ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

এ যেন ‘ঈদযাত্রা’

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৩১ বার


এ যেন ‘ঈদযাত্রা’

লকডাউন ঘোষণার পর ঘরমুখী মানুষের ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয় রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনাল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি রোধে সরকারি বিধি-নিষেধ কার্যকরের আগের দিন রোববার গভীর রাত পর্যন্ত এমনই চিত্র দেখা গেছে। এক সপ্তাহের ‘লকডাউন’ আরোপের খবরে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য এসব টার্মিনালে ঈদযাত্রার মতো হুমড়ি খেয়ে পড়েন যাত্রীরা। সামাজিক দূরত্ব মানা দূরে থাক, গাদাগাদি করে টিকিট সংগ্রহ ও গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। যাত্রীদের অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। যাত্রীর তুলনায় সংকট দেখা দেয় গণপরিবহণের। এ সুযোগ নিয়েছেন পরিবহণ শ্রমিকেরা। নির্দিষ্ট ভাড়ার কয়েকগুণ বেশি আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

বাস ও ট্রেনের টিকিট না পেয়ে অনেককে ট্রাকে চড়েও গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। যদিও টার্মিনালগুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। বাড়তি ভাড়া আদায় ও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করায় কয়েকজনকে জরিমানা করেছেন মোবাইল কোর্ট। রোববার রাজধানীর টার্মিনালগুলো ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

অপরদিকে লঞ্চের চিত্র ছিল আরও ভয়াবহ। রোববার বিকাল থেকে ঢাকা নদীবন্দরে ছিল (সদরঘাট) উপচেপড়া ভিড়। লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী বহনের কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। গাদাগাদি করেই বাড়তি ভাড়ায় যাত্রী বহন করেছে লঞ্চ মালিক-শ্রমিকেরা। সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাড়ে ৭টা থেকে এক ঘণ্টা লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ সময় যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

লকডাউনের শুরুর আগে যারা বাড়ি গেছেন তাদের বড় অংশই দিনমজুর, রিকশাচালক, হকার এবং গণপরিবহণ ও বিভিন্ন মার্কেটের কর্মী। সরকার ঘোষিত বিধি-নিষেধের কারণে অন্তত আগামী এক সপ্তাহ বন্ধের সময়ে কাজ না থাকায় তারা বাড়ি ফিরে যান। বন্ধের সময়ে পরিবারের সদস্যদের কাছাকাছি থাকতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা বাড়ি যান। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এভাবে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে বিপুল সংখ্যক মানুষের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শহর থেকে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে শনিবার সরকারের দুজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সোমবার থেকে দেশে সাত দিনের লকডাউনের কথা জানান। রোববার ১১ দফা নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে সব ধরনের গণপরিবহণ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, টার্মিনালজুড়ে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। কাক্সিক্ষত টিকিটের জন্য এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টার ছুটে যান যাত্রীরা। পর্যাপ্ত বাস না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। সিরাজগঞ্জের শিরিন বেগম মাত্র ২৬ দিনের ছেলে সন্তান নিয়ে গাবতলী বাস টার্মিনালে আসেন। বাসের টিকিটের জন্য সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। বেলা ২টা পর্যন্ত তিনি কোনো বাসের টিকিট পাননি। পরে খালেক এন্টারপ্রাইজ নামের একটি পরিবহণের টিকিট কেনেন এক হাজার টাকায়। শিরিন বেগম বলেন, চিকিৎসা করাতে ঢাকায় ভাইয়ের বাসায় ছিলেন তিনি। গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞার খবরে দ্রুত বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাড়তি ভাড়ায় খালেক এন্টারপ্রাইজের টিকিট কিনলেও আমাকে হিমাচল পরিবহণের বাসে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু আমি নই, ৩৬ জনকে একইভাবে এ বাসে উঠিয়ে দেওয়া হয়। 

এলিফ্যান্ট রোডের একটি মার্কেটের কর্মচারী মো. সোলাইমান বলেন, দোকান বন্ধ করে দেবে তাই খুলনায় নিজ গ্রামে যাচ্ছি। হানিফ, সোহাগসহ আরও কয়েকটি বাসের কাউন্টার ঘুরে টিকিট পাইনি। বাধ্য হয়ে কাটালাইনে যেতে সেলফি পরিবহণে উঠতে হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত আগে দুইশ টাকা ভাড়া থাকলেও এখন পাঁচশ টাকা নিচ্ছে। সোলাইমান বলেন, আল্লাহ জানে কতদিন এমন চলবে। বেশিদিন এমন চললে মালিক বেতন দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। মার্চ মাসের বেতন অর্ধেক দিয়েছে। যশোরের টিকিট নিতে রোজিনা এক্সপ্রেসের কাউন্টারে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এক যাত্রী। তার অভিযোগ, নিয়মিত ভাড়া ৫০০ টাকা হলেও ১ হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে। সরকার ভাড়া ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত নির্ধারণ করে দিলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও সকাল থেকেই দূরপাল্লার বাসগুলোতে যাত্রীর চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। কাউন্টারে এসে অনেকেই টিকিট না পেয়ে পিকআপ ও ট্রাকে করে বাড়ি ফেরেন। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কষ্ট করে বাড়ি ফিরতে হয় অনেকের। 

বাড়তি ভাড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, আমি নিজেই কয়েকটি টার্মিনাল ঘুরেছি। বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখিনি। বাসগুলোতে ৫০ শতাংশ যাত্রী ও সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করেছে। তিনি বলেন, কয়েকজন আমাকে ফোন করে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছে। মূলত সাধারণ সময়ে বাসে কম ভাড়া নেয়া হতো, সেটিকে ভিত্তি করে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।

গাবতলী সোহাগ পরিবহণের কাউন্টারে দায়িত্বরত নজরুল বিশ্বাস বলেন, লকডাউনের খবর আসার পর কাউন্টারে উপচেপড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। শনিবার রাত থেকে শুরু হয়ে রোববার সকাল ১১টার মধ্যে সব টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এখন যারা আসছে তাদের বাধ্য হয়ে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। হানিফ কাউন্টারের ম্যানেজার জাকির মল্লিক জানান, স্বাস্থ্যবিধি মানার কারণে ৪০ আসনের বাসে ২০ জন নিতে হচ্ছে। ফলে আসন খালি থাকলেও যাত্রী নেওয়া যাচ্ছে না। এতে গাড়ির সংকট তৈরি হয়েছে।


   আরও সংবাদ