ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ ১৪:৫৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১০ বার
ঢাকা: ফের সামনে এসেছে টাকা ছাপানো প্রসঙ্গ। আগের সরকারের সময়ে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের সংকট কাটাতে টাকা ছাপিয়ে ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি তৈরি হয়। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ চেষ্টার মধ্যেই ফের টাকা ছাপানোর ঘোষণা এলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ জমার বাইরে টাকা ছাপিয়ে সরাসরি বাণিজ্যিক ব্যাংক বা সরকারকে ঋণ দিলে পণ্য ও সেবার দাম দাম বেড়ে যায়।
মূলত দুই কারণে টাকা দেওয়া হচ্ছে
সাধারণত বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকিং খাত ধেকে দুই ধরনের ঋণ নিয়ে থাকে। প্রথমত, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। দ্বিতীয়ত হলো, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে যে টাকা দেয় তা ছাপিয়ে দিয়ে থাকে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো টাকা ছাপিয়ে ধার দিলে মূল্যস্ফীতি ঘটে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধানত, দুই ধরনের ঋণ টাকা দিয়ে থাকে। একটি হলো বিধিবদ্ধ জমা ও বিভিন্ন বন্ডের বিপরীতে ঋণ। এগুলো ব্যাংকগুলোর জমা রাখা টাকা থেকে দেওয়া হয়।
এর বাইরে বিধিবদ্ধ জমার অতিরিক্ত টাকা নিলে সেটা ছাপিয়ে দেওয়া হয়। কোনো ব্যাংক সংকটে পড়লে বাড়তি টাকা নিতে হয়। এ বাড়তি টাকা নিলে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে ছাপিয়ে দিতে হয়। এ টাকা বাজারে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি করে।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) পর্যন্ত সংকটে থাকা ছয় ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সহায়তার বড় অংশ দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট নীতিমালার অধীনে তুলনামূলক ভালো ব্যাংকের কাছে থেকে ধার হিসেবে। আর একটি অংশ দেওয়া হয়েছে টাকা ছাপিয়ে। এ বিশেষ তারল্য সহায়তা পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো–ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, এক্সিম ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা টাকা ছাপিয়ে ব্যাংককে ধার দেওয়া থেকে সরে এসেছিলাম। কিন্তু সাময়িকভাবে টাকা ছাপিয়ে না দেওয়ার অবস্থান থেকে সরে আসা হয়েছে। তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংককে সহায়তার অংশ হিসেবে টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ টাকা ছাড়ার ফলে মূল্যস্ফীতি যেন না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। এক হাতে টাকা দিয়ে, আরেক হাতে বাজার থেকে তোলা হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিল ছাড়া হচ্ছে। ১০ টাকা ধার দিয়ে ১০ টাকা বাজার থেকে তুলে নিলে মূল্যস্ফীতির জন্য কোনো সমস্যা হবে না। প্রকৃত মুদ্রা সরবরাহ বাড়বে না। আমাদের বড় লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি কমানো ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির যে ধারা নিয়েছে তা বজায় থাকবে। প্রতিটি ব্যাংকের ওপর তদারকি বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ইসলামী ব্যাংককে ছাপিয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা সব সিঙ্গাপুর চলে গেছে।
টাকা ছাপিয়ে ছাড়লে কার লাভ, কার ক্ষতি?
যেসব ব্যাংককে তারল্য বা নগদ টাকার সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এসব ব্যাংক মূলত সংকটে থাকা ব্যাংককে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করার ফলে সে টাকা আর ফেরত আসেনি। ব্যাংকের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। কিন্তু গ্রাহক যখন ব্যাংককে টাকা তুলতে যাচ্ছে না তখন পাচ্ছে না। ফলে এসব সংকটে থাকা ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দ্বারস্থ হচ্ছে নগদ টাকার জন্য। কিছু টাকা অন্য ভালো ব্যাংকের কাছে থেকে ধার হিসেবে পেলেও এখন আর ভালো ব্যাংকগুলোরও টাকা দিতে পারছে না। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে এসব ব্যাংককে টাকা ধার দিচ্ছে। ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগ নিয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিকদল বাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, টাকা ছাপিয়ে দেওয়ার ফলে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হলেও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ আর শ্রমজীবী মানুষের কাছে টাকা বেশি যায় না। তারা আগের মতোই কম বেতন পায়। ফলে তারা আগের একই পণ্য ও সেবা কিনতে বেশি টাকা দিয়ে থাকে। কিছু মানুষ সিন্ডিকেট করে করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে টাকা নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, টাকা ছাপিয়ে টাকা দেওয়ার পরিবর্তে বা ভালো ব্যাংকগুলোকেও খারাপ না করে শ্রীলঙ্কা কি পদ্ধতিতে সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সে পথ অবলম্বন করার দরকার।
এ ব্যাপারে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, এ ধরনের ক্রাইসিস হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপায়। টাকা ছাপিয়ে ব্যাংককে ঋণ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। যদিও আমি এ টাকা ছাপানোর বিষয়টি সমর্থন করছি না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় এটা করা হচ্ছে। তারপরও আমার বিশ্বাস এ গভর্নর টাকা ছাপিয়ে হুন্ডি করবে না। আগে যেটা করা হয়েছে টাকা ছাপিয়ে কিছু লোককে দেওয়া হয়েছে, আর তারা তা বিদেশে টাকা পাচার করেছে। বর্তমান সরকার গত তিন মাস ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে আর্থিক ব্যবস্থাপনা সঠিক লাইনে ফিরিয়ে আনতে।