ঢাকা, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের বদলি বৈষম্য, বাণিজ্য ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক


প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৬:২০ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৬৮ বার


বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের বদলি বৈষম্য, বাণিজ্য ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত

৫ই অগাস্ট দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন দপ্তরে-অধিদপ্তরে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। স্বৈরাচারের দোসর পৃষ্ঠপোষক সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তারদের শাস্তিমূলক বদলি করা হচ্ছে। শিক্ষা ক্যাডারে এই পরিবর্তন খুব ধীরগতির। ৫ তারিখের একদিন আগেই অর্থাৎ ৪ঠা অগাস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একশ্রেণির কর্মচারী ও কর্মকর্তা স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পক্ষে স্লোগান দিয়ে রাজপথে মিছিল করেছে। তাদের স্লেøাগানের একটি অংশ ছিলো এরকম,“... খুনি খালেদা জবাব দে’। যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এসব কর্মকর্তার অনেকেই ৫ তারিখের পর অফিসে আর আসেনি। কেউ কেউ ঘাপটি মেরে ছিলো, এখন রূপ বদলে বসেছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে  কয়েকটি বদলি আদেশ হয়েছে। তাতে দেখা গেছে বিতর্কিত কর্মকর্তারাই ঘুরেফিরে ঢাকায় লাভবান পদে বদলি হয়েছে।
 গত ১৫/০৯/২০২৪ তারিখে কয়েকটি বদলি আদেশ হয়। সেখানে ঢাকার বাইরের কয়েকেজন কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে পদায়ন করা হলেও কয়েকজন কর্মকর্তাকে ঢাকার ভিতরেই আরো লোভনীয় পদে পদায়ন করা হয়। 
এখানে উল্লেখ্য, শিক্ষা ক্যাডারে ঢাকায় তাদেরই পদায়ন করা হয় যারা সরকার ঘনিষ্ঠ বা সরকারদলীয় ক্যাডার। এছাড়া রয়েছে বদলি বাণিজ্য সিন্ডিকেট।
যেমন ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর’ (মাউশি)-এর বিতর্কিত সহকারী পরিচালক (কলেজ-৪) মীর রাহাত মাসুমকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ঢাকায় প্রেষণে বদলি করা হয়। 
‘সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ’ ঢাকায় সংযুক্ত ওএসডি কর্মকর্তা বাংলার সহযোগী অধ্যাপক মো. আবুয়াল কায়সারকে ‘পরিদর্শন নিরীক্ষা অধিদপ্তর’, ঢাকার যুগ্ম-পরিচালক করা হয়েছে।
‘সরকারি বিজ্ঞান কলেজ’ ঢাকার সংযুক্ত ওএসডি কর্মকর্তা পদার্থবিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহজাহানকে ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর’-এর উপ-পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) পদে বদলি করা হয়। 
ঢাকার বাইরে থেকে বিতর্কিত কর্মকর্তাও ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর’ মাউশিতে বদলি হয়ে এসেছেন। বিসিএস জেনারেল এডুকেশন এসোসিয়েশন ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় শাহেদ-তানভীর-লিখন প্যানেল থেকে নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের পদার্থবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ আলম ‘মাউশি’র সহকারী পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি তাদের আওয়ামী লীগ দলীয় প্যানেলের বিসিএস জেনারেল এডুকেশন এসোসিয়েশনের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. তানভীর হাসানের উত্তরসূরি হয়েছেন। এর আগে তানভীর হাসানও সহকারী পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) ছিলেন। 
তারা প্রত্যেকেই ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। ৫ই অগাস্টের পর গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। এখন ধীরে ধীরে পাখা মেলে উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। 
একই আদেশে ফেনীর সোনাগাজী সরকারি কলেজের পদার্থবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ সফিউল বশর ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর’ (মাউশি)র সহকারী পরিচালক (সরকারি কলেজ-১) হিসেবে বদলি হয়েছেন।
কথা প্রসঙ্গে জানা যায়, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে কোনো বদলি নীতিমালা নেই। কোন কোন কর্মকর্তা আজীবন ঢাকা শহরে থেকে যায়। তাদের চাকরির শুরু ঢাকায় শেষ ঢাকায়। তাদের খুঁটির জোর এতো বেশি ঢাকার বাইরে তাদের কেউ পাঠাতে পারে না। ঢাকার বাইরে গেলেও কয়েকদিন পর ঢাকায় বদলি হয়ে চলে  আসে। অপরদিকে কোন কোন কর্মকর্তা আজীবন থানা-উপজেলা পর্যায়ের কলেজে থেকে যায়। তাদের নীতি-নৈতিকতার কারণেই তারা তোষামোদি করতে পারে না। নীতি বিসর্জন দিতে পারে না বলে দপ্তরে-অধিদপ্তরে পদায়ন পায় না। 
উদাহরণ হিসেবে চলে আসে, ফেনী জেলার সোনাগাজী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার জাহিদুল হক-এর নাম। তিনি উপজেলার কলেজে আছেন ২০০৩ সাল থেকে। প্রভাষক থেকে সহযোগী অধ্যাপক হয়েছেন। এখন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির অপেক্ষায়। একই কলেজে ১৯ বছর! 
এরকম উপজেলাগুলোতে অসংখ্য কর্মকর্তা রয়েছেন। সে-রকমই ঢাকা শহরের কলেজ ও দপ্তরে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে বসে আছেন অনেক কর্মকর্তা। 
যেমন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন ঢাকা কলেজেরই ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস।
শিক্ষাক্যাডারে সব সময় বদলি বাণিজ্য নিয়ে বিতর্ক ছিল। দেখা গেছে, এবার ৫ই অগাস্ট-এর পরবর্তী সময়ে রদবদলের সুযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কেন্দ্র করে একটি বদলিবাণিজ্য সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের এপিএস মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈ সিন্ডিকেট, ডা. দীপু মনির রতন মজুমদার সিন্ডিকেট  প্রভৃতি বদলিবাণিজ্যে একচাটিয়া আধিপত্য করেছে। 
শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে পদায়নগুলো এই সিন্ডিকেট কুক্ষিগত করে লেনদেনের বিনিময়ে নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সৎ, যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে পারছেন না। যা সরকারকে তার নীতি-আদর্শ থেকে পদে পদে বিব্রত করছে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক এই বদলিবাণিজ্য সিন্ডিকেটের প্রধান হোতা হিসেবে পত্রিকায় নাম এসেছে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সৈয়দ মামুনুল আলম-এর। যার ডাকনাম নিউ। এই কর্মকর্তা বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট। সে সময় আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে তিনি ঢাকার দপ্তর-অধিপ্তরের লোভনীয় পদগুলোতে পদায়ন করতেন। এই কর্মকর্তা যেমন বিগত সরকারের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বর্তমানে তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একান্ত বিশ্বস্ত হিসেবে নিজেকে জাহির করছেন। তার নেতৃত্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সাবেক ছাত্রলীগের এই সিন্ডিকেট সম্পর্কে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন এসেছে।


   আরও সংবাদ