ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ১১:০৮ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৫৭ বার
ভারতকে মহাশক্তি হিসাবে দেখে রাশিয়া। এমনটাই বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্রাদিমির পুতিন। সংক্ষিপ্ত ভারত সফরে সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। পুতিন বলেন, ‘আমরা ভারতকে একটি মহান শক্তি, একটি বন্ধুত্বপূর্ণ জাতি এবং একটি সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু হিসাবে উপলব্ধি করি। আমাদের দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বাড়ছে।’ সোমবার নয়াদিল্লি পৌঁছান পুতিন। এরপর হায়দরাবাদ হাউজে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠকের পর পুতিন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে এটিই প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। এর আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের মধ্যে বৈঠক হয়। এজন্য এই বৈঠককে ২+২ বৈঠকও বলা হচ্ছে।
অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ কেনা নিয়ে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার হুমকির মুখে প্রতিরক্ষা সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি এই বৈঠকে বাণিজ্য সম্পর্ক, আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসবাদ দমন ও আফগানিস্তান বিষয়ে আলোচনাও এজেন্ডায় ছিল। ইতোমধ্যে রুশ প্রযুক্তিতে একে-২০৩ স্বয়ংক্রিয় রাইফেল তৈরির একটি চুক্তি সই সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিক চুক্তি আগেই হয়েছিল।
সোমবার মোদি-পুতিন বৈঠকের আগে সেই চুক্তি চূড়ান্ত হয়। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু চুক্তিতে সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১০ বছরে আমেথির ‘করওয়ার অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি’তে রুশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছয় লাখের বেশি কালাশনিকভ সিরিজের সর্বাধুনিক সংস্করণ একে-২০৩ রাইফেল তৈরি হবে। চুক্তির অঙ্ক ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। টুইটারে কালাশনিকভ চুক্তির কথা জানিয়ে রাজনাথ বলেন, ‘রাশিয়ার দৃঢ় সহযোগিতাকে ভারত গভীরভাবে উপলব্ধি করে। আমরা আশা করি, আমাদের সমন্বয় আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুস্থিতি আনবে।’ এরপর বৈঠকে বসেন মোদি-পুতিন। বৈঠকে পুতিন আরও বলেন, ‘বর্তমানে পারস্পরিক বিনিয়োগ প্রায় ৩৮ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে এবং রাশিয়ার দিক থেকে কিছুটা বেশি বিনিয়োগ আসছে। সামরিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে আমরা অন্য কোনো দেশের থেকে বেশি সহযোগিতা করি। একসঙ্গে আমরা উচ্চ প্রযুক্তির বিকাশের পাশাপাশি ভারতে উৎপাদনও করি।’
মোদি বলেন, ‘করোনার কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যার পরেও ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের মধ্যে কোনো দূরত্ব আসেনি। আমাদের বিশেষ এবং বিশেষ অধিকার গ্রহণের কৌশল নিয়মিতভাবে শক্তিশালী হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক দশকে বিশ্ব অনেক মৌলিক পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছে এবং বিভিন্ন ধরনের ভূরাজনৈতিক সমীকরণের উদ্ভব হয়েছে, কিন্তু ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে।’
মোদি-পুতিন বৈঠকের আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠক করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। বৈঠকে জয়শংকর বলেন, ‘আমাদের এই বন্ধন সময় দ্বারা পরীক্ষিত। এই পৃথিবীতে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু এই বন্ধন সুদৃঢ় রয়েছে। রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রী জানিয়েছেন, গোটা বিশ্বের প্রতি ভারত ও রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির অনেক মিল রয়েছে।’ লাভরভ বলেন, কার থেকে কী অস্ত্র কেনা হবে সেটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা ভারতের রয়েছে। স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসাবে ভারত যার থেকে ইচ্ছা অস্ত্র কিনতে পারবে।