ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

‘ফিসফিসানি’তে অভ্যুত্থানের অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ না করার আহ্বান ভূমি উপদেষ্টার

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১৯:০৭ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৯ বার


‘ফিসফিসানি’তে অভ্যুত্থানের অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ না করার আহ্বান ভূমি উপদেষ্টার

ঢাকা: আনাচে-কানাচে ফিসফিসানির দ্বারা গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ না করার আহ্বান জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।

তিনি বলেছেন, এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে অর্জন হয়েছে, সেই অর্জনকে আমরা যেন আনাচে-কানাচে ফিসফিসানির দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ না করি।

রুখে দাঁড়ানোর যে আহ্বান বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন পোস্টারে, দেয়ালে, বিভিন্ন লেখায় আমরা দেখেছি, সেই রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। এখনো আছে, আগামীতেও থাকবে।

 

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে আয়োজিত ‘আত্মত্যাগের চেতনায় আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসান আরিফ এসব কথা বলেন। সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির মাল্টিপারপাস হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যেকোনো পতনের পর তারা (পতিতরা) সক্রিয় থাকে আবার ফিরে আসার জন্য। গণঅভ্যুত্থানে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন সবাইকে আবার সজাগ থাকতে হবে। আমরা গত ১০ নভেম্বর সেই সজাগ থাকার চিত্র দেখেছি। সেদিন কেউ ঘুমিয়ে ছিল না।

ছাত্র-জনতা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকাকে সাময়িকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অগোচরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য আগে থেকেই বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যসত্ত্বভোগীদের প্রশ্রয়ের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৬ বছর যাদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, তাদের প্ররোচণায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং অধিক মুনাফা অর্জনের শেকড় গেড়েছিল। এক ঘণ্টায়, এক দিনে, এক সপ্তাহে সেটা দূর করা সম্ভব নয়। ক্রমান্বয়ে একটি চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার প্রচষ্টো করছে। এখানে আরও প্রচেষ্টা দরকার, জনগণের সম্পৃক্ততা, সচেতনতা ও সজাগ দৃষ্টি দরকার। সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে যদি আমরা চেষ্টা করি, তাহলে বাংলাদেশ তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।

উপদেষ্টা হাসান আরিফ আরও বলেন, যখন আন্দোলন তুঙ্গে এবং একদিকে স্তিমিত হয়ে যাওয়ার একটি ভীতি-আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষ করে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের রাজপথে পদচারণা এই আন্দোলনকে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করে। তাদের রাজপথে নামা কোটার জন্য নয়, চাকরির জন্য নয়, বাংলাদেশের বুকে যে ফ্যাসিস্টরা চেপে বসেছিল সেই পাথর সরানোর জন্য তারা অংশগ্রহণ করেছে। এমন অভ্যুত্থান একাত্তরের পরে আর হয়নি। একাত্তরে সারা দেশ, সারা জাতি অংশগ্রহণ করে সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে। এবারও প্রতিটি গ্রামের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার শাইখ মাহদী বলেন, আপনাদের কাছে প্রশ্ন, জুলাই কি শেষ? বিপ্লব কি শেষ? না শেষ হয়নি। আমাদের কাজ এখনো চলমান। আমাদের কাজ তখন শেষ হবে যখন দেশের প্রতিটি মানুষ স্বৈরাচারী আচরণ থেকে বের হবে। জুলাইয়ের স্পিরিট আমাদের ধারণ করতে হবে। এটা যেনো দিবস সর্বস্ব না হয়ে যায়। আমরা আর কোনোদিন কোনো স্বৈরাচারকে দেখতে চাই না।

সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলনকে চাঙ্গা করেছিল। যার অন্যতম সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। এই আন্দোলন যেনো আর পুনরাবৃত্তি করতে না হয়। এমন হত্যাযজ্ঞ আগে কখনো হয়নি। ভবিষ্যতে যেনো আর এমন হত্যাযজ্ঞ না হয়, সেটার ভিত্তি এখনই তৈরি করতে হবে। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

সভাপতির বক্তব্যে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম বলেন, আমরা আর স্বৈরাচারের পুনরাবৃত্তি চাই না। আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে এই ধরনের স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যাতে আবার না আসে। এটা আমাদের সবার দেশ। আমাদের সবাই মিলে এটা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাহায্য করা উচিত।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশিদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ও লেখক তুহিন খান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম মোফাজ্জল হোসেন, স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড স্যোশাল সায়েন্সের ডিন ও অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মেজর জেনারেল কাজী ফকরুদ্দিন আহমেদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

আলোচনা সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির চার শিক্ষার্থীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন সহপাঠী, শিক্ষক ও স্বজনরা। অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারগুলোকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত শিক্ষার্থীরা হলেন, বিবিএ বিভাগের ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির, ইইই বিভাগের মো. রাব্বি মিয়া, টেক্সটাইল বিভাগের মো. রবিউল ইসলাম ও রাকিব হোসাইন। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে নিহত হন। এ ছাড়া গুরুতর আহত হন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ জন শিক্ষার্থী।


   আরও সংবাদ