ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

সয়াবিন রপ্তানি বন্ধে ফিআবের সংবাদ সম্মেলন

বিনোদন ডেস্ক


প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৭:২৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৯২৯ বার


সয়াবিন রপ্তানি বন্ধে ফিআবের সংবাদ সম্মেলন

সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক হাঁস-মুরগি,মৎস্য ও গবাদিপশুর খাদ্য তৈরির অত্যাবশ্যকীয় একটি উপকরণ ‘সয়াবিন  মিল’ রপ্তানির অনুমতি প্রদান করায় খামারি ও উদ্যোক্তাদের মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করেছে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ(ফিআব)।

আজ বুধবার(২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের “লা ভিঞ্চি হোটেল” এর কনফারেন্স রুমে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, এহতেশাম বি. শাহজাহান, সভাপতি, ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ(ফিআব), মোঃ আহসানুজ্জামান(ফিআব), সাধারণ সম্পাদক, ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, মসিউর রহমান, সদস্য, ফিআব + সভাপতি, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) + সভাপতি, ওয়ার্ল্ড'স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি), শামসুল আরেফিন খালেদ, সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি),  সাইফুল আলম খান, সদস্য, ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব), আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান, সদস্য,  ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব)।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিখাদ্য তৈরিতে প্রধান যে কাঁচামালগুলো ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে- ভূট্টা, সয়াবিন মিল, গম, আটা, ময়দা, ভাঙা চাউল, চাউলের কুড়া, ফিশ মিল, সরিষার খৈল, তৈল, ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি অন্যতম। এর মধ্যে দু'টি উপকরণ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় (১) ভুট্টা এবং (২) সয়াবিন মিল। ভুট্টার ব্যবহার প্রায় ৫০-৫৫ শতাংশ এবং সয়াবিন মিলের পরিমান প্রায় ২৫-৩৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর থেকে ভ‚ট্টার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশীয় মোট চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ ভুট্টা দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। তবে সয়াবিনের উৎপাদন নিতান্তই নগণ্য।

বক্তারা বলেন, বর্তমানে চাহিদাকৃত 'সয়াবিন মিল' দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে 'সয়াবিন মিল' এর মোট চাহিদা বছরে প্রায় ১৮-২০ লক্ষ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৭৫-৮০ ভাগ দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদকারি প্রতিষ্ঠান হতে এবং অবশিষ্ট ২০-২৫ ভাগ আমদানির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। 

দেশে উৎপাদিত সয়াবিন মিলের একমাত্র ক্রেতা হচ্ছে পোল্ট্রি, মৎস্য, ক্যাটল ও ফিড উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ খামারিবৃন্দ উল্লেখ করে তারা জানান,সয়াবিন মিলের রপ্তানির সিদ্ধান্তে খামারিরা উদ্বিগ্ন কারন ডিম, মাছ, মুরগি উৎপাদনে মোট খরচের প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ খরচই হয় ফিড ক্রয় বাবদ। তাই ফিডের মূল্য বৃদ্ধি পেলে খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়ে; অন্যদিকে খরচের বিপরীতে পণ্যের নায্য দাম না পাওয়ায় বড় অংকের লোকসানের মুখে পড়তে হয় তাঁদের।  

তারা বলেন, অতীতে চাহিদা মেটাতে সিংহভাগ সয়াবিন মিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হলেও এলসি করা, অতিরিক্ত জাহাজ ভাড়া, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে জটিলতা, ল্যাব টেস্টের জটিলতা, বিলম্ব মাশুল, ইত্যাদি নানাবিধ জটিলতার কারণে সয়াবিন মিল আমদানির পরিমান সাম্প্রতিক বছরগুলো ক্রমান্বয়ে  হ্রাস পেয়েছে।

বর্তমানে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন মিল আমদানি করতে হলে এলসি করা থেকে শুরু করে বন্দরে মাল এসে পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৫০ দিন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সময় লাগে ৭০ দিন। ভারত থেকে সড়কে ৭-১০ দিন, কনটেইনারে ১৫-২০ দিন। বিশ্ববাজারে এবং সেই সাথে পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে সয়াবিন মিলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সে দেশের পোল্ট্রি, ডেইরি ও মৎস শিল্প রক্ষা করতে এবং স্বল্পতম সময়ে বাংলাদেশ থেকে সয়াবিন মিল আমদানির জন্য আগ্রহ বেড়েছে ভারত, নেপাল প্রভৃতি দেশের ফিড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর। আমাদের উদ্বৃত্ত থাকলে রপ্তানি করতে কোন অসুবিধাই ছিলনা কিন্তু দেশের চাহিদা যখন দেশীয়ভাবে পূরণ করা যাচ্ছে না; তখন রপ্তানির সিদ্ধান্ত কেন? প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।

"সয়াবিন মিল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার" এমন খবর জাতীয় সংবাদ-মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন মিলের দাম কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা বৃদ্ধি করেছে; সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে; ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তাঁরা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় হতে সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের সুস্পষ্ট মতামতসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি প্রদান করলে এগুলোর কোন কিছুই আমলে না নিয়ে একতরফাভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানির সিদ্ধান্তে অনঢ় রয়েছে এবং ভারত ও নেপালে সয়াবিন মিলের রপ্তানি চালু রয়েছে। শুধু তাই নয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সয়াবিন মিল বন্ধের আদেশ প্রদান করলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের কারণে তা পুনরায় প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান তারা।


   আরও সংবাদ