বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর, ২০২১ ০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৯৩ বার
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে ধরিত্রীকে বাঁচাতে বিশ্বব্যাপি সবুজ অর্থায়ন বা গ্রিন ব্যাংকিংয়ের দাবি জোরালো হচ্ছে। বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ২০১১ সালে গ্রিন ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে পরিবেশবান্ধব শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। ধরিত্রীকে বাঁচানোর তাগাদা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করে সবুজ অর্থায়নে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে এসেছে অগ্রণী ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবই বলছে, দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সবুজ অর্থায়ন করেছে অগ্রণী ব্যাংক। আর এ কারণে সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত এই বাণিজ্যিক ব্যাংকটিকে শীর্ষ সবুজ অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে পুরস্কৃত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করে অগ্রণী ব্যাংক সহ অনেক ব্যাংক এগিয়ে আসায় গ্রিন ব্যাংকিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ গ্রিন ব্যাংকিংয়ে এগিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মোট সবুজ অর্থায়নের ১৬ শতাংশই একা অগ্রণী ব্যাংক করেছে। অগ্রণী ব্যাংকের গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ের আওতায় বিতরণকৃত ঋণের মাসিক বিবরণী থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এই খাতের ১ হাজার ২৫৮টি প্রকল্পে ৭৫৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে ৫টি সবুজ কারখানায় ৬২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা; একটি রিসাইক্লিং এন্ড রিসাইক্লেবল প্রোডাক্ট প্রকল্পে ৪৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা; ১২টি পরিবেশবান্ধব ইট প্রস্তুতকারী কারখানায় ২৮ কোটি ১ লাখ টাকা; ৭টি পরিবেশবান্ধব অটো রাইস মিল স্থাপনে ৩২ কোটি ৩ লাখ টাকা; একটি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা; একটি পরিবেশবান্ধব ইটিপি প্লান্ট স্থাপনে ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা; একটি কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ২ কোটি ৪ লাখ টাকা; পরিবেশবান্ধব ২৫৯টি কুটির শিল্পে ৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা; ১৮৩টি সমন্বিত গরু পালন এবং বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা; ৩১৮টি সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনে ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা; ৩০৪টি পরিবেশবান্ধব বাহনে ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং ১৬৬টি কেঁচোকম্পোস্ট প্রকল্পে ৮৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা অর্থায়ন করেছে অগ্রণী ব্যাংক।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে পৃথিবীকে বাঁচানোর লক্ষ্যে সবুজ অর্থায়নের পাশাপাশি বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার সরকারি অঙ্গীকার বাস্তবায়নের সঙ্গী হয়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগোচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক। অবকাঠামো নির্মাণ থেকে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন- দুই দিকেই সমান নজর দিচ্ছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশ ও জনগণের প্রতি শতভাগ প্রতিশ্রæতি রক্ষা করেই প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের স্বকীয় অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে অগ্রণী। যে কারণে ব্যাংকটি ইতোমধ্যে রেমিট্যান্স আহরণ, আমানত, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য, গ্রীন ব্যাংকিং, অনাদয়ী ঋণ আদায়, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়ন সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূচকে শীর্ষে উঠে এসেছে। ব্যাংকটিকে মধ্যমেয়াদে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের সর্ববৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে নিরবিচ্ছিন্ন গতিতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম, যিনি ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’-এর রূপকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারের
নির্দেশে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কর্নার সারাদেশের সকল স্কুল-কলেজ সহ সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়িত হয়েছে। এমনকি দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতের পাঞ্চাবেও বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপিত হয়েছে।
বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার প্রতীক যে পদ্মা সেতু, এর অংশীদার অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে পাশে দাঁড়িয়েছিল ব্যাংকটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তের কারণে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে। এই সেতু নির্মাণে বৈদেশিক মুদ্রা সরবারাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারপ্রধানের পাশে দাঁড়িয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় সকল বৈদেশিক মুদ্রা রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটিই সরবরাহ করছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পে ১৪০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করেছে অগ্রণী। সেতুর কাজ সম্পন্ন করতে মোট ২৪৩ কোটি ডলারের প্রয়োজন হচ্ছে। বাকি প্রায় ১০৩ কোটি ডলারও অগ্রণী ব্যাংক সরবরাহ করবে। জানা গেছে, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের একটি চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার নিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরবরাহ করতে পারবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনও ডলার নিতে হয়নি। জানা গেছে, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা থেকেই পদ্মা সেতুর প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করছে ব্যাংকটি।
এসব বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে যে কয়টি দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। তাই আমাদের পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে। আর এ জন্য গ্রিন ব্যাংকিং বড় ভ‚মিকা রাখতে পারে। এজন্যই সবুজ অর্থায়নে আমরা বেশি মনোযোগ দিয়েছি। সামনে সবুজ অর্থায়ন আমরা আরও সম্প্রসারিত করবো।”
অগ্রণী এমডি বলেন, “আমরা শুধু মুনাফাই করব, দেশ ও জনগণের প্রতি কোনও দায়িত্ব পালন করবো না, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে এমনটা হওয়া উচিত নয়। তাই আমরা দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করাকেই প্রাধান্য দিই। এজন্য পদ্মা সেতু নির্মাণে শুরু থেকেই আমরা সরকারের সঙ্গে আছি। প্রয়োজনীয় সকল বৈদেশিক মুদ্রা অগ্রণী ব্যাংক সরবরাহ করছে। আমাদের রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় থেকে এ পর্যন্ত ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করেছি। পদ্মা সেতু নির্মাণে আরও যত বৈদেশিক মুদ্রা লাগবে তা আমরা দিতে পারব।