ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

উচ্চ আদালতে তাকিয়ে বিচারপ্রত্যাশীরা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২১ অগাস্ট, ২০২৩ ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৬৮ বার


উচ্চ আদালতে তাকিয়ে বিচারপ্রত্যাশীরা

হাইকোর্টে বিচার চলছে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার। গত বছর ডিসেম্বরে নারকীয় ওই সন্ত্রাসী হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি চলছে। বর্তমানে চলছে মামলাটির পেপারবুক উপস্থাপন। গত বছর ২৯ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানির জন্য এ বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন।

 

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, মামলার পেপারবুক পড়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। সিনিয়র বিচারপতি অসুস্থ থাকায় আপাতত বেঞ্চ বসছে না। তিনি সুস্থ হলেই আবার বেঞ্চ বসবে। তারপর আমরা শুনানি শেষ করব। শুনানি শুরু হলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তিতর্ক তুলে ধরবেন। পরে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব। শুনানি শেষ করতে আরও ১০ থেকে ১২ কার্যদিবস লাগবে।

 

 

আদালতের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে, বিচারিক আদালতের রায় যেন বহাল থাকে। বিচারক যুক্তি তুলে ধরে, আইনকে বিশ্লেষণ করে সুন্দর রায় দিয়েছেন। তারেক রহমানসহ সব আসামির রায় বহাল রাখতে আমরা আর্জি জানাব। আশা করছি, অক্টোবর মাসের মধ্যে এ মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষ হয়ে রায়ের জন্য প্রস্তুত হবে।

 

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির বলেছেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের পেপারবুক পড়া এখনো শেষ হয়নি। পেপারবুক পড়া শেষ হলে আমরা আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করব। আদালতের কাছে আমাদের দুটি প্রার্থনা আছে। প্রথমটি হলো, এই মামলায় ভিকটিম পক্ষ এবং আসামিপক্ষ কেউই বিচার পায়নি তদন্তের দুর্বলতার কারণে। দ্বিতীয়টি হলো, মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে যে সাজা দেওয়া হয়েছে, ভারতীয় উপমহাদেশে এর কোনো নজির নেই। এ কারণে মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে প্রদত্ত সাজা আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। এই যুক্তি উপস্থাপন করে আমরা আসামিদের খালাস চাইব।

 

 

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, দিনটি ছিল শনিবার। সেদিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আয়োজন করা হয় সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। হাজার হাজার মানুষের সমাগম ছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের চতুর্দিকে। সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী একটি মিছিল হওয়ার কথা। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জে চেপে বিকেল ৫টার একটু আগে সমাবেশ স্থলে পৌঁছান শেখ হাসিনা। সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তৃতার পর তিনি বক্তব্য দিতে শুরু করেন।

 

 

ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে শেখ হাসিনার বক্তৃতা শেষ করার মুহূর্তেই শুরু হয় ভয়াবহ নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক যুদ্ধে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড। প্রাণবন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশ স্থল।

 

 

এ ঘটনায় করা মামলায় পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল হয়। একটি হত্যা এবং অন্যটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে। বিচার শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন দুই শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ১৪ জন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) সদস্য। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং অন্য ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

 

 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ জন: রায়ে ১৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (সম্প্রতি মারা গেছেন), হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।

 

 

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ১৯ জন: রায়ে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। তারা হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও আরিফুল ইসলাম আরিফ, জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুর রউফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মুরসালিন, মুত্তাকিন, জাহাঙ্গীর বদর, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, আবু বকর সিদ্দিক ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. ইকবাল, রাতুল আহমেদ, মাওলানা লিটন, মো. খলিল ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল।

 

 

বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত দণ্ডিত ১১ জন হলেন মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমীন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিউক, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, জোট সরকার আমলের তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও সাবেক পুলিশ সুপার রুহুল আমীন।

 

 

রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরই মধ্যে কারাগারে থাকা দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দুই মামলায় জেল আপিল করেছেন। পাশাপাশি নিয়মিত আপিলও করেছেন দণ্ডিতরা।


   আরও সংবাদ