ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১০:৩১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৩৮ বার
মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক যাওয়ার গতি দিন দিন বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের আগস্ট মাসে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক গিয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়াতে।
এরপরের অবস্থানেই রয়েছে সৌদি আরব। বর্তমানে সৌদি আরবে শ্রমিকদের ভিসা, আকামা জটিলতাসহ কর্মক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা থাকার কারণে এই দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন বিদেশগামীরা। তাদের বেশির ভাগই এখন মালয়েশিয়ামুখী হচ্ছেন। যদিও মালয়েশিয়ায় ঢাকা থেকে কর্মী প্রেরণে রয়েছে নানা জটিলতা।
এ দিকে বিদেশগামী শ্রমিকদের বহির্গমন ছাড়পত্রসহ অন্যান্য কাজ করতে গিয়ে পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও তাদের মনোনীত প্রতিনিধিদের। স্মার্ট কার্ড নিতে ঘুষ আদায়সহ নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম জেঁকে বসে। বিশেষ করে বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে গিয়ে তাদের আরো বেশি ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিএমইটির বহির্গমন শাখাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ দুষ্ট চক্র। তারা কর্মকর্তা কর্মচারীদের ম্যানেজ করে কৌশলে নানাভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বৈধভাবে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে ৮ লাখ ৮২ হাজার ১০১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক গিয়েছে আগস্ট মাসে। এই মাসে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৫ জন শ্রমিক পাঠিয়ে শ্রমবাজারের পরিসংখ্যানে রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এই পরিমাণ শ্রমিক সাম্প্রতিক কয়েক বছরে যেতে পারেনি বলে অভিবাসন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্তরা বলছেন। চলতি বছরের জুলাই মাসে গিয়েছিল এক লাখ ২৫ হাজার ৮৫০ জন, যা আগস্ট মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজারে।
জনশক্তি ব্যুরোর দেশওয়ারি শ্রমিক যাওয়ার পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট মাসে সৌদি আরবে ৪০ হাজার ৬১৯ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৪ হাজার ৬৫১, কুয়েতে ৫ হাজার ২৭৪, ওমানে ১০ হাজার ৫৫০ জন, কাতারে ৭ হাজার ৭৪৮ জন, বাহরাইনে ১ জন, লেবাননে ১৭৭ জন, মালয়েশিয়াতে ৪৬ হাজার ১০৫ জন এবং অন্যান্য দেশে ৩ হাজার ২০৮ জন যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরে ৪ হাজার ৭৩২ জন রয়েছে।
গতকাল রোববার জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান এশিয়া কন্টিনেন্টোল গ্রুপ বিডির কর্ণধার লোকমান শাহের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইদানীং বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বেশি সংখ্যক শ্রমিক যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকুক। এটা আমরাও চাই। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের আগস্ট মাসে বিদেশে রেকর্ড পরিমাণ শ্রমিক গেছে বলে জানান তিনি। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৫০ হাজারের মতো কর্মী গেছে বলে জানি। বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর প্রতিষ্ঠান রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও তাদের প্রতিনিধিরা প্রায় বিএমইটির বিভিন্ন শাখায় গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অনেকের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শুধু তা-ই নয়, ঘুষ ছাড়া এই দফতরে নাকি কোনো কাজ হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, আমি মনে করি, একটি প্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠাবান অফিসার থাকলে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মকাণ্ডে অবশ্যই গতি আসবে। এরপরও কোনো অনিয়ম হলে সেটা দেখার জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আছে। এটা তারা দেখবেন।
এর আগে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সাথে বিএমইটির অনিয়ম নিয়ে জানতে চাইলে তারা নয়া দিগন্তের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কত কষ্ট করে বিদেশ থেকে শ্রমিকদের জন্য চাহিদাপত্র নিয়ে আসি। এরপর যাবতীয় প্রসেসিং করি। আর বিএমইটিতে ফাইল জমা দিতে গেলেই আমাদের পদে পদে হয়রানি করা হয়। তাদের দাবি, জনশক্তি ব্যুরোতে যতজন মহাপরিচালক দায়িত্ব পালন করে গেছেন তার মধ্যে বর্তমান মহাপরিচালক মো: শহীদুল আলমের সময়ে বিএমইটিতে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। বলা হচ্ছে, যা ইচ্ছা তা হয়েছে। ছিল না কোনো জবাবদিহিতা! তারা বলছেন, এই সময়ে সার্টিফিকেট ছাড়া বহির্গমন দেয়াসহ যত অনিয়ম হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। তবে এই সময়ে কিছু কিছু ভালো কাজও বিএমইটিতে হয়েছে বলে বিএমইটিতে আসা রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও প্রতিনিধিরা দাবি করেন। এর মধ্যে নিয়মের মধ্যে আনতে এজেন্সির জমা দেয়া ফাইলের সিরিয়াল চালু করা। তবে কিছু দিন আগে দুবাইয়ের অতিরিক্ত কর্মীর নামে বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার ঘটনা নিয়ে যে ভয়াবহ অনিয়ম জাল জালিয়াতি হয়েছিল সেই ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ার কারণে এখনো অনেকেই দিব্যি অনিয়ম-দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ অনেকের।
শ্রমিক প্রেরণে রেকর্ড ও অনিয়মের বিষয়ে জানতে গতকাল রোববার জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: শহীদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টার পরও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
গত ৫ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ শাখার উপসচিব আব্দুল্লাহ আরিফ মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো: শহীদুল আলম এনডিসিকে বদলি করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে পদায়ন করা হয়। জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।