ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৫৮ বার
সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারে অভিযুক্ত কানাডায় পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। ১০ ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৪৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে এসব মামলা করা হয়। প্রতিটি মামলাতেই পৃথকভাবে আসামি আরও ৩৭ জন। বৃহস্পতিবার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকায় এই পাঁচ মামলা দায়ের করা হয়। ঢাকাটাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্থাটির পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। মামলাগুলোর তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানসহ চার সদস্যের একটি দল।
গত ৯ মার্চ দুদক প্রধান কার্যালয় অবৈধভাবে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলার অনুমোদন করে। ওই সময় সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। ওই ১০ মামলা থেকে আজ পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেন কমিশনের জনসংযোগ বিভাগ। পি কে হালদার ছাড়াও এই মামলাগুলোতে আসামি করা হয়েছে তার অন্যতম সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, এমডি মো. রাশেদুল হক, ভারপ্রাপ্ত এমডি মো. আবেদ হোসেন এবং প্রতিষ্ঠানটির অন্য বোর্ড সদস্যদের।
এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- দৃনান এ্যাপারেলসের চেয়ারম্যান কাজী মমরেজ মাহমুদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু রাজীব মারুফ, ইমেক্সোর প্রোপ্রাইটর ইমাম হোসেন, লিপরো ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার মিস্ত্রি, উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের দুই পরিচালক সুকুমার সাহা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা সাহা, আর্থস্কোপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রশান্ত দেউরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরা দেউরী, ওকায়ামা লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস, আরবি এন্টারপ্রাইজের মালিক রতন কুমার বিশ্বাস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জী ও তার স্বামী পরিচালক বাসুদেব ব্যানার্জী।
ওই ৩৭ জন আসামির তালিকায় আরও যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক এম নুরুল আলম, পরিচালক মো. নওশের-উল ইসলাম, পরিচালক নাসিম আনোয়ার, পরিচালক মো. নুরুজ্জামান, পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও পরিচালক জহিরুল আলম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই ছাড়াই কোনো মর্টগেজ না নিয়ে দশটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মালিককে ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন। এই প্রক্রিয়ায় বেনিফিশিয়ারিরা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৪৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ভুয়া ঋণের নামে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিপুল পরিমাণ এই অর্থ পরবর্তীতে বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ভুয়া কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপনপূর্বক পাচার করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করেছেন। গত বছরের ৮ জানুয়ারি প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার এজাহারে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা পাচারেরও অভিযোগ আনা হয়।
অন্যদিকে চলতি বছরের গত ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি পাঁচটি ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকার ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে পিকে হালদারসহ ৩৩ জনকে আসামি করে পাঁচটি মামলা করে দুদক। পি কে হালদার ছাড়াও এসব মামলায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক এমডি মো. রাশেদুল হক, নয়জন বোর্ড সদস্য, পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীসহ ৩৩ জনকে আসামি করা হয়।
দুদক সূত্রে জানা যায়, পিকে হালদারের আরও ৩৩ জন সহযোগীর সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারির অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। শিগগির এদের বিরুদ্ধে এই নোটিশ জারি করা হবে। আর গত ১৬ মার্চ পি কে হালদারের বান্ধবী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই, একই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান ও সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরীকে মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে দুদক।
অন্যদিকে পিকে হালদারের সহযোগী ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেমসহ ৪৫ জনের ইমিগ্রেশন বন্ধ চেয়ে ইমিগ্রেশন অথরিটির কাছে পত্র দেয় সংস্থাটি।