ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৮:০১ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৭ বার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুনের ঘটনায় ওই বাসার গৃহকর্মী আয়েশাকে ঝালকাঠির নলসিটি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেখানে তিনি স্বামীর বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।
তাকে নিয়ে ঝালকাঠির বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। ঢাকায় পৌঁছতে রাত হতে পারে বলে জানিয়েছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন জানান, বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ঝালকাঠির নলসিটিতে স্বামীর বাড়ি থেকে ওই গৃহকর্মীকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে। ওই বাসা থেকে তার নিয়ে যাওয়া টাকা-পয়সার পাশাপাশি মূল্যবান জিনিসপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ কারণে তাকে ঢাকায় আনতে রাত হয়ে যেতে পারে।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান বলেন, মা ও মেয়েকে হত্যাকাণ্ডের পরে ওই গৃহকর্মীকে শনাক্ত করার জন্য প্রাথমিকভাবে কিছুই পাওয়া যায়নি। না আছে জাতীয় পরিচয় পত্র, না আছে ফোন নম্বর। এছাড়া পাওয়া যায়নি তার ঠিকানার কোনো অস্তিত্ব। প্রথমে তদন্ত শুরু করা হয় সিসিটিভি ফুটেজ ধরে, সড়কে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে গিয়ে দেখা যায়, মেইন রাস্তায় রিকশা থেকে সে নেমে যায়। তারপরে কোথায় গেছে আর বোঝা যাচ্ছিল না। পুলিশ তবু অব্যাহত রাখে তদন্ত। এক পর্যায়ে জানা যায়, ওই গৃহকর্মী আশুলিয়া সাভার এলাকায় আছে। সেখানেই যাওয়া হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর জানা যায়, বরিশালের অমুক জায়গায় গৃহকর্মী আয়শা অবস্থান করছে। সেখানেও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়। তারপরে সর্বশেষ অভিযানে ঝালকাঠি নলছিটিতে নিজেদের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শনাক্তের কোনো ডকুমেন্ট ছাড়াই পুলিশ তাকে ফাইন্ড আউট করে ফেলে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ওই গৃহকর্মীকে নিয়ে থানা পুলিশের একটি টিম ঝালকাঠিসহ অন্যান্য জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। সাভার আশুলিয়া যেখানে ছিল সেসব জায়গাতেও অভিযান চালানো হবে।
গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের ৩২/২/এ নম্বর বাসার সপ্তমতলায় নিজ বাসায় গৃহিনী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজকে (১৫) কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় মোছা. আয়েশা নামের ওই গৃহকর্মী। বেলা পৌনে ১২টার দিকে ওই বাসা থেকে লায়লা আফরোজের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নাফিসা বিনতে আজিজের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে আসামি করে ওইদিনই ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত নাফিসার বাবা আ. জ. ম. আজিজুল ইসলাম। তিনি উত্তরার সানবিমস স্কুলের শিক্ষক।
মামলার এজাহারে আ. জ. ম. আজিজুল ইসলাম বলেন, গত ৪ দিন আগে আসামি আমার বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে। সোমবার সকাল অনুমানিক ৭টার দিকে সময় আমি কর্মস্থল উত্তরায় চলে যাই। পরে আমার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। আমি নিরুপায় হয়ে বেলা অনুমানিক ১১টার দিকে বাসায় ফেরত এসে দেখি, আমার স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা, রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে এবং আমার মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বাসার মেইন গেটে পড়ে আছে। আমার মেয়ের এই অবস্থা দেখে দ্রুত আমি তাকে উদ্ধার করে পরিছন্নতাকর্মী মো. আশিক এর মাধ্যমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই। আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এজাহারে তিনি আরো বলেন, আমি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখতে পাই, আসামি ওইদিন সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে কাজ করার জন্য বাসায় আসে এবং সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আমার মেয়ের স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ১টি মোবাইল, ১টি ল্যাপটপ, স্বর্ণালঙ্কার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যায়।