ঢাকা, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

বেগম জিয়ার প্রহর কাটছে সাংবাদিকদের

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০:২৪ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৪ বার


বেগম জিয়ার প্রহর কাটছে সাংবাদিকদের

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনের সড়কটি সাধারণত নিরিবিলি থাকে। কিন্তু বিগত কয়েক দিনে এখানে বাড়তি চাপ সামাল দিতে বসানো হয়েছে ব্যারিকেড। প্রতিদিনই এখন এই সড়কে জনসমাগমের মূল কারণ— বেগম খালেদা জিয়ার পরবর্তী স্বাস্থ্য আপডেট। আর এই ভিড়ের মাঝেই সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত গণমাধ্যমকর্মীরা।

প্রতিটি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা বেগম জিয়ার চিকিৎসা–সংক্রান্ত তথ্য জানতে টানা ডিউটি করছেন এই এলাকায়। দিন–রাত পালাবদল হচ্ছে, কিন্তু অপেক্ষা থেমে নেই। দেশের মানুষের কাছে এখন একটাই গুরুত্বপূর্ণ খবর—কবে সুস্থ হয়ে ফিরবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া? আপডেট যেকোনো সময় আসতে পারে, এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই সাংবাদিকদের রাত–ভোর অপেক্ষা এখন যেন রুটিন হয়ে গেছে।

মধ্যরাতে হাসপাতালের সামনে নীরব অপেক্ষা
রাত ১২টার পর হাসপাতালের সামনে অন্যরকম নীরবতা নামে। রাস্তায় শব্দ নেই, আশপাশে মানুষের চলাচল কমে আসে, কিন্তু সাংবাদিকরা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেন। কেউ গেটের পাশে মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন, কেউ ফুটপাতে বসে আছেন।

ডিউটি চিকিৎসকের ব্রিফিং যে কোনো মুহূর্তে হতে পারে—এই ভাবনায় কেউই স্থান ছাড়তে চান না।

বাংলানিউজের চিফ মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার মিনহাজ চৌধুরী টানা এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা–সংক্রান্ত আপডেট অনুসরণ করছেন। তিনি বলেন, “এখনো অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি। আমরা অপেক্ষায় আছি। দরজাটা খুললেই আপডেট পাব।”

বাংলানিউজের নিউজ কোঅর্ডিনেটর শারমীনা ইসলাম বলেন, “আমাদের অন্তত ৩–৪ জন রিপোর্টার নিয়মিত ডিউটিতে থাকছে। বেগম জিয়ার বিষয়টি এখন খুবই সংবেদনশীল। একজন সাংবাদিক, নারী ও মানুষ হিসেবে আমি বলব, তিনি সবসময়ই সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিলেন। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও তার ধৈর্য রাজনীতিতে উদাহরণ।”

ভোরে কুয়াশা জমলেও থামে না লাইভ
রাত থেকে ভোরে যখন কুয়াশা নেমে আসে, তখনও ক্যামেরা–ট্রাইপড ঠিক আগের জায়গাতেই থাকে। চায়ের দোকান পুরোপুরি না খুললেও কয়েকজন সাংবাদিক লাইভে যান।

রাতের পূর্ণ কভারেজ মিলিয়ে তারা নতুন আপডেট সাজিয়ে নিতে থাকেন, সবশেষ আপডেটের। কতটা চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন বেগম জিয়া? কবে নেওয়া হতে পারে লন্ডন? আদৌ নেওয়া সম্ভব কি না? এসবই জানাতে থাকেন লাল, নীল, সবুজ বুমের সংবাদকর্মীরা। পিসিআরে ‘স্ট্যান্ডবাই’ বলা মাত্রই নিজের কাছে থাকা তথ্য অন-ক্যামেরায় জানিয়ে দেন কর্তব্যরত রিপোর্টাররা।

কেউ কেউ টানা ২৪ ঘণ্টায় দুই–তিন শিফটে কাজ করছেন। তবুও তারা বলেন, “মানুষের আগ্রহ এত বেশি যে, আপডেট পাওয়া মাত্রই জানাতে হয়।”

ভিড়ের কারণে কাজ ব্যাহত, নিরাপত্তা বাড়ানোর পরামর্শ
উৎসুক জনতার ভিড় অনেক সময় সাংবাদিকদের কাজ বাধাগ্রস্ত করছে বলে মনে করেন মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার মুসা। তার মতে, “হাসপাতালের গেটের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা উচিত। ভিড় বাড়ায় অনেক সময় কাজ করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”

ভুয়া খবরও বাড়ছে, সতর্ক থাকার আহ্বান
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিমূলক ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা আরও বেড়েছে। বিশেষত সন্ধ্যা–রাতের সময়ে কোনো যাচাই ছাড়াই বিভিন্ন পোস্ট ভাইরাল হচ্ছে, যার বেশিরভাগই মিথ্যা।

এ প্রসঙ্গে মিনহাজ চৌধুরী বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি তথ্য পাওয়ার পরই ক্রসচেক করে রিপোর্ট করতে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মিসইনফরমেশন ছড়াচ্ছে। বিএনপির মিডিয়া সেল ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের আরও সতর্ক থাকা উচিত, নয়তো বিভ্রান্তি থামবে না।”

দীর্ঘ অপেক্ষা: ভেতরে চিকিৎসক, বাইরে সাংবাদিকরা
হাসপাতালের ভেতরে চিকিৎসকেরা প্রতিটি মুহূর্তে অবস্থা মূল্যায়ন করছেন। বাইরে সাংবাদিকরা সময়ের অপেক্ষায়—কেউ কপি লিখছেন, কেউ ভিডিও এডিট করছেন, কেউ লাইভে যাচ্ছেন।

মোবাইল সাংবাদিকতার বাড়তি গতি ভুল তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকিও বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

এভারকেয়ারের গেটের সামনে সারাক্ষণ ক্যামেরা নিয়ে অবস্থান করছেন অনলাইনমাধ্যমের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার সামিউল হক খান। টানা নয় দিন ধরে তিনি ডিউটি করছেন।

সামিউল বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীদের একজন। তার অবস্থার অবনতির পর থেকেই টানা ডিউটি করছি। সত্যি বলতে, এটা এক নতুন অভিজ্ঞতা। রাতের শীত, নানান সংকট—সবকিছু উপেক্ষা করেই কাজ করছি দেশের মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দিতে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত টানা ডিউটি করেছি, ডে–অফ কাটেনি।”


   আরও সংবাদ