ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১০:৫০ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬১ বার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ব্যক্তির নাম তোফাজ্জল। তার বাড়ি বরিশালের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠাল তলি ইউনিয়নে। তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই।
রাত আড়াইটায় তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাত ৯টার দিকে ফজলুল হক হলে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে আটক করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে চোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাকে জেরা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি কয়েকটি নম্বর মুখস্ত বলেন, যেগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়। এতে তাকে চোর হিসেবে 'শনাক্ত' করে গণপিটুনি দেয় শিক্ষার্থীরা।
গণপিটুনির পর ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ানো হয় তোফাজ্জলকে। এরপর চলে দীর্ঘ জেরা। পরে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরে জানা যায়, তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন। ক্যাম্পাসে চলাফেরা থাকায় হলে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি।
এ দিকে মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। ভোর সাড়ে চারটার দিকে ফজলুল হক হল থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশও করেছেন তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মারধরের ফলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে মারধরের ফলে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সব ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মানবাধিকারের মৌলিক নীতিগুলোর প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা প্রদর্শন করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। আমরা অনতিবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ১৫ বছর ধরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের যে নজির দেখা গেছে, তা আমাদের সমাজের বিচার ব্যবস্থা ও আইনের শাসনের গুরুতর অভাবকে প্রতিফলিত করে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান জরুরি ছিল এবং নতুন বাংলাদেশে আইন ও মানবাধিকারের শাসন প্রতিষ্ঠা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।