ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

৫০ কোটি টাকার শুটকি রপ্তানির সম্ভাবনা ভারতে

বিনোদন ডেস্ক


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৯৭১ বার


৫০ কোটি টাকার শুটকি রপ্তানির সম্ভাবনা ভারতে

নাটোরের চলনবিল ও হালতিবিল অধ্যুষিত নলডাঙ্গা, সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার ৪০টিরও বেশি স্থানে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের শুটকি উৎপাদন হচ্ছে। বিশেষ করে বোয়াল, টাকি, চিংড়ি, শোল, টেংরা, গুচি, পাতাসি, মোলা ও পুঁটি মাছের শুটকি উৎপাদন করা হচ্ছে। এরমধ্যে পুঁটি মাছের শুটকির পরিমাণ বেশি।  

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত এসব শুটকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌছে যাচ্ছে এসব শুটকি মাছ। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন প্রায় ৩০০ জন শুটকি উৎপাদনকারী। পাশাপাশি এসব শুটকি চাতালে কর্মরত অন্তত এক হাজার নারী-পুরুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন।  

স্থানীয় উৎপাদনকারীদের মতে, এবার ৫০ কোটিরও বেশি টাকার শুটকি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার সিংহভাগই রপ্তানি হবে ভারতে।  

নাটোর জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫০ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে যার পরিমাণ ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত মৌসুমে ৩১৯ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। এবার মাছের উৎপাদন বেশি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ পরিমাণ শুটকি মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।  

সূত্র আরও জানায় জেলার চার উপজেলায় ৪০টি চাতালে এসব শুটকি মাছ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলায় ১৫টি, নলডাঙ্গায় ১৪টি, বড়াইগ্রামে ৪টি ও সিংড়া উপজেলায় ৬টি স্থানে শুটকির চাতাল রয়েছে। এতে সম্পৃক্ত আছেন অন্তত ২৯৩ জন উৎপাদনকারী। আর এসব চাতালে সব মিলিয়ে কাজ করছেন অন্তত এক হাজার নারী-পুরুষ।   

মৎস্য বিভাগের হিসেব মতে, প্রতি ৩ দশমিক ৫ কেজি কাঁচা মাছে ১ কেজি শুঁটকি উৎপাদন হয়। যার গড় মূল্য সময় ভেদে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা কেজি। অর্থাৎ প্রতিমণ শুটকির দাম ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পড়ে। এতে মোট উৎপাদিত শুটকির দাম দাঁড়ায় ১৭ থেকে ২০ কোটি টাকা।  

তবে, স্থানীয় শুটকি উৎপাদনকারীদের হিসেবে প্রতি মৌসুমে (সাত মাস) তারা ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার শুটকি উৎপাদন করেন।  

সূত্র জানায়, সাধারণত বর্ষা মৌসুমের ১/২ মাস পর অর্থাৎ জুলাই থেকে জানুয়ারি এই সাত মাস শুটকি উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। যোগাযোগ সুবিধার জন্য এ সময় তারা বাঁশ দিয়ে বিলের ধারে ও রাস্তার পাশে চাতাল তৈরি করেন। বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসব চাতালে এসে নিয়ে যান শুটকি মাছ। তবে নাটোরের উৎপাদিত শুটকির বেশিরভাগ নীলফামারীর সৈয়দপুরে যায়। সেখান থেকে রপ্তানি করা হয় ভারতে।

সৈয়দপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী ও আড়তদার আবুল বাশার ও রবি বাংলানিউজকে জানান, চলন বিলের উৎপাদিত শুটকি গুণে-মানে ভালো। তাই এর ভালো চাহিদা রয়েছে ভারতে। প্রতি সপ্তাহে তারা এখান থেকে ২/৩ গাড়ি শুটকি নিয়ে যান সৈয়দপুরে। সেখানে বাছাইয়ের পর ভারতে রপ্তানি করা হয়। এতে তারা বেশ লাভবান হন।  

সিংড়ার নিঙ্গুইন এলাকায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ধারে গড়ে ওঠা শুটকি চাতালের মালিক আজহার হাজী, সানা মেম্বার বাংলানিউজকে জানান, তাদের হিসেবে প্রতি মৌসুমে অন্তত এক হাজার মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন হয় এসব চাতালে। যার বেশিরভাগই ভারতে রপ্তানি হয়।  

তারা জানান, প্রতি সপ্তাহে দুটি করে চালান পাঠান সৈয়দপুরে। পরে সেখানে প্রক্রিয়াজাত করে ভারতে পাঠানো হয়। প্রতি চালানে ৫ থেকে ৬ মেট্রিক টন শুটকি মাছ রপ্তানি করা হয়। তবে, পুঁটি মাছের শুটকির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। উৎপাদন খরচ কম হলেও দাম বেশি পাওয়া যায়।  

তারা আরও জানান, অনেক সময় ভারত থেকেও সরাসরি ক্রেতারা এসে তাদের কাছ থেকে শুটকি মাছ কিনে নিয়ে যান। সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা থাকলে সারা বছরই শুটকি উৎপাদন করা সম্ভব হতো।  

সালাম হাজী নামে আরেক চাতাল মালিক জানান, প্রতি কেজি পুঁটি মাছের শুটকি পাইকারি বাজারে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, টেংরা মাছের শুটকি ৪৫০ টাকা, শোল মাছের শুটকি ১১০০ টাকা, পাতাসি ১ হাজার টাকা, গুঁচি ৯০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ টাকা ও মোলা মাছের শুটকি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

চাতাল মালিক জয়নাল হোসেন জানান, প্রতিদিন তিনি গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ মন পুঁটি মাছ কেনেন। আর অন্যান্য মাছ ৫ থেকে ৬ মন। এভাবে মাসে অন্তত ১ থেকে দেড় হাজার কেজি কাঁচা মাছ কিনে শুটকি উৎপাদন করেন। এতে প্রতিমাসে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা পুঁজি লাগে। প্রায় সাত মাস শুঁটকি উৎপাদন হয়। তার চাতালে নারী-পুরুষ মিলে ২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তবে, কোন কোন চাতালে ৩০ থেকে ৪০ জনও কাজ করেন। এজন্য নারী শ্রমিকদের দিনে ১৫০ টাকা আর পুরুষ শ্রমিককে ৩০০ টাকা দিতে হয়।  

সিংড়া উপজেলার নিঙ্গইন গ্রামের নারী শ্রমিক সূরজান বেগম (৬০), আমেনা বেগম (৬২) ও শাহনাজ বেগম (৫০) জানান, শুটকি চাতাল গড়ে ওঠায় তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। গৃহস্থালির কাজকর্ম সেরে শুটকির চাতালে কাজ করে বাড়তি উপার্জন করতে পারছেন তারা। এতে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচের যোগানসহ সংসারের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে।  

তারা আরও বলেন, এই সময়ে সংসারের কাজকর্ম থাকে কম। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চলন বিলের শত শত নারী বিভিন্ন শুটকি চাতালে কাজ করে বাড়তি উপার্জন করছেন। এতে অনেকেরই সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।
 
নলডাঙ্গা উপজেলার দুর্লভপুর এলাকার চাতাল মালিক জানান, আড়াই কেজি পুঁটি মাছে ১ কেজি, ৪ কেজি চিংড়ি মাছে ১ কেজি, আড়াই কেজি শোল মাছে ১ কেজি, ৪ কেজি মোলা মাছে ১ কেজি এবং সাড়ে ৩ কেজি গুচি মাছে ১ কেজি করে শুটকি পাওয়া যায়।  

তিনি বলেন, সরকারিভাবে ঋণ সহায়তা পেলে এবং উৎপাদিত শুটকি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে মাত্র সাত মাস নয়, সারা বছরই উৎপাদন করা সম্ভব। শুটকি উৎপাদন ও বিপণন খুবই লাভজনক। গত কয়েক বছর ধরে শুটকি উৎপাদন করে তিনিসহ অন্তত শতাধিক মানুষ সচ্ছল হয়েছেন।  

নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে জানান, শুটকি মাছ এখন রপ্তানিকারক একটি পণ্য। সঠিক উপায়ে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা গেলে সারা বছরই শুটকি মাছ বাজারজাত করা এবং মূল্যও অনেক বেশি পাওয়া যাবে।  

তিনি বলেন, উৎপাদনে আর্থিক সহায়তা বাবদ ঋণ সুবিধা, সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ ও সোলার ড্রয়ার দিতে পারলে বর্ষাকালে শুটকির পচন রোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি সংরক্ষিত শুটকি সময় মতো বাজারজাত করার সুযোগ পাবেন তারা। বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত।  সূত্র: বাংলা নিউজ


   আরও সংবাদ