ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

অর্ধেক টাকাও ব্যবহার করেনি ব্যাংকগুলো

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৪৫ বার


অর্ধেক টাকাও ব্যবহার করেনি ব্যাংকগুলো

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেমন কম খরচে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল ব্যবহার করতে পারছে না, তেমনি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরাও কম সুদে ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে অর্থনীতিতে করোনার ক্ষতি দ্রুত কাটিয়ে উঠার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আটটি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নামমাত্র সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বরাদ্দ অর্ধেক টাকাও ব্যবহার করতে পারেনি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের সময় সীমা আরও তিন মাস বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় কম সুদের ঋণনির্ভর ১১টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অর্থায়নে রয়েছে ৮৮ হাজার কোটি টাকার আটটি প্যাকেজ। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২৫ হাজার কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৬৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ব্যাংকগুলো ব্যবহার করতে পেরেছে মাত্র ২৯ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। বাকি ৩৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকাই ব্যবহার করতে পারেনি। অর্থাৎ ৪৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। বাকি ৫২ দশমিক ৫২ শতাংশই ব্যবহার করতে পারেনি।

অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ওইসব অর্থ মাত্র এক থেকে তিন শতাংশ সুদে দিচ্ছে। যেখানে ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহের গড় খরচ ৫ থেকে ৬ শতাংশ। সেখানে অর্ধেক খরচেরও কমে তহবিল পেয়েও তা ব্যবহার করতে পারেনি ব্যাংকগুলো।

এসব ঋণ গ্রাহক পর্যায়ে ৪ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে বিতরণ করার কথা। যেখানে ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদেও হার ৯ শতাংশ। অর্থাৎ গ্রাহকরাও অর্ধেক কম সুদে ঋণ পেত। সুদেও বাকি সাড়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশ সরকার থেকে ভর্তুকি হিসাবে ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হতো।

এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিলের ব্যবহার বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে ব্যাপক ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। প্যাকেজ ঘোষণার প্রথমে নিয়ম ছিল বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ বিতরণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে চাইলে টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু পরে তা শিথিল করে বলা হয়, ঋণ অনুমোদনের পর বিতরণের আগে চাইলেও টাকা ছাড় করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সক্ষমতার অভাব রয়েছে। তারা নতুন গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না। ফলে নতুন গ্রাহক ঋণ পাচ্ছে না পুরনো গ্রাহকদের ঋণ দিয়েই ব্যাংক দায়িত্ব শেষ করেছে। অথচ করোনার প্রভাব মোকাবিলায় নতুন গ্রাহকদের ঋণ দেওয়াটা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা পেতে নানা শর্ত পালন করতে হয়। এগুলো ব্যাংকের ক্ষেত্রে যেমন আছে, তেমনি গ্রাহকদের ক্ষেত্রেও। এতে অনেকেই স্বচ্ছতা আনতে চায় না। এটি একটি বড় দুর্বলতা।

বড় শিল্প ও সেবা খাতে চলতি মূলধন ঋণ জোগানের জন্য প্রথমে ৩০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়। এরপর এর পরিমাণ আরও তিন হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এরপর আরও এক দফায় বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য ৭ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক দিচ্ছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ ঋণের মধ্যে বড় শিল্প ও সেবা খাতে চলতি মূলধন হিসাবে দেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য গঠিত ৭ হাজার কোটি টাকার তহবিলের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১১০ কোটি টাকা।

রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এ তহবিল থেকে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। মোট ৩২ হাজার ১১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেওয়া হয় ১৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) চলতি মূলধন ঋণ জোগানোর জন্য গঠিত ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১০ হাজার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেবে ১০ হাজার কোটি টাকা। মোট বিতরণ হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা।


   আরও সংবাদ