ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১০:২৮ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৭ বার
ঢাকা: শাক-সবজি ও ফলে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি জানতে পৃথক দুটি গবেষণা পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এসব গবেষণায় সবজিতে ভারী ধাতু ও ফলে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ খুঁজে পাওয়া গেছে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রশিক্ষণ কক্ষে অনুষ্ঠিত গবেষণার ফলাফল অবহিতকরণ সেমিনারে উক্ত গবেষণাসমূহের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
উপস্থাপিত দুটি গবেষণায়, ফল সম্পর্কিত গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন প্রধান। তার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল- ফলে কী ধরনের কীটনাশকের উপস্থিত এবং তা পর্যবেক্ষণ করা। তিনি ও তার গবেষক দল আম, লিচু, বরই ও পেয়ারার প্রতিটির ৮০টি করে মোট ৩২০টি নমুনা পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা শেষে তারা ৩৯টি নমুনায় কীটনাশকের অবশিষ্টাংশের উপস্থিতি খুঁজে পান, যা মোট নমুনার ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে লিচুতে (১৮ দশমিক ৮ শতাংশ), যা খুব উদ্বেগজনক। সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে আমে (৮ দশমিক ৮ শতাংশ)। ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া থেকে তিনি এসব নমুনা সংগ্রহ করেন। কীটনাশকযুক্ত নমুনাসমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা (এমআরএল) এর চেয়ে অতিরিক্ত পাওয়া যায় ৩০টি নমুনায়।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য গবেষক দল কৃষকদের নিয়মিত মনিটরিং, উত্তম কৃষি চর্চার ওপর জোর দেওয়া, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর আরোপ করার পরামর্শ দেন।
অপরদিকে সবজিতে রাসায়নিক ভারী ধাতুর উপস্থিতি এবং এর মাত্রা নিয়ে গবেষণা করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ও ড. মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। তাদের গবেষণার বিষয় ছিল- শাক-সবজিতে ভারী ধাতুর উপস্থিত এবং মানবদেহে তার ঝুঁকি নিরূপণ। গবেষক দল ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ছয়টি জেলা থেকে মোট নয় ধরনের সবজি সংগ্রহ করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল আলু, বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো, লালশাক, পটল, বাঁধাকপি, শসা ও মটরশুঁটি।
গবেষণায় দেখা গেছে, এসব সবজিতে লেড, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়ামসহ বেশ কয়েকটি ভারী ধাতুর উচ্চমাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে এসব তালিকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর মাত্রায় হেভি মেটাল বা ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে লালশাকে।
গবেষকরা জানান, যেসব সবজিতে হেভি মেটাল বা ভারী ধাতু রয়েছে, সেগুলো দীর্ঘদিন খেলে ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, লালশাকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। যেখানে ক্যাডমিয়ামের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা প্রতি কেজিতে ১৯০ মাইক্রোগ্রাম, সেখানে লালশাকে পাওয়া গেছে প্রতি কেজিতে ৭০৪ দশমিক ৩২ মাইক্রোগ্রাম। বেগুনে পাওয়া গেছে প্রতি কেজিতে ২৭৫ দশমিক ৬৬ মাইক্রোগ্রাম, ঢেঁড়সে ৩৪৯ মাইক্রোগ্রাম ও টমেটোতে প্রতি কেজিতে ১৯৫ মাইক্রোগ্রাম।
গবেষণায় জানা যায়, ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে শিম, শসা, ঢেঁড়স, পটল ও লালশাকে। লেডের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে বেগুন, বাঁধাকপি, শিম, শসা, ঢেঁড়স, পটল, টমেটো ও লালশাকসহ ৯টি সবজিতেই। অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো ও লালশাকে।
সবজিতে ভারী ধাতু বেশি নারায়ণগঞ্জে, আর্সেনিক বেশি শেরপুরে
গবেষণা বলছে, ভারী ধাতু দ্বারা দূষিত সবজি সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করা হয় নারায়ণগঞ্জে। তন্মধ্যে আর্সেনিক দ্বারা দূষিত সবজি সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করা হয় শেরপুরে। ক্যাডমিয়ামের মাত্রার ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি ক্যানসারের ঝুঁকিতে আছে নারীরা।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. মোহাম্মদ সোয়েব।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের পরিচালক ড. শামশাদ বেগম কোরাইসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইকবাল রউফ মামুন। সভাপতিত্ব করেন বিএফএসএ সদস্য ড. মোহাম্মদ মোস্তফা।
এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।