ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ২২:০২ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৫৩ বার
টানা ১২ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে রাজত্ব করে গত দুই বছর নির্বাসনে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এবারের আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে তার উপদেষ্টা পদটিও চলে যাওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে শেষ সম্পর্কটুকুও চুকে গেল তার।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খন্দকার মোশাররফ। ২০০৯ সালে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী হন। এরপর থেকে ২০২০ সালের ৭ জুন পর্যন্ত ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনিই ছিলেন একচ্ছত্র ব্যক্তি। তার নির্দেশেই পরিচালিত হতো ফরিদপুরের রাজনীতি, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। ওই সময় তিনি ছিলেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য।
২০২০ সালের ৭ জুন ফরিদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ফরিদপুর -৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের ফরিদপুর শহরের বদরপুরের বাড়িতে ও বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় তার প্রভাব বলয়ের কেন্দ্রে থাকা দুই সহোদর ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ ডজন খানেক নেতাকে। এর দুই দিন পর ৯ জুন খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকায় চলে যান। ওই বছর ১৪ জুলাই এক রাতের জন্য ফরিদপুর এসেছিলেন। এ সময় তার সফর সঙ্গী ছিলেন তার মেয়ে। এরপর ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তার চাচীর জানাজায় এক রাতের জন্য ফরিদপুর আসেন মেশাররফ। এরপর থেকে তিনি আর ফরিদপুরে আসেননি।
আড়াই বছর আগে ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ার পর বছর খানেক তার অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাতেন শিগগিরই আবার জোরেশোরে ফিরে আসছেন মোশাররফ। গত দের বছর হলো সেসব প্রচারণা বা প্রোপাগান্ডাও নেই। ফরিদপুরের রাজনীতিতে এখন আর মোশররফের নাম উচ্চারিত হয় না।
ফরিদপুরের আওয়ামী রাজনীতির নাটকীয় পট পরিবর্তনের পর দুবছর জেলা আওয়ামী লীগ চলতে থাকে পুরনো কমিটি দিয়েই। গত ১২ মে ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে শামীম হককে সভাপতি এবং শাহ ইশতিয়াককে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। অদ্যাবধি জেলা আওয়ামী লীগ চলছে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দিয়েই। অর্থাৎ জেলা বা কেন্দ্র দলের কোথাও কোনো কমিটিতে আর নেই মোশাররফ হোসেনের নাম। তার এক সময়ের চার প্রধান সিপাহী সালার আপন ভাই ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের, এপিএস এএইচএম ফোয়াদ, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেল বর্তমানে মানি লন্ডারিং মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে আছেন।
ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় মোশাররফ হোসেন সম্পর্কে বলেন, ‘ওই সময় আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন নেমে এসেছিল। আওয়ামী লীগের নির্যাতিত, নিপীড়িত নেতাদের যে দীর্ঘশ্বাস সে দীর্ঘশ্বাসের ফল আজ আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে ফরিদপুরে কোনো রাজনীতি ছিল না। যারা রাজনীতি করেছেন বা করতে চেয়েছেন তাদের তা করতে দেয়া হয়নি। আরেক দল ছিল যারা সব সুযোগ সুবিধা পেয়ে রাজনীতি করেনি, লুটপাট করেছেন। এই দুয়ের সংঘাতে ফরিদপুরে রাজনীতি ছিল একেবারে অনুপস্থিত।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, দলে কে থাকবে আর কে বাদ পড়বে এটা আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের নির্ধারণ করা, সর্বোপরি শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সেটা হয়। কেউ বয়সের বিবেচনায়, কেউ অসুস্থতার কারণে আবার কেউ প্রত্যাশা অনুযায়ী দলের জন্য অবদান না রাখার জন্য বা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দল থেকে বাদ পড়ে যান। খন্দকার মোশাররফ এমপি থাকা অবস্থাতেই যেহেতু দলের সঙ্গে সম্পর্ক চ্যুত হয়েছেন, এটা দলের শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্তেই হয়েছেন।
২০২০ সালের ৭ জুন ফরিদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযানের মূল সূত্র ছিল তার কিছু দিন আগে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার ঘটনা। তিনি হামলাকারী ওই ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। খন্দকার মোশাররফের লোকদের নামে প্রথম প্রকাশ্যে মামলাকারী ওই প্রবীণ নেতা বলেন, শেখ হাসিনা অত্যন্ত বিচক্ষণ মানুষ, তিনি জেনে বুঝেই খন্দকার মোশাররফকে দল থেকে বাদ দিয়েছেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বর্তমানে জেনেভায় আছেন মেয়ের কাছে। সেখানে তিনি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করাচ্ছেন জানিয়ে বলেন, বর্তমানে বয়সও তো হয়ে গেছে অনেক। পঁচাশি বছর, আর কত পারা যায়। তাছাড়া মানুষতো রিটায়ার্ড করে কর্মজীবন শেষে। রাজনীতি করতেও বয়স লাগে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর তার নাম দলের কোনো তালিকায় দেখা যায়নি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, আমি নিজেই বলেছি আমাকে না রাখতে। বয়সের কারণে আমি স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছি।