স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৯৬৮ বার
কোন ব্যাংক কোন খাতে কী পরিমাণ ঋণ দিয়েছে তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিশেষ পরিদর্শনের জন্য শিগগিরই নিদের্শনা দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ব্যবসাবাণিজ্য চালু রাখতে চলতি মূলধনের জোগান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় তিন হাজার ৩০০ গ্রাহককে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণও ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু ওই ঋণের সদ্ব্যবহার করেনি কিছু বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ, উপরন্তু জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তা ভিন্ন খাতে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। প্রণোদনার ঋণে জালজালিয়াতি করার অভিযোগ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সাথে যারা ইতোমধ্যে প্রণোদনার অর্থ থেকে ঋণ পাননি, তাদেরকে এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ২৯ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত চলতি অর্থবছরের জন্য নতুন মুদ্রানীতিতেও গভর্নর ফজলে কবির আর্থিক খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও বিদেশে অর্থ পাচার রোধকল্পে ব্যাপক গোয়েন্দ কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর কিছু অপব্যবহার হয়েছে, যা ইতোমধ্যে দেশের গণমাধ্যম ও বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে, চলমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরজমিনে পরিদর্শন বা নিরীক্ষা কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও প্রযুক্তিনির্ভর অফ-সাইট নিরীক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর টাকা যে উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে তা যেন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নজরদারি বাড়িয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। একই সাথে, করোনা পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতির সাথে সাথেই প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে সরেজমিন নিরীক্ষা কার্যক্রম জোরদারকরণের পাশাপাশি এর ব্যবহার ও ফলাফল বিষয়ে বিশেষ সমীক্ষা পরিচালনার বিষয়টিও বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, মুদ্রানীতি ঘোষণার পর পরই প্রণোদানার অর্থ কী পরিমাণ নয়ছয় হয়েছে তা বের করতে বিশেষ পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একজন ডেপুটি গভর্নের নেতৃত্বে তদারকি বিভাগগুলোর দায়িত্বশীল নির্বাহী পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপকদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকেই ব্যাংকগুলোর প্রণোদনার ঋণ বিতরণের ওপর বিশেষ পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ প্রণোদনার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি এসব ঋণ কোন খাতে দেয়া হয়েছে এবং তা কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব তথ্য সংগ্রহের পর পরই বিশেষ পরিদর্শনে নামবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শকরা। এ জন্য অচিরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ মহল থেকে নির্দেশনা দেয়া হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতের নির্দেশ : এ দিকে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকার ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজের আওতায় বিতরণকৃত ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ থেকে গতকাল দেয়া নতুন এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রদত্ত ঋণ যথাযথ খাতে ব্যবহৃত না হয়ে কিছু কিছু ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আলোচ্য ঋণ দ্বারা ঋণগ্রহীতার বিদ্যমান অপর কোন ঋণের দায় সমন্বিত হচ্ছে।
এছাড়া মঞ্জুরিকৃত ঋণের টাকা ছাড়করণেও কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান সময়ক্ষেপণ করছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। অথচ আগের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল একটি ঋণের অর্থ দিয়ে কোনোভাবেই অপর কোনো ঋণের দায় পরিশোধ বা সমন্বয় করা যাবে না মর্মেও এমডিদেরকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালন করা না হলে প্রণোদনা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে, যা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয় বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।