ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬০২ বার
অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণের নামে অন্তত ২৫টি ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা নিয়েছে আনোয়ার ইস্পাত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি এড়াতে প্রতিষ্ঠানটির ছিল অভিনব কৌশল। সেখানে প্রতিটি ঋণ প্রায় আড়াই কোটি টাকা করে নেয়া হয়েছে। এভাবে বারবার ছোট ছোট চেকে নেয়া হয় হাজার কোটি টাকার ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পুরো টাকাটা আত্মসাৎ করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে টাকা আত্মসাতের জন্য এসপিএস ট্রেডিং নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এ প্রতিষ্ঠানের নামেই টাকা সরিয়েছে আনোয়ার ইস্পাত। আর পণ্যের কাঁচামাল কেনার নামে ব্যাংক থেকে টাকা সরানো হয়।
এক্ষেত্রে এসপিএস ট্রেডিং নামের ওই ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে টাকা পরিশোধের দিন বা একদিন পরেই আনোয়ার গ্রুপের অপর প্রতিষ্ঠানে সমপরিমাণ টাকা ফেরত দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ৪ বছরে এসপিএস ট্রেডিংকে মাধ্যমে এক হাজার ৭৮ কোটি টাকা সরিয়েছে গ্রুপটি। এসব লেনদেনের বিপরীতে এক টাকাও ভ্যাট পরিশোধ করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরেজমিন ঘুরে এসপিএস ট্রেডিং নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্ট নম্বর ১৪০১৯৩৪৪৯৬০০১। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট এ অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়। এটি খোলার সময় এ গ্রাহকের নাম দেয়া হয় মীর আরিফুর রহমান। ব্যবসা ধরন সরবরাহকারী। অ্যাকাউন্টে গ্রাহকের মোবাইল নম্বর ০১৭১৩০১২২২৫। কিন্তু এই নম্বরটি গ্রামীণফোনে সুশান্ত সরকার নামে নিবন্ধিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, স্ক্র্যাপ আয়রন কেনার নামে এসপিএস ট্রেডিংয়ের হিসাবে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা জমা করে আনোয়ার ইস্পাত। টাকা জমা দেয়ার দিন অথবা একদিন পরেই টাকাটা আনোয়ার গ্রুপের অপর প্রতিষ্ঠান আনোয়ার সিমেন্টের ব্যাংক হিসাবে জমা করে এসপিএস ট্রেডিং। মাত্র ৬ মাসের মধ্যে ২০টি লেনদেনের মাধ্যমে ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন শনাক্ত করা হয়েছে। পুরো টাকাটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব ব্যাংকিং লেনদেনের বিপরীতে এক টাকাও ভ্যাট পরিশোধ করেনি আনোয়ার ইস্পাত।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, টাকাগুলো বিদেশে পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অস্তিত্বহীন একটি প্রতিষ্ঠানকে পণ্যের মূল্য পরিশোধের কোনো প্রশ্নই আসে না। এছাড়া এক হাজার কোটি টাকা লেনদেনের বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে তারা। যার অঙ্ক ১৬১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চতুর্থ প্রজন্মের একটি ব্যাংক থেকে ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকার একটি মেয়াদি ঋণ নেয় আনোয়ার ইস্পাত। এ অর্থ দিয়ে এসপিএস ট্রেডিংয়ের স্ক্র্যাপ আয়রনের মূল্য পরিশোধ করা হয়। টাকাগুলো জমা করা হয় সিটি ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখায়।
কিন্তু ওই দিনই (৯ ডিসেম্বর) সিটি ব্যাংক থেকে আনোয়ার গ্রুপের অপর কোম্পানি আনোয়ার সিমেন্টের অ্যাকাউন্টে টাকাগুলো (২ কোটি ৪৬ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা) ফেরত দিয়েছে এসপিএস ট্রেডিং। যে চেকের মাধ্যমে এ টাকাটা ফেরত বা স্থানান্তর করা হয়েছে তার নম্বর ছিল- ৩৫৭৮০১৭। ওই দিন অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর আরও একটি ঋণ তৈরি করা হয় এবং একই প্রক্রিয়ায় আনোয়ার সিমেন্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করে এসপিএস। পরেরবার ঋণের অঙ্ক ছিল ২ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪০০ টাকা।
অর্থগুলো স্থানান্তরে যে চেক ইস্যু করা হয়েছিল তার নম্বর ছিল- ৩৫৭৮০১৬। এছাড়াও ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ২ কোটি ৫১ লাখ ৫২ হাজার, ২৪ মার্চ ২ কোটি ৪৯ লাখ ২৮ হাজার, ১৪ জুন ২ কোটি ৪৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একই পদ্ধতিতে ওই কোম্পানিকে ফেরত দেয়া হয়েছে। স্ক্র্যাপ আয়রন কেনার নামে একাধিক ব্যাংকের একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সিটি ব্যাংকে হিসাব খোলার সময় দেয়া ঠিকানাতে গিয়ে এসপিএস ট্রেডিংয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে। সেখানে স্থানীয়দের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান কোনোদিনই এখানে ছিল না।
চট্টগ্রামের ৩নং জেটি গেটসংলগ্ন হাকিম মিনি সুপার মার্কেটের পঞ্চম তলায় এখন ট্রিম ট্রেড লিমিটেড, মেসার্স শাহ আমানত এন্টারপ্রাইজ, জেইন করপোরেশন, রেহানা ট্রেডিং ও রবি ইন্টারন্যাশনালের অফিস।
এ বিষয়ে জানতে আনোয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে উনার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা গাজী নুসরাতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ওয়ার্কিংডেতে যোগাযোগ করতে বলেন।