ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

বুড়িরহাট হর্টিকালচারের আয় ছাড়িয়েছে ৩০ লাখ টাকা

বিনোদন ডেস্ক


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৭৪৭ বার


বুড়িরহাট হর্টিকালচারের আয় ছাড়িয়েছে ৩০ লাখ টাকা

রংপুরে উদ্যান ফসলের সম্প্রসারণ ও পুষ্টি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টার। দিন দিন উৎপাদিত চারার বিপণন ও বিক্রি বাড়ছে। এতে সরকারের রাজস্ব খাতে বেড়েছে বার্ষিক আয়। অতিমারি করোনার মধ্যেও গেল দুই অর্থবছরে বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারে রাজস্ব আয় ৩০ লাখ টাকা।

জানা যায়, ২০০১-০২ অর্থবছরে যেখানে আয় ছিল ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪০ টাকা। বর্তমানে (২০২০-২১ অর্থবছর) তা বেড়ে ১৭ লাখ ৫ হাজার ৪১০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। শুধু আয়ই বাড়েনি, সময়ের ব্যবধানে এই সেন্টারে চারা উৎপাদন, কলম ও সংরক্ষণপ্রক্রিয়ায় ব্যাপকতা এসেছে। ২০ বছর আগে যেখানে অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা ৭৮ হাজার ৩২৯ ছিল। এখন তা পৌঁছেছে ২৭ লাখ ৮ হাজার ১৮১-তে।

রংপুর শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টার। গঙ্গাচড়া উপজেলার আরাজী নিয়ামত গ্রামে সাড়ে ২১ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। সুদীর্ঘকাল থেকে এখানে হয়ে আসছে কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা। এখানে প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের ফসলের জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি ফলদ, বনজ, ঔষধি গাছের চারা কলম ও রোপণ করা হয়।

এখান থেকে উৎপাদিত চারা ও বীজ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এতে দেশের কৃষি, ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চাহিদা অনেকাংশই পূরণ হচ্ছে এখান থেকে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও থেমে নেই বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারের কার্যক্রম। উন্নত জাতের ফলের চারা, কলম, বীজ উৎপাদন ও বিতরণ এবং জনপ্রিয়করণে সংশ্লিষ্ট সবাই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত। পাশাপাশি উদ্যান বিষয়ে চাষিদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহযোগিতা এবং উন্নত জাতের ফল ও সবজির প্রদর্শনী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সবুজাভ এই হর্টিকালচার সেন্টারটি দেশি-বিদেশ গাছগাছালি, চারা আর ফুলে-ফলে ভরা। আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, কামরাঙা, জাম্বুরা, জলপাই, পেঁপে, ডালিম, আমলকী ও সুপারিগাছের চারার ছড়াছড়ি সেন্টারে। রয়েছে লটকন, জাবাটিকাবা, আতা, শরিফা, চালতা, কাজুবাদাম, নাশপাতি, ত্বীন, স্ট্রবেরি, পেপিনোমিলনের চারা।

পুরো উদ্যানজুড়ে শোভাবর্ধনকারী গাছের সঙ্গে দোল খাচ্ছে প্রস্ফুটিত বাহারি রঙের ফুল। পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর প্রজাপতির ওড়াউড়িও ফুটিয়ে তুলেছে বাড়তি সৌন্দর্য। উদ্যান কর্মকর্তা, কর্মচারী, মালিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা তরুণ উদ্যোক্তাদের তথ্য প্রদানের পাশাপাশি এই উদ্যানের উপপরিচালক নিজেই তাদের হাতে-কলমে গাছগাছালি দেখিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।

উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারের আয়তন ২১ দশমিক ৫০ একর। এর মধ্যে সাড়ে ১৩ একর জমিতে স্থায়ী মাতৃবাগান রয়েছে। ৩ দশমিক ১ একর জমিতে নার্সারি এলাকা। এ ছাড়া সেন্টারে পুকুর, বাঁশবাগান, সেচ ও নিষ্কাশন নালা, নার্সারি শেড, রাস্তা, ডরমিটরি, অফিস, আবাসিক এলাকা, গ্যারেজ, পার্কিং এলাকা রয়েছে। বিশাল এই সেন্টারে ফল, সবজি, ঔষধি, মসলা, ফুল ও শোভাবর্ধনকারী চারা, কলম ও বীজ উৎপাদন করা হয়ে থাকে।

কৃষকদের লাভবান করা, পুষ্টিচাহিদা পূরণ ও সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে কৃষি গবেষণামূলক এ প্রতিষ্ঠানটি। গেল অর্থবছরে এই হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ৩১টি ব্যাচে ৯০০ জন কৃষক ও বাগান উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অন্তত ৯ হাজার জন নিয়মিত সেবার অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শমূলক সেবা পেয়েছেন।

এ ছাড়া হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যোগে উদ্যান পরিদর্শন ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে ১৪ জাতের আম ও ৪ জাতের লিচু ছাড়া মাশরুম, কমলা, লটকন কলম, জাম্বুরা কলম, জামরুল কলম, লেবু কলম, পেয়ারা কলম, মাল্টা কলম ও কার্টিং ড্রাগন ফলের চাহিদা বেশি।

বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মো. আফতাব হোসেন জানান, বারো মাস ফল দেবে, এটা নিয়ে আমরা গুরুত্বসহকারে কাজ করছি। বিশেষ করে আম, লিচু, মাল্টা ও কমলার নতুন নতুন দেশি-বিদেশি জাত সংগ্রহ করেছি। একসময় আমাদের দেশে কমলা ও মাল্টা আবাদ হতো না। অথচ আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে মাল্টাকে আর বিদেশি ফল বলার সুযোগ থাকবে না। এটি দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশি ফলে পরিণত হবে। দুই থেকে চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মাল্টা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

বিদেশি বিভিন্ন জাতের কমলার মাতৃগাছ রোপণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও জানান, হর্টিকালচার সেন্টারে দার্জিলিং, ছাতকি ও বারোমাসি ভিয়েতনামি কমলার জাত রয়েছে। শিগগিরই এসব মাতৃগাছ থেকে কলম উৎপাদন করা হবে। রংপুর অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় এসব কমলার চারা পৌঁছে গেলে দ্রুত এর সুফলও পাওয়া যাবে।


   আরও সংবাদ