ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

হার বেড়েছে করোনা শনাক্তের

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৫৬ বার


 হার বেড়েছে করোনা শনাক্তের

এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা শনাক্তের হার বেড়েছে ৯১ দশমিক ৪৯ ভাগ। মৃত্যু বেড়েছে ৮৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণ এমন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এর পেছনে ভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় থেকে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়গুলো প্রায় কোনো সুপারিশই আমলে নিচ্ছে না। উল্টো তারা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে- অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, রাজধানীতে বর্তমানে ১০টি সরকারি এবং ৯টি বেসরকারি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট শয্যা রয়েছে ৩ হাজার ২৪৪টি। এরমধ্যে বর্তমানে ভর্তি আছেন ১ হাজার ৯৯২ রোগী এবং ১ হাজার ২৫২টি শয্য খালি রয়েছে। অন্যদিকে এসব হাসপাতালে আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) শয্যার সংখ্যা ২৮৬টি। এর মধ্যে ভর্তি আছেন ২১৫ জন এবং খালি আছে ৭১টি শয্যা। রোগী বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই হাসপাতালগুলোয় শয্যা সংকট দেখা দেবে। আইসিইউ সংকট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। 

এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক টেলিফোনে বলেন, দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে নানা সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সুপারিশগুলো বিবেচনা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশগুলো যথাযথভবে আমলে নিচ্ছে না বা বাস্তবায়ন করছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সুপারিশ করতে পারে, কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য বাধ্য করতে পারে না। মাত্র ১৫ দিনে ২৫ লাখ মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। গত বছর আমরা জানতাম না কোভিড কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় বা চিকিৎসা ব্যবস্থা কি। কিন্তু এখন আমরা জানি। কিন্তু জনগণের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়া এ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এভাবে চলতে থাকলে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যার চেয়ে রোগী বেড়ে গেলে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, শিগগিরই নতুন সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। বিশেষ করে, সামাজিক অনুষ্ঠানে অতিথি নিয়ন্ত্রণ করা, মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, বিনোদন কেন্দ্রগুলো সাময়িক বন্ধ রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মতো বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হবে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কতটা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে গত দুই সপ্তাহের রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে সেটা প্রতীয়মান হয়। গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার হার বেড়েছে ২০ দশমিক ১৬ ভাগ। শনাক্তের হার বেড়েছে ৯১ দশমিক ৪৯ ভাগ এবং মৃত্যুর হার বেড়েছে ৮৫ দশমিক ৫৩ ভাগ। সংখ্যাবাচক ভাবে উল্লেখ করলে দেখা যায়, গত সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ২৩২টি, এ সপ্তাহে হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৬টি। গত সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছিল ৬ হাজার ৫১২ এবং চলতি সপ্তাহে ১২ হাজার ৪৭০ জন। গত সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছিল ৭৬ জনের, এ সপ্তাহে ১৪১ জনের। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত এক দিনে আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৮৬৮ জন। গত এক দিনে মারা যাওয়া ২৬ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে ৮ হাজার ৬৬৮ জনের মৃত্যু হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১ হাজার ৮৬৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭০৬ হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সেটি ইতোমধ্যে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। কিন্তু আমাদের ভয় দেখাতে পারছে না। সেজন্যই নানা ধরনের সমাবেশ হচ্ছে, বিসিএস পরীক্ষা হচ্ছে, বইমেলা হচ্ছে, নির্বাচন হচ্ছে, কক্সবাজার সেন্ট মার্টিনে লাখ লাখ মানুষ বেড়াতে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যবিধি ভাঙার ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে পুরো বিষয়ের গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যতই অসচেতন হোক, একটি বৈশ্বিক মহামারি চলাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষজ্ঞ, প্রশাসনিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। 


   আরও সংবাদ