ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭০৮ বার
অপরাধ ডেস্ক: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মীরগাঙ গ্রামটি দেশের সর্ব দক্ষিণে। গ্রামের ওপারে সুন্দরবন আর অথৈ বঙ্গপোসাগর। উপকূলের সবশেষ এই গ্রামেই বসবাস হাবিবুর রহমানের। শিশুকাল থেকেই দারিদ্রতা ছায়ার মতো অনুসরন করায় লেখা পড়া আর হয়ে ওঠেনি। বাব চাচা ও বড় ভাইদের সাথে বাদায় (সুন্দরবন) যেয়ে হিংস্র প্রাণী মোকাবেলা করে বন কাটা, মধু আহরণসহ নানা বিষয়ও রপ্ত করে হাবিবুর।
সাহস আর কৌশল জানা থাকা সত্বেও গত ১৪ এপ্রিল সকালে সামন্য অসাবধানতায় প্রাণ দিতে হয় তাকে। বাঘের আক্রমনে নিহত হন হাবিবুর রহমান (৩২)। হবিবুর মীরগাঙ গ্রামের আজিজ মোল্যার ছেলে।
হাবিবুর বাঘের আক্রমনে নিহত হওয়ার পর চরম দুর্দশা নেমে এসেছে তার পরিবারে। স্বামীকে হরিয়ে হাবিবুরের স্ত্রী হাজেরা খাতুন শুধু বিধবা নয়। সে এখন বাঘবিধবা। তার স্বামীকে বাঘে খেয়েছে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে সে এখন অভিশপ্ত, অপয়া নারী!
হাজেরা জানান, স্বামী-শ্বাশুড়িসহ দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে তাদের পাঁচ সদস্যের সংসার। শ্বশুর অন্য ছেলের সংসারে থাকে। স্বামী হাবিবুরকে বাঘে খাওয়ার পর গত তিনদিনে চুলায় হাড়ি চড়েনি। আত্মীয় স্বজনদের দেয়া সহায়তায় দিন পার করছেন। চার জনের পরিবার নিয়ে তিনি কোথায় যাবেন। কি খাবেন তা ভাবতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, 'স্বামীকে বাঘে খেলে সমাজে স্ত্রীদের খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয়। আমার স্বামীকে তো বাঘে খেয়েছে, এখন আমরা খাবো কী?'
হাবিুবুরের পিতা আজিজ মোল্যা জানান, দুই ছেলেকে সাথে নিয়ে তিনি বন বিভাগ থেকে পাশ গ্রহণ করে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে যান। গত ১৪ এপ্রিল সকালে তিনি নৌকায় অবস্থান করছিলেন। বড় ছেলের সাথে ছোট ছেলে হাবিবুর মৌচাক খুঁজতে গহীন বনের ভিতরে প্রবেশ করে। সকাল ১০ টার দিকে হাবিবুর মধুর চাক দেখে তার বড় ভাইকে ডাক দেয়। এসময় হঠাৎ একটি বাঘ হাবিবুরের উপর হামলে পড়ে টেনে হিচড়ে বনের ভিতরে নিয়ে যায়। মিনিট দুয়েক পর বড় ভাই ঘটনাস্থলে এসে ছোট ভাই হাবিবুরকে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে থাকে। এসময় ১শ গজ দূরে একটি বাঘ ছোটভাইকে খুবলে খাচ্ছে দেখতে পায়ে ডাক চিৎকার করে লঠি নিয়ে বাঘের উপর পাল্টা আক্রমন করে হাবিবুরকে উদ্ধার করে নৌকায় নিয়ে আসে।
হাবিবুরের মা বলেন, তার ৩ ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে ১০ বছর বয়সে পানিতে ডুবে মারা যায়। বাকি দুই ছেলের মধ্যে মেজো ছেলে হাবিবুরের সংসারে তিনি থাকেন। হাবিবুরকে হারিয়ে পরিবারটি একেবারেই অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বড় ছেলে তার পিতাকে নিয়ে অন্য জায়গায় থাকে। পাঁচ জনের সংসারে হাবিবুরই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। হাবিবুরের দেড় বছরের একটি ও ছয় বছরের একটি মেয়ে সন্তান আছে। হাবিবুরের মেয়ে দুটির দায়িত্ব কে নেবে? কিভাবে মানুষ হবে তারা? এমন উত্তর না পাওয়া অনেক প্রশ্ন তাঁর।
এলাকাবাসীর নিকট জানা যায়, অভাব-অনাটনের কারনে পরিবারটি বনেও উপরই নির্ভরশীল। মানুষ তাদের বনজীবী হিসেবেও চিনে থাকে। নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে সঞ্চয় বলতে তাদের কিছু থাকে না। তারা আরো বলেন, একজন পরিশ্রমি ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি ছিল হাবিবুরের।
