখ জানান, প্রতি বছরই তারা ভুট্টা চাষ করেন। এ ফসল মানুষের নানা ধরনের খাদ্য ও শিল্পজাত ছাড়াও বহুবিধ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই তারা এটিকে বাদ দিয়ে অন্য ফসলের চিন্তা করতে পারেন না। তারা ভুট্টার ফল ব্যতীত বাকি অংশ ও ভুট্টার গাছ গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন।
তারা আরও জানান, গত রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে তারা মোট ১২ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেন। জমির উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলেছেন ও বাজারজাত করেছেন। এতে তারা বেশি লাভবান হয়েছেন। এ বছর ভুট্টা চাষ করে এতো লাভ হবে তা ভাবতেই পারেননি তারা। আগামী মৌসুমেও তাদের সিংহভাগ জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ করবেন বলেও মন্তব্য করেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান বলেন, এ জেলায় খরিপ-১ মৌসুমে ভুট্টার চাষাবাদ শুরু হয় ১৬ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। খরিপ মৌসুমে ভুট্টার এ আবাদ উঠতে মোটামুটি ৪ মাসের কয়েকদিন বেশি সময় লাগে। রবি মৌসুমে ভুট্টার চাষ শুরু করা হয় ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত। এ ফসল কৃষকের ঘরে উঠতে সময় লাগে প্রায় ৪ মাস। উৎপাদন বেশি ও ভাল দাম পাওয়ায় এ জেলার কৃষকেরা আস্তে আস্তে ভুট্রাচাষে ঝুঁকে পরছেন।
অল্প খরচে ও অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনকারী ফসল হওয়ায় চাষিরা খরিপ ও রবি মৌসুমে ভুট্টার চাষাবাদ বাড়িয়েছন কৃষকেরা। কৃষকদের চাষাবাদের তালিকায় রয়েছে উচ্চ ফলনশীল ভুট্টা। যেমন এন এইচ-৭৭২০, এনকে-৯৪০, সুপার সাইন-২৭৪০, এম গোল্ড-৯০০ ইত্যাদি।