ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ঢামেক হাসপাতালে রোগী নিয়ে প্রবেশেই ১৫ মিনিট পার

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:১৬ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৮ বার


ঢামেক হাসপাতালে রোগী নিয়ে প্রবেশেই ১৫ মিনিট পার

ঢাকা: একের পর এক রোগী আসছেন। তবে রোগীদের হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশেই কেটে যাচ্ছে ১০-১৫ মিনিট।

এতে চিকিৎসা পেতে হচ্ছে দেরি। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী-স্বজনদের। এর কারণ মূলত দুই শতাধিক দোকানের ভিড়।

 

এমন চিত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের। সামনের সড়কে শহীদ মিনারের পাশে বহির্বিভাগ থেকে জরুরি বিভাগ পর্যন্ত দুই শতাধিক দোকান। এসব দোকানের কারণে তৈরি হয় যানজট। রোগী প্রবেশ ও চিকিৎসা পেতে হয় দেরি-ভোগান্তি।

একে তো রিকশার জটলা, তার সঙ্গে যানবাহনের পার্কিং। ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাদের জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। অন্যদিকে রোগী নিয়ে আসা যানবাহনের চালকরা বলছেন, হাসপাতালের মুখে জটলার কারণে প্রায় সময়ই ভেতরে প্রবেশ করতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লেগে যায়।

শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, পুলিশ ও হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা আনসার সদস্যদের সামনেই সড়ক-ফুটপাতে দোকানগুলোতে ব্যবসা চলছে। মাঝে মাঝে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ হয়। কিন্তু কদিন যেতে না যেতেই আবার বসে যায় দোকান। চলে ব্যবসা।

কারা এসব দোকানের সঙ্গে জড়িত, দেখা যাক। কথা বলে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর একটি রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে সড়কের ওই অংশ দখল করে নেন কিছু লোক। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের লোকেরাই এসব দোকান নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দোকানের জায়গা পুনর্দখল হয়েছে।

তবে দোকানিরা পুনর্দখলের বিষয়টি স্বীকার করছেন না। তারা বলছেন, আপাতত কাউকে টাকা দিতে হয় না। তবে বিদ্যুৎবিল বাবদ আব্বাস নামে একজনকে কিছু টাকা দেওয়া হয়। ৫ আগস্টের আগে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতিদিন টাকা দেওয়া হতো প্রতিটি দোকান থেকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, আমি এই হাসপাতালে আছি তিন-চার বছর ধরে। শুনেছি যুগ যুগ ধরে হাসপাতালের সামনের সড়ক দখল করে ফুটপাতের দোকানিরা ব্যবসা করে আসছেন। সেখানে কিছু দোকান পরিবারতান্ত্রিক। এক সময় বাবা দোকান চালাতেন, এখন ছেলে, নাতিরা। এসব দোকান যারা চালান, তারা হাসপাতালের কারো না কারো আত্মীয়-স্বজন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আত্মীয়-স্বজনের সংখ্যাই বেশি।

তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে এসব দোকান উচ্ছেদ করেছে। সিটি করপোরেশনও উচ্ছেদ করেছে। কিন্তু এসব আবার বসে যায়। আমরা যে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছি তা কিন্তু নয়। হাসপাতালে প্রবেশের মুখ থেকে পার্মানেন্টলি (স্থায়ীভাবে) কীভাবে অবৈধ দোকান সরানো যায়, সেই চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

বেসরকারি এক অ্যাম্বুলেন্সের চালক রফিকুল ইসলাম তার অভিজ্ঞতা শোনালেন । তিনি বলেন, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থেকে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন সকালে। তবে রোগী নিয়ে প্রবেশ করার সময় সেখানে থাকা অবৈধ দোকান এবং আশেপাশে পার্কিং করে রাখা সিএনজিচালিত রিকশার কারণে বেগ পেতে হয়।

তিনি বলেন, জরুরি বিভাগে যেতে আমার আনুমানিক ১৫ মিনিটের মতো সময় লেগে যায়। মানে হলো হাসপাতালে দ্রুত এসেও প্রবেশ করতেই ১৫মিনিট সময় লেগে গেল। অথচ রোগীর অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল। তিনি মনে করছে, হাসপাতালের প্রবেশপথে যানজটের কারণ হলো এসব অবৈধ দোকান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা আনসার সদস্যদের প্রধান প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মো. মিজান জানান, হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের প্রবেশের মুখে অবৈধ প্রচুর দোকান ২৪ ঘণ্টা-ই খোলা থাকে। এটি সত্য যে এসব দোকান হাসপাতালকেন্দ্রিক ব্যবসা করে থাকে।

তিনি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় অনেকবার এসব দোকান উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি সিটি করপোরেশনও উঠিয়ে দিয়েছে। তবুও এসব দোকান ফিরে আসে। হাসপাতালে এখন আনসার সদস্যর সংখ্যা কম। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আনসার সদস্য বাড়াতে পারলে তখন তাদের হাসপাতালের প্রবেশপথে পাহারায় বসানোর চেষ্টা করা হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ক্যাম্পের পাশে হাসপাতালে প্রবেশের মুখে থাকা অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদের দায়িত্ব আমার নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তারপর নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মৌখিকভাবে বললে কোনো কাজ হবে না।


   আরও সংবাদ