ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫২১ বার
প্রথম ধাক্কা সামলে নেওয়ার আগেই দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রাথমিকভাবে আগামীকাল থেকে ৭ দিনের লকডাউন দিয়েছে সরকার। আর এমন এক সময় লকডাউনের ঘোষণা এলো, যখন পহেলা বৈশাখ ও ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে ব্যবসায়ীদের। অর্থনীতিবিদরা বলছে, এতে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কার শঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে সামষ্টিক অর্থনীতি, মানুষের কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সামাজিক সুরক্ষায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর করোনার প্রভাব দীর্ঘায়িত হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলা কঠিন।
তাদের মতে, এই মুহূর্তে লকডাউনের সিদ্ধান্তটি সঠিক। তবে এই লকডাউনকে ছুটি মনে করে, মানুষ যেন বাইরে না যায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদনও চালু রাখা উচিত। অন্যদিকে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হিসাবে আবারও প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে। সামগ্রিকভাবে করোনা মোকাবিলায় বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা এসব মন্তব্য করেন।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এরপর সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ওই বছরের ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতসহ সুনির্দিষ্ট দশ পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু বিপর্যস্ত অর্থনীতি এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বিশেষ করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, নতুন কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে মানুষের আয় এখনো আগের জায়গা ফিরে যায়নি। এর মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। যা বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশের জন্য আশঙ্কার কারণ।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। নিঃসন্দেহে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্বাভাবিকভাবেই এতে মানুষের আয় কমবে। এতে কমবে ব্যয় করার সক্ষমতা। ফলে চাহিদা কমে যাবে। এতে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করবে, কতদিন লকডাউন দীর্ঘ হয় তার ওপর। আর লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা বলা কঠিন। এ অবস্থায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক সুরক্ষা ও বণ্টন ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রথম ধাক্কায় নড়বড়ে হয়েছিল দেশের অর্থনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্যে ছিল গতিহীন। নতুন করে ১০ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছে। অর্থনীতির মৌলিক সূচকগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স ছাড়া সবগুলো নিম্নমুখী। মির্জ্জা বলেন, করোনায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমেছে। এতে নতুন করে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ সামনে চলে এসেছে।
প্রথমত, গত ১০ বছরে দেশে প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক একটি ধারা ছিল, বর্তমানে সেই ধারাটি অনেকটা স্তিমিত হয়ে গেছে। ফলে ২০২০ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অনেকটা কমেছে। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ আমাদের জন্য শঙ্কার কারণ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে করোনার অভিঘাত চলমান। এর ফলে কর্মসংস্থান এবং সামাজিক সুরক্ষা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। বিশেষ করে স্বাস্থ্যে বড় ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এতে অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়বে। তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকার ৭ দিনের লকডাউন দিয়েছে। এটি সঠিক। কারণ এর বাইরে কিছু করার ছিল না। তবে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুতি জরুরি। বিশেষ করে লকডাউনের কারণে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ এবং দিনমজুরসহ বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক যেসব শ্রমিক রয়েছে, তাদের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। আর মধ্যমেয়াদে কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আবারও উদ্দীপনামূলক প্যাকেজ ঘোষণা করা উচিত। এতে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা থাকতে হবে।
পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ের কারণে অর্থনীতি খাদে পড়েছিল। সেখান থেকে আমরা প্রায় উঠে এসেছিলাম। এর মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এতে অর্থনীতি আরও খাদে পড়েছে। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখ, রমজান এবং ঈদকে কেন্দ্র অর্থনীতিতে যে লেনদেন হতো তাতে বিপর্যয় নেমে এলো। তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার লকডাউন দিয়েছে। নিশ্চয়ই ভেতরেও একটি পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সবাইকে জানানো হয়নি। তবে ওই পরিকল্পনা অবশ্যই স্মার্ট, বাস্তবসম্মত এবং বিজ্ঞানভিত্তিক হওয়া উচিত। তার মতে, করোনায় স্বাস্থ্য খাতে সবার আগে নজর দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে যে সক্ষমতা রয়েছে, কমপক্ষে তা দ্বিগুণ করতে হবে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ খাতে সরকারের ঢিলেমি ছিল। কারণ সরকারের হাতে প্রচুর টাকা রয়েছে। বিদেশিরা এই ধরনের বিভিন্ন প্রকল্পে প্রচুর পরিমাণ টাকা দিতে আগ্রহী। কিন্তু কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এই বিষয়টিতে জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, সরকার লকডাউন দিয়েছে। এক্ষেত্রে মানুষ যেন ঘরে থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার বাইরে যাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে। আর সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক এবং সামাজিক কর্মীদের ব্যবহার করা যেতে পারে।