ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩২ বার


৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন জোট ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’। এই জোটের পক্ষ থেকে ৩০০ আসনেই প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যেই প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে যুক্তফ্রন্টের নেতারা জানিয়েছেন।

চলতি ধারার দুর্নীতি-লুণ্ঠনের রাজনীতির বিপরীতে শোষণমুক্ত সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ার লক্ষ্যে বামপন্থিদের নতুন জোট গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছে বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২৯ নভেম্বর বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদ আয়োজিত জাতীয় কনভেনশন থেকে এই যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। কনভেনশনে বাম-প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক দল ও সংগঠকে নতুন এই জোটে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কনভেনশনে ঘোষণাপত্র পাঠের পাশাপাশি ৭ দফা রাজনৈতিক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে, যার ভিত্তিতে আন্দোলন ও আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুরুতে এই যুক্তফ্রন্টে আটটি বামপন্থি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এই জোটে ভবিষ্যতে আরও দল ও সংগঠন যুক্ত হবে। এমন কিছু দল ও সংগঠনের সঙ্গে কথা হচ্ছে বলে জানান এই জোটের নেতারা।

গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টের নেতারা বলেন, মুক্তচিন্তার পক্ষের সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-নাগরিক দল ও সংগঠনসমূহকে নিয়ে যে কোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষে এই জোট গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ জোট গঠন করা হলেও ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও আন্দোলন সংগ্রামে এই গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

এদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোট নামে বামপন্থি দলগুলোর যে জোট রয়েছে, সেই জোটটিও কার্যকর ও সক্রিয় থাকবে। বাম জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন যে জোট গঠন করা হয়েছে সেটা নির্বাচনকে সামনে রেখে করা হলেও এটা শুধু নির্বাচনী জোট নয়। এ জোট আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামেও সক্রিয় থাকবে। এটি একটি বৃহৎ পরিসরের জোট। এই জোটে বাম-প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল ও সংগঠকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দল ও সংগঠনগুলো জোটে যুক্ত হবে। পাশাপাশি যেসব ইস্যুতে এই গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম বা তৎপরতা চালানো যাবে না, সেসব ইস্যুতে বাম গণতান্ত্রিক জোট আগের মতোই আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশিদ ফিরোজ বাংলানিউজকে বলেন, গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টের পাশাপাশি বাম গণতান্ত্রিক জোট কার্যকর থাকবে এবং রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাবে। যেকোনো জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলের যেমন নিজস্ব কর্মসূচি থাকে, বাম গণতান্ত্রিক জোটেরও এরকম নিজস্ব কর্মসূচি থাকবে।

আগামী বছর ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ আগামী ২৯ ডিসেম্বর। এই নির্বাচনে দেশের বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন জোট গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে। সে অনুযায়ী জোট ও জোটের দলগুলো প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। যুক্তফ্রন্টের নেতারা জানান, জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার টার্গেট নিয়ে তারা অগ্রসর হচ্ছেন। ইতোমধ্যেই এই জোটের অন্তর্ভুক্ত দলগুলো নিজ নিজ দলের প্রার্থী মনোনয়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর পর জোটগতভাবে দলগুলোর মধ্যে আসন ভাগাভাগি করা হবে। এই গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে চারটি। দলগুলো হলো— বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ। এ ছাড়া এই জোটে যে দলগুলো নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয় সে দলগুলো প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা জোটভুক্ত নিবন্ধিত দলের মার্কা নিয়ে নির্বাচন করবে বলে নেতারা জানান। এর পাশাপাশি এই জোট পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যেসব সংগঠন রয়েছে ওইসব সংগঠনকেও এ জোটে আনার চেষ্টা চলছে। ওই সংগঠনগুলো থেকে কেউ নির্বাচন করতে চাইলে বা প্রার্থী হলে ওইসব প্রার্থীর সঙ্গে আসন সমঝোতার মাধ্যমে তাদের সমর্থন দেওয়া হবে। ওই আসনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী না দিয়ে ওইসব সংগঠনের প্রার্থীদের আসন ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও নেতারা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট জোটগতভাবেই নির্বাচন করব এবং ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব। আমাদের জোটের দলগুলো ছাড়াও  পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সংগঠন থেকে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী থাকবে। তাদের সাথেও আমাদের সমঝোতা হবে এবং সেখানে আমরা ফ্রন্টের প্রার্থী দেব না। ওইসব সংগঠনের প্রার্থীকে আমরা সমর্থন দেব। সমঝোতা হলে তাদেরও ফ্রন্টের প্রার্থী করা হবে। তারা এ জোটের নিবন্ধিত দলের মার্কা নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে সেটাও করতে পারবে। আর জোটের যে দলগুলোর নিবন্ধন নাই, সে দলগুলোর প্রার্থীরা নিবন্ধিত দলের মার্কা নিয়ে নির্বাচন করবেন।

গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল সিপিবি ইতোমধ্যে ১১৮টি আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। আরও কয়েকটি আসনে দলটি প্রার্থী দেবে বলে জানা গেছে। এই জোটের আরেক শরিক দল বাসদ ইতোমধ্যে ১১০টি আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। আরও দুই-একটি আসনে তাদের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে দলটির নেতারা জানান।

বাসদ (মার্কসবাদী) ৩৭টি আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ জাসদের নেতারা জানান, জাসদ ইতোমধ্যে ৫৭টি আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। আরও দুই-একটি আসনে তারা প্রার্থী দিতে পারে।

এই জোটের শরিক দল কমিউনিস্ট লীগেরও প্রার্থী রয়েছে। দলটি ১৫টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। যদিও কমিউনিস্ট লীগ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল নয়। দলটির প্রার্থীরা জোটের নিবন্ধিত দলের মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশিদ ফিরোজ বাংলানিউজকে বলেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জোটের দলগুলো তাদের দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করে ফেলবে। এরপর জোটগতভাবে আমরা বসে আসন ভাগাভাগি বা সমঝোতার কাজ চূড়ান্ত করব। আগামী ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। আমরা তার আগেই ২৪, ২৫ তারিখের মধ্যে আমাদের জোটের মনোনয়ন চূড়ান্ত করব। জোটের অনিবন্ধিত দলগুলোর প্রার্থীরা নিবন্ধিত দলের মার্কা নিতে পারবেন। তারা জোটের যে দলের মার্কা নিতে চান নেবেন, সেটা আমরা আলোচনা করে ঠিক করব। সব মিলিয়ে গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট থেকে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট জোটগতভাবে নির্বাচন করব— এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। প্রত্যেক দল নিজেদের প্রার্থী মনোনয়নের কাজ করছে। দ্রুতই জোটগতভাবে বসে জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। জোটগতভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।


   আরও সংবাদ