ঢাকা, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

যুদ্ধবিরতিতে গাজায় ‘ঈদ আনন্দ’

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৫০ বার


যুদ্ধবিরতিতে গাজায় ‘ঈদ আনন্দ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রমজান শেষে উদযাপিত হয় খুশির ঈদ। গাজায় গত সপ্তাহে সেই উৎসবের দিনটিও ছিল রক্তাক্ত, বিভীষিকাময়। ১১ দিন বাদে ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ হওয়ায় তাই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে যেন বিগত ঈদের উদযাপন ফিরে এসেছে।

গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ২টা থেকে অস্ত্রবিরতি কার্যকরের পর রাস্তায় নেমে আসে উচ্ছ্বসিত ফিলিস্তিনিরা। পতাকা উড়িয়ে, ঢোলের শব্দে, গাড়ির হর্নের আওয়াজে তারা ‘বিজয়’ উদযাপন করে। উল্লসিত অনেকে শূন্যে গুলি ছোড়ে। কেউ কেউ মাতে আতশবাজিতে। আরবিতে গগনবিদারী স্লোগান তোলে তারা—‘আল্লাহ মহান, তাঁকে ধন্যবাদ।’

গভীর রাতে গাজায় নারী, শিশুসহ সব বয়সী মানুষের বাঁধভাঙা এ উচ্ছ্বাস দেখে আলজাজিরার প্রতিনিধি উমনা আল-সায়িদও তাই অকপটে বলেন, ‘গাজাবাসীর জন্য দিনটি সত্যিকার অর্থেই ঈদুল ফিতরের উৎসব হয়ে এসেছে। এর আগে থেকেই ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ায় তারা ধর্মীয় উৎসবটি পালন করতে পারেনি।’

এ কথার প্রমাণ পাওয়া গেল আনন্দ-উৎসবে শামিল হওয়া ৩০ বছর বয়সী আহমেদ আমেরের ভাষ্যে। তিনি বললেন, ‘দখলদারদের বিরুদ্ধে এ এক অসাধারণ জয়। আমাদের প্রতিরোধ যোদ্ধারা (হামাস) তাদের (ইসরায়েল) যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করেছেন। আজ থেকেই ঈদ শুরু হচ্ছে। অনেকে ঘরবাড়ি ও আত্মীয়স্বজন হারিয়েছেন। তা সত্ত্বেও আমরা উৎসব করব।’

‘বিজয় দেখছে দুই পক্ষই’

মিসরের মধ্যস্থতায় কার্যকর হওয়া এ যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্বনেতারা। বাইডেন বলেছেন, অগ্রগতির ক্ষেত্রে এই যুদ্ধবিরতি প্রকৃত সুযোগ এনেছে।

গাজার নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের ‘বিজয়’ অর্জিত হয়েছে বলে দাবি করেছে। এবারের সংঘাতকে তারা সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সফল ‘প্রতিরোধ যুদ্ধ’ হিসেবে দেখছে।

এর বিপরীতে ইসরায়েলও ১১ দিনের লাগাতার হামলায় ‘ব্যতিক্রমী অর্জন’ সাধিত হওয়ার দাবি করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ দাবি করার সঙ্গে সঙ্গে হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন, ‘যুদ্ধবিরতির পর যদি ইসরায়েলের দিকে একটি রকেটও ছোড়া হয়, কোনোভাবেই তা সহ্য করা হবে না।’

প্রাণহানি আড়াই শ ছাড়িয়ে

গত ১০ মে থেকে ১১ দিনে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ২৪৩ ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। এর মধ্যে ৬৬টিই শিশু। ইসরায়েলি কামানের গোলা, বিমান থেকে ফেলা বোমা ও রকেটের আঘাতে আহত হয়েছে দুই হাজারের মতো নারী-পুরুষ। গাজার নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৬০ জনই হামাসের যোদ্ধা বলে দাবি ইসরায়েলের। তাদেরও প্রাণহানি হয়েছে; হামাসের ছোড়া রকেটে ১২ ইসরায়েলি নিহতসহ আহত হয়েছে কয়েক শ।

‘ধ্বংসস্তূপের নিচে মিলছে লাশ’

যুদ্ধ শেষে স্বস্তির হাওয়া বইতে শুরু করলেও এখনো হতাহতের খবর মিলছে। ইসরায়েলি বোমায় গুঁড়িয়ে যাওয়া একটি টানেলে পাওয়া গেছে পাঁচজনের লাশ। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ১০ জনকে। গাজার জনপ্রতিরক্ষা বিভাগের ডেপুটি প্রধান রিয়াদ আল-দাহশান যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বলেন, তাঁরা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে এখনো মরদেহ তালাশ করছেন।

ক্ষতি ৩২ কোটি ডলারের

ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় কী পরিমাণ অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে, তার চূড়ান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গত বুধবার পর্যন্ত গাজার অন্তত ১৮৪টি আবাসিক টাওয়ার ও বাসভবন মাটিতে মিশে গেছে ইসরায়েলি বাহিনীর ছোড়া রকেটে, যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা ঝাঁক ঝাঁক বোমায়। পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ৩৩টি মিডিয়া সেন্টার। সব মিলিয়ে গত বুধবার পর্যন্ত ১০ দিনে গাজার অবকাঠামোগত ক্ষতি ৩২২ মিলিয়ন বা ৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানায় গাজার সরকারি মিডিয়া দপ্তর।

জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ৪৬টি স্কুলসহ অন্তত ৫১টি শিক্ষাবিষয়ক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েলের বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ছয়টি হাসপাতাল ও ১১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। গাজার একমাত্র কভিড-১৯ পরীক্ষাগারটিও অক্ষত থাকেনি।

‘ভিটা আছে, ঘর নেই’

গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত ৫৮টি স্কুলে অন্তত ৬৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরে তারা নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে অনেকেই ফিরে দেখছে, বাড়িটি আর নেই; সেখানে পড়ে আছে ভাঙাচোরা কিছু কংক্রিট, আসবাব।

আছে ফের সংঘাতের আশঙ্কাও

স্বজনের মৃত্যু শোক ভুলে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া আবাস ফের ঠিকঠাক করে জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার উপায় হয়ে এসেছে যুদ্ধবিরতি ঠিকই, তবে এর উদযাপনের মধ্যেও থাকছে এক ধরনের অস্বস্তিও। কারণ যেকোনো সময় যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকছেই। দীর্ঘদিন ধরে চলা উত্তেজনা যেকোনো মুহূর্তে মোড় নিতে পারে নতুন সংঘাত-সংঘর্ষে।

একে-৪৭ বন্দুক হাতে থাকা হামাসের একজন সদস্য যেমন বললেন, ‘আমাদের আঙুল এখনো ট্রিগারে। আমরা ফের যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। তবে এখন আমরা আমাদের জনগণের সঙ্গে আনন্দ উদযাপন করব।’ অন্যদিকে হামাস নেতারা বলেছেন, ঘোষণা এলেও যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুঁটিনাটি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত সতর্ক অবস্থায় থাকবেন তাঁরা।

উল্লাস ছড়াল রামাল্লাতেও

শুধু গাজায়ই নয়, ফিলিস্তিনিদের উল্লাস দেখা গেছে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা রামাল্লাতেও। রাতে শহরটির সড়কে নেমে আসা কয়েক শ মানুষ স্লোগানে স্লোগানে বলতে থাকেন, ‘মনেপ্রাণে আমরা তোমার সঙ্গেই আছি, গাজা।’

আতশবাজির ঝলক দেখা যায় পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকায়ও। সেখানে বসবাসরত কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবারের উচ্ছেদ ঠেকাতে ইসরায়েলের আদালতে দীর্ঘ আইনি লড়াই চলছে। এ নিয়ে সৃষ্ট অসন্তোষ থেকে রমজানে জেরুজালেমজুড়ে শুরু হয়েছিল অস্থিরতা। এরপর তা গড়ায় সংঘাতে।


   আরও সংবাদ