ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২ অগাস্ট, ২০২৩ ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ২০৫ বার
নতুন উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩-এর খসড়া প্রকাশ করেছে সরকার। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও অংশীজনের তীব্র আপত্তির মুখে নতুন খসড়া আইনের বিভিন্ন ধারা অনেকটা শিথিল করা হয়েছে। ফৌজদারি অপরাধ পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। সাজা হিসেবে থাকছে না কারাদণ্ড, রাখা হয়েছে শুধু জরিমানার বিধান।
খসড়া আইনটি জনসাধারণের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নাগরিকদের উপাত্ত সুরক্ষা এবং তা প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত বিষয় তত্ত্বাবধান এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে আইনটি করা হচ্ছে। পুরোপুরি দেওয়ানি প্রকৃতির এ খসড়া আইনে ৭১টি ধারা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন, খসড়ায় কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়নি।
উপাত্ত সুরক্ষা আইনের আগের খসড়াগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ জানান। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তর থেকে গত বছরের ১০ আগস্ট সরকারকে ১০টি পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়।
বিদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বেগ ছিল বাংলাদেশে উপাত্ত সংরক্ষণ ও স্থানান্তর সংক্রান্ত বিধিনিষেধ নিয়ে। সেখানে নতুন খসড়ায় অনেকটাই ছাড় দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা উপাত্তে প্রবেশের সরকারি ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেখানেও কিছুটা রক্ষাকবচ রাখা হয়েছে। তবে সুযোগ পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়নি।
নতুন খসড়ায় আইনটির বড় এক পরিবর্তন হচ্ছে, কারাদণ্ড বাদ দেওয়া। বলা হয়েছে, বিদেশি কোম্পানি এই আইন লঙ্ঘন করলে বাংলাদেশে তাদের এক বছরের ব্যবসার মোট টার্নওভারের (লেনদেন) ৫ শতাংশ অথবা বিধান লঙ্ঘনের ফলে যে ক্ষতি হয়, তার ১৫০ শতাংশ অর্থ জরিমানা করা যাবে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও জরিমানা রয়েছে। জরিমানায় কেউ ক্ষুব্ধ হলে আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে পারবে। সরকার পাঁচ সদস্যের আপিল কর্তৃপক্ষ গঠন করবে।
উপাত্ত স্থানান্তর নিয়ে নতুন খসড়ায় বলা হয়েছে, বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অথবা চুক্তির কারণে উপাত্ত স্থানান্তর করা যাবে। আগের খসড়ায় ‘উপাত্ত সুরক্ষা এজেন্সি’ গঠনের কথা বলা হয়েছিল। এবার সেখানে ‘বাংলাদেশ উপাত্ত সুরক্ষা বোর্ড’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। সরকার একজন চেয়ারম্য্যান ও চার সদস্যের সমন্বয়ে এই বোর্ড গঠন করবে। বোর্ড সরকারের নীতি ও নির্দেশনা মেনে চলবে।
নতুন খসড়ায় ব্যক্তিগত তথ্যের একটি সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যে তথ্য দিয়ে কাউকে শনাক্ত করা যায়, সেটিই ব্যক্তিগত তথ্য। সংবেদনশীল উপাত্তের সংজ্ঞা থেকে আর্থিক বা বাণিজ্যিক উপাত্ত বাদ দেওয়া হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ ব্যাপারে বলেন, ব্যক্তিগত উপাত্তের সংজ্ঞা আরও বিস্তৃত ও সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে যারা তথ্য ব্যবহার করবেন, তাদের হাতে অপরিসীম ক্ষমতা দেওয়া হবে। কোনটা ব্যক্তিগত, কোনটা ব্যক্তিগত নয়, তা না বুঝে ব্যবহারের ঝুঁকি থাকবে। নতুন খসড়ায় কারাদণ্ডের বিধান বাদ দেওয়াকে ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে উল্লেখ করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, সরকার নিজেই তথ্য ব্যবহারকারী। যে বোর্ড গঠন করা হবে, তা সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে হতে হবে। কারণ, সেটি না হলে অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে যাবে।
নতুন খসড়ার ৬৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা জনশৃঙ্খলার স্বার্থে, বোর্ডকে প্রয়োজনীয় যে কোনো নির্দেশ প্রদান করতে পারবে। বোর্ড আইনের অন্যান্য বিধানকে ক্ষুণ্ন না করে নির্দেশ মানতে বাধ্য থাকবে।
নতুন খসড়ার ১০ নম্বর ধারায় বলা রয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষা বা কোনো অপরাধ প্রতিরোধ, শনাক্ত ও তদন্ত করার উদ্দেশ্যে উপাত্তধারীর কাছ থেকে বিধি ধারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে উপাত্ত সংগ্রহ করা যাবে। ৩৩ নম্বর ধারায় অপরাধ দমনের উদ্দেশ্যে উপাত্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে আইনের বিধান প্রয়োগে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে কোনো
উপাত্ত-জিম্মাদারকে এ আইনের কোনো বিধান প্রয়োগ থেকে অধিকতর অব্যাহতি দিতে পারবে বলেও খসড়া আইনে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যারা অব্যাহতি পাবেন, তাদের হাতে তথ্য অপব্যবহারের জন্য অবারিত সুযোগ তৈরি হতে পারে, যা সাধারণ নাগরিকদের জন্য আশঙ্কার। উপাত্ত সুরক্ষা আইনের অধীনে সরকার গঠিত বোর্ড কোনো দায়িত্ব পালনের জন্য বিধিবিধান সাপেক্ষে উপাত্ত জিম্মাদার বা প্রক্রিয়াকারীকে লিখিতভাবে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারবে এবং তারা তা মানতে বাধ্য থাকবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উপাত্ত সরবরাহের নির্দেশ দিলে সেটিও দিতে হবে। সরকার যেসব উপাত্তকে ‘শ্রেণিকৃত’ উপাত্ত হিসেবে ঘোষণা করে, সেগুলো বাংলাদেশে মজুত করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে খসড়ায়।