ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৩৬ বার
করোনাভাইরাস সংক্রমণের তীব্রতা সামাল দিতে সরকার সাত দিনের বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আর দোকানিরা বিক্ষোভ করে আসছেন। কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ লোকসানের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পহেলা বৈশাখ ও ঈদের বেচা-বিক্রি সামনে রেখে এই টাকা বিনিয়োগ করেছেন তাঁরা। নিষেধাজ্ঞার কারণে দোকান খুলতে না পারলে এর পুরোটাই লোকসান হবে। এমন পরিস্থিতিতে সীমিত সময়ের জন্য হলেও পণ্য বিক্রির সুযোগ চান তাঁরা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য মতে, ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০ লাখ দোকান বা ক্ষুদ্র ব্যবসা রয়েছে দেশে। গত বছর সাধারণ ছুটিতে বন্ধ থাকার কারণে তাঁদের প্রতিদিন এক হাজার ১০০ কোটি টাকা করে লোকসান হয়েছে। সেই লোকসান কাটিয়ে উঠতে এবারের পহেলা বৈশাখ ও ঈদ উৎসবের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু আবারও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন দোকান মালিক ও কর্মচারীরা।
নিউ মার্কেট এলাকায় কথা হয় একটি কাপড়ের দোকানের কর্মী রজব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দোকান বন্ধ থাকলে মালিক বেতন দেন না। কারণ দোকানের অনেক খরচ। তাই বেচাকেনা না হলে মহাজনই বা কোথা থেকে দেবেন? আর এই অবস্থায় লকডাউন চলতে থাকলে মহাজনও চলতে পারবেন না, আমরাও চলতে পারব না।’ বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ঈদ ও বৈশাখকে কেন্দ্র করে দোকান মালিকরা এরই মধ্যে এক হাজার কোটি টাকার মালপত্র তুলেছেন, মৌসুম চলে গেলে যা অবিক্রীত থেকে যাবে ব্যবসায়ীদের।’
চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘প্রত্যেক দোকানদার তাঁর সামর্থ্য অনুসারে দোকানে মাল তুলেছেন। পাইকারি, খুচরা—সব মিলে প্রায় হাজার কোটি টাকার পণ্য তোলা হয়েছে দোকানে। এর জন্য তাঁরা বিনিয়োগ করেছেন ব্যাংকঋণ, জমি বন্ধক আর সম্পত্তি বিক্রি করে। যে যেভাবে পেরেছেন, রোজা ও ঈদ সামনে রেখে বিনিয়োগ করেছেন। আর এই পর্যায়ে দোকান খুলতে না পারলে সবাই একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাবেন।’
ঢাকা নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘ঈদ, বৈশাখ ও ঈদ-পরবর্তী মৌসুম নিয়ে আমাদের একটা আশা ছিল, গতবার যে ক্ষতি হয়েছিল তার কিছুটা এবার কাটিয়ে উঠতে পারব। এমন সময় বিধি-নিষেধ বা লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একেবারে স্থবির হয়ে গেছি। সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিবেচনা করে সীমিত সময়ের জন্য যেন আমাদের একটা সুযোগ দেওয়া হয়।’
এদিকে গতকাল বুধবারও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরা। নিষেধাজ্ঞার তৃতীয় দিনে শপিং মল খুলে দেওয়ার দাবিতে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দুপুরের দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ব্যবসায়ীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে জড়ো হতে থাকেন। কোনো কোনো ব্যবসায়ীর হাতে নিজেদের মার্কেটের মালিক সমিতির ব্যানারও দেখা যায়। অন্যদিকে ইস্টার্ন প্লাজার সামনেও একদল ব্যবসায়ী মানববন্ধন করেন। এ সময় আশপাশে যান চলাচলে কিছুক্ষণের জন্য বিঘ্ন ঘটে। পুলিশ এসে ব্যবসায়ীদের সরে যেতে বললে ব্যবসায়ীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে সরে পড়েন।