ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

করোনায় কর্মহীন দেড় কোটি, পদ সৃজন ৪৫ হাজার

বিনোদন ডেস্ক


প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর, ২০২১ ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৪১ বার


করোনায় কর্মহীন দেড় কোটি, পদ সৃজন ৪৫ হাজার

করোনায় দেড় কোটি লোক কর্মহীন হয়ে পড়লেও সরকারিভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৪৫ হাজারের। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নতুন এসব পদ সৃজন করা হয়েছে। গত এক বছরে পদ সৃজনের একাধিক প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বেশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগে। অর্থ বিভাগ সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রয়োজনের তুলনায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি অপ্রতুল। তবে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাড়িয়ে বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাহলে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালে বিভিন্ন ভাবে নতুন পদ সৃজনের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে ৪৫ হাজার ১৯৪টি। এরমধ্যে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় নতুন পদ ১৮ হাজার ৪৩৭টি, স্বাস্থ্য বিভাগে ২২ হাজার ৬৭৩ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পদ সৃজন করা হয় ৪০৮৪টি। বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে করোনা মহামারির সময় বিশ্বে ১৯ কোটি লোক চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছেন। শুধু ভারতেই এর সংখ্যা ১৩ কোটি। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার জরিপে বাংলাদেশে কর্মহীন হয়েছেন এমন সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। তাদের অনেকে কাজ হারিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। তারা আর শহরে ফেরেননি। তবে গ্রামে বেশি কর্মহীন হয়েছেন। এখনও অনেকে কর্মসংস্থানে ফিরতে পারেননি এমন সংখ্যাও প্রায় ৪০ শতাংশ। 

করোনায় কর্মহীন জনগোষ্ঠী নিয়ে গবেষণা করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত। তার গবেষণায় দেখানো হয়-দেশে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে ৬ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার মানুষ কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। শুধু লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়েছেন ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৭১ জন। এর মধ্যে কৃষি খাতে ১ কোটি ১৪ লাখ, শিল্প খাতে প্রায় ৯৩ লাখ শ্রমিক এবং সেবা খাতে ১ কোটি ৫৩ লাখ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। অর্থাৎ মোট কর্মগোষ্ঠীর ৫৯ শতাংশ মানুষই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকার হয়েছেন সেবা খাতে। 

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, প্রয়োজন ছাড়া সরকার পদ সৃষ্টি করলে চলবে না। যাদের নতুন নিয়োগ দেবে তাদের উৎপাদনশীল খাতে আনতে হবে। বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জনবল কাজ করছে। তবে নানা ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে পারে সরকার। এতে বেসরকারি খাত চাঙ্গা হবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার মধ্যে যেসব পদ সৃজন হয়েছে এরমধ্যে প্রথম গ্রেডের ৪৫৩১টি, দ্বিতীয় গ্রেডের ৪৫৮২টি, তৃতীয় গ্রেডের ৫৪৭৪টি এবং চতুর্থ গ্রেডের আছে ৩৮৭০টি। এছাড়া করোনার সময় স্বাস্থ্য বিভাগে সবচেয়ে বেশি জনবল নিয়োগ হয়েছে। করোনা সংক্রমণের শুরুতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খায় সরকার। আক্রান্তের অনুপাতে স্বাস্থ্য বিভাগে চিকিৎকসহ স্বাস্থ্যকর্মী সংকট ছিল। দ্রুতগতিতে এ সময় স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে ১১৭৪টি জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ৬ হাজার সহকারী সার্জন, ১০ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে ৪৯৩১টি এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য ৫৬৮টি পদ সৃষ্টি করা হয়। এসব পদ সৃজনে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে ৩২টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১ম-৯ম গ্রেডভুক্ত ৮৬১টি পদ, দশম গ্রেডভুক্ত ৩৪৮টি পদ, ১১তম-১৬তম গ্রেডভুক্ত ১৭৭১টি পদ এবং ১৭তম-২০তম গ্রেডভুক্ত ১১০৪টি পদ সৃষ্টি করা হয়।

জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, সরকারের এখনও অনেক ডিপার্টমেন্টে পদ খালি আছে। আবার নতুন পদের চাহিদা প্রতি বছর বাড়ছে। সরকারি কর্মকাণ্ডের পরিধি বাড়ছে। ফলে লোকবলের প্রয়োজন হয়। যে কারণ প্রতিবছরই অর্থ বিভাগ থেকে পদ সৃজন করতে হয়। এরপরও যে সংখ্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রয়োজন সে তুলনায় এখনও কম। যেমন দেশের মোট জনসংখ্যা অনুযায়ী কতজন পুলিশ, ডাক্তার, বিচারকসহ পেশাজীবী আছেন। অনুপাতে অনেক কম। সে হিসাবে সরকারের প্রশাসনে জনবল আরও দরকার ছিল। কিন্তু ব্যয় ব্যবস্থার দিক পর্যালোচনা করে সেভাবে পূরণ করা হচ্ছে না।

সরকারের পদ সৃজনের অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগ। সে বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শুলেখা রানী বসু যুগান্তরকে বলেন, সরকারের কার্যক্রমের পরিধি বাড়ছে। সে সঙ্গে লোকবলের প্রয়োজন হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবছরই নতুন পদ সৃজন করতে হয়। তবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা পদ সৃজনের যে প্রস্তাব পাঠায় অর্থ বিভাগে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনে পদ সৃজনের সংখ্যা কমিয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবের শতভাগ বাস্তবায়ন খুব কমই করা হয়। কারণ এর সঙ্গে অর্থ ও ব্যয় যোগ থাকে।

সূত্রে জানা গেছে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ৩৩টি জেলার যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বগুড়া যুব কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে উপ-পরিচালক কার্যালয়ের জন্য রাজস্ব খাতে ১০৩২টি পদ সৃষ্টির সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং অধিদপ্তরের অধীন ১১৩টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৯৮টি পদ সৃজন হয়েছে। ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজের রাজস্ব খাতে ৫০টি, জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে ১৪৮টি, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডে ২৫৭টি নতুন পদ সৃষ্টি হয়েছে। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জন্য ১৯৫টি পদ সৃজনের সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। পাশাপাশি সারা দেশে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের জন্য ২৬৪টি পদ সৃজন হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন অনুবিভাগে ১০টি এবং বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালের জন্য ৯৭১টি ক্যাডার, ৭২১টি নন-ক্যাডার পদসহ ১৬৯২টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। জেলা হাসপাতালের জন্য ৫৯১টি ক্যাডার, ১৭১৮টি নন-ক্যাডার পদসহ ২৩০৯টি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য বিভাগে ৪৪৩টি ক্যাডার ও ১৩৭টি নন-ক্যাডার পদ সৃষ্টিতে সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
 


   আরও সংবাদ