ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ঋণ জালিয়াতি : মামলার আসামি ফারমার্স ব্যাংকের সেই চিশতিসহ ৬

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৩ অগাস্ট, ২০২৩ ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ২১৪ বার


ঋণ জালিয়াতি : মামলার আসামি ফারমার্স ব্যাংকের সেই চিশতিসহ ৬

ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলায় ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক সহিদুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। 

রোববার (১৩ আগস্ট) দুদকের জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

মামলার আসামিরা হলেন- মেসার্স নাসিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী গোলাম মোস্তফা, দি ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার অপারেশন ইরফানুল হক, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ব্যাংকের স্পন্সর শেয়ার হোল্ডার, সাবেক উদ্যোক্তা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদের সাবেক নির্বাহী/অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, ব্যাংকের স্পন্সর শেয়ার হোল্ডার রাশেদুল হক চিশতী ও মেসার্স বিলিভ ওয়ান অ্যাসোসিয়েটস সার্ভে অ্যান্ড পরিদর্শন কোং এর স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা আর্থিক সুবিধালাভের জন্য অনিয়মের মাধ্যমে মেসার্স নাসিম এন্টারপ্রাইজকে ঋণ পাইয়ে দেন। অনিয়মের মধ্যে রয়েছে ঋণের আবেদন যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করা, সামান্য মর্টগেজকে অতিরিক্ত পরিমাণে মূল্যায়ন দেখানো, ঋণ গ্রহীতার আর্থিক সক্ষমতা যাচাই না করা, গ্রাহকের ব্যবসার কার্যক্রম যথাযথভাবে তদারকি না করা, গৃহীত ঋণ ব্যবসায়ী কাজে ব্যবহার করা হয়েছে কি-না তা মনিটরিং না করা ইত্যাদি। 

ব্যাংকের আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে সম্পৃক্ত অপরাধের মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত থেকে মেসার্স নাসিম এন্টারপ্রাইজ এর বরাবরে ০.৯৫ কোটি (যা ২০২২ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত সুদসহ ১ কোটি ৯৭ কোটি টাকা) ঋণ প্রদান করে। যা আদায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে এবং ওই অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে অন্য খাতে বিনিয়োগ বা ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহক ফান্ড-ডাইভারশন করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করেছেন।

এজহারে আরও বলা হয়, মেসার্স নাসিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী গোলাম মোস্তফা ২০১৬ সালে ১০ নভেম্বর ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ১ কোটি টাকার সিসি হাইপো ঋণের জন্য শাখা ব্যবস্থাপক, দি ফারমার্স ব্যাংক লি. (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড), মিরপুর শাখায় আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শাখার সাবেক ম্যানেজার অপারেশন ইরফানুল হক ঋণের শর্ত ভঙ্গ করে ব্যাংকে চলমান বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণপরিস্থিতি অবনতিতে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও রিডাম্পশন দলিল ও বন্ধকি দলিলের নকল উত্তোলন না করে গ্রাহকের ঋণ প্রস্তাব গ্রহণ করে ঋণের বিপরীতে সহায়ক জামানতের সঠিকতা যাচাই, সার্ভেয়ার কর্তৃক মূল্যমান নির্ধারণ, মর্টগেজ সম্পাদন ইত্যাদি বিষয় আমলে নিয়ে গ্রাহকের সিআইবি স্ট্যাটাস এবং গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান দায়-দেনা সহকারে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করে ঋণ প্রস্তাব প্রধান কার্যালয় বরাবরে প্রেরণ করেন। মিরপুর শাখার পাঠানো ঋণ প্রস্তাব দি ফারমার্স ব্যাংক লি. এর প্রধান কার্যালয়ে এক্সিকিউটিভ সভায় গ্রাহকের বরাবরে শর্তসাপেক্ষে ১ কোটি টাকার একটি সিসি (হাইপো) ঋণ ১ বছর মেয়াদে মঞ্জুর করে। ওই মঞ্জুরিপত্র শাখা কর্তৃক প্রাপ্ত হওয়ার পর শাখা ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল গ্রাহকের ঋণ সীমা ৯৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করে মঞ্জুরিপত্র প্রদান করে। 

অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, এই ঋণ দেওয়া হয় ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল। কিন্তু গ্রাহক ওই ঋণ পরিশোধ না করার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত  সুদসহ ১.৯৭ কোটি টাকা হয়। যা মন্দ ঋণ হিসাবে শ্রেণিকৃত। অনুসন্ধানকালে দেখা যায় যে, গ্রাহক ঋণের সমুদয় টাকা এক মাসের মধ্যে নগদে উত্তোলন করেন।

যার মধ্যে ১৫ লাখ টাকা আসামি মাহাবুবুল হক চিশতীর ছেলে ও আরেক আসামি মো. রাশেদুল হক চিশতীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। গ্রাহকের অনুকূলে ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণের ব্যবস্থা করে মঞ্জুরিকৃত ঋণ হিসাবের উত্তোলিত অর্থ হতে আসামি চিশতী কমিশন বাবদ অর্থ উৎকোচ হিসেবে গ্রহণ করেছেন বলে জানা যায়।

এজহারে বলা হয়, আসামি গোলাম মোস্তফা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে আর্থিক সুবিধালাভের জন্য প্রতারণা, দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণের জন্য আবেদন এবং আবেদনের সঙ্গে নামমাত্র মূল্যের মর্টগেজ দাখিল করেন। ওই ঋণের আবেদন অনুমোদন করিয়ে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করেছেন। 

অন্যদিকে আসামি হাবিবুর রহমান ফারমার্স ব্যাংক লি. এর এনলিস্টেট সার্ভে প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োজিত থেকে অসৎ উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহীতার মর্টগেজ হিসেবে ব্যবহৃত সম্পত্তি যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করে মনগড়া ও ভিত্তিহীনভাবে ওই সম্পত্তির মূল্যায়ন করেন।

আর আসামি ইরফানুল হক ঋণ গ্রহীতার আবেদন যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করে সামান্য মর্টগেজ কে বেশি পরিমাণে মূল্যায়ন দেখিয়ে গ্রাহকের ব্যবসার কার্যক্রম যথাযথভাবে তদারকি না করে, গৃহীত ঋণ ব্যবসায়ী কাজে ব্যবহার করা হয়েছে কি-না তা মনিটরিং না করে ঋণ আবেদন অনুমোদন করান। 

এছাড়া আসামি স্বপন কুমার রায় ঋণ গ্রহীতার আবেদন যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে, সামান্য মর্টগেজ কে বেশি পরিমাণে মূল্যায়ন দেখিয়ে, ঋণ অনুমোদন করিয়ে নেন।

এর আগে গত বছর ফারমার্স ব্যাংকের ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১ জনের নামে মামলা করে দুদক। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মাহবুবুল হক চিশতীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কয়েক ডজন মামলা করেছে দুদক।


   আরও সংবাদ