ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দ্রুত মৃত্যুর ঘটনা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫১৭ বার


করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দ্রুত মৃত্যুর ঘটনা

অপরাধ ডেস্ক: করোনার প্রথম ঢেউয়ে যেখানে ৬ থেকে ৭ দিনে মারাত্মক আক্রান্তদের মৃত্যু ঘটত, সেখানে দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তদের মধ্যে দ্রুত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে মাত্র ৫ দিনের মধ্যেই। মূলত ভাইরাসের নতুন নতুন ভেরিয়েন্টের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানো, আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রুত চিকিৎসা না নেওয়া ইত্যাদি কারণে এবার দ্রুত মৃত্যু ঘটছে-এমন মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।

তারা বলছেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করতে পারলেই মৃতের সংখ্যা কমে আসবে। প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না পাওয়া এবং নানা ধরনের রোগে আক্রান্তদের মৃত্যু ঘটছে স্বল্প সময়ে। যা মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক।

সম্প্রতি করোনা মহামারির মৃত্যুর কারণগুলো পর্যালোচনা করে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআরও এক প্রতিবেদনে বলেছে, হাসপাতালের ভর্তির দিন থেকে ৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু ঘটছে ৪৮ শতাংশ মানুষের।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল মাসের সঙ্গে এ বছরের একই সময়ের তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর দেখিয়েছে, কোভিড উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ৫ দিনের মধ্যে ১০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তী ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৮ শতাংশ মানুষের; ১১ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৮ শতাংশ মানুষের; ১৬ থেকে ২০ দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৮ শতাংশ মানুষের এবং ২০ দিনের পরে মৃত্যু হয়েছে ২৬ শতাংশ মানুষের।

একইভাবে হাসপাতালে ভর্তির দিন থেকে মৃত্যুর হিসাবে দেখা গেছে, ভর্তির ৫ দিনের কম সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৮ শতাংশ মানুষের। পরবর্তী ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩২ শতাংশ মানুষের; ১১ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১২ শতাংশ মানুষের; ১৬ থেকে ২০ দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ শতাংশ মানুষের এবং হাসপাতালে ভর্তির ২০ দিন পরে মৃত্যু হয়েছে ৬ শতাংশ মানুষের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এনসিডিসি-অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, এ ধরনের গবেষণার তথ্যগুলো আরও পরিষ্কার হওয়া উচিত। দ্রুত মৃত্যুর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, শরীরে উপসর্গ দেখা দিলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। কারণ অনেক রোগীরই অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ায় সেটি দেওয়া সম্ভব হয় না।

ফলে অক্সিজেনের ঘাটতিজনিত কারণে তাদের মৃত্যু ঘটে। এছাড়া অনেকের ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ হয়। এমনকি ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমণ ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে দ্রুতই রোগীর মৃত্যু হয়।

পাশাপাশি ভাইরাসটির নতুন নতুন ভেরিয়েন্টের সংক্রমণের কারণেও মৃত্যু হয়ে থাকে। তিনি বলেন, গত বছরেও আমরা দেখেছি মারাত্মকভাবে যারা আক্রান্ত হন বা যাদের শরীরে দ্রুত সংক্রমণ ঘটে ৬ থেকে ৭ দিনের মধ্যে তাদের মৃত্যু ঘটে। এবার এক থেকে দুদিন কমে ৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু ঘটছে।

বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের স্বজনরা জানান, করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হলে এবং তৎক্ষণাৎ মারাত্মক অসুস্থ না হলে চিকিৎসকরা ঘরে বসে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেন। এমনকি রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকলে অনেক হাসপাতাল ঘুরেও শয্যা পাওয়া যায় না।

শয্যা পেলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু হতে সময় লাগে। যাদের আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) প্রয়োজন হয় তাদের জন্য আইসিইউ পাওয়া যায় না। ফলে রোগীদের মৃত্যু ঘটে।

সম্প্রতি সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে লাবণ্য নামের এক সংবাদকর্মীর মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তিনি জানান, তার মায়ের কোভিড পজিটিভ হওয়ার পর অনেক হাসপাতাল ঘুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করতে সমর্থ হন। কিন্তু ভর্তির পর দ্রুত তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে চিকিৎসকরা আইসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তৎক্ষণাৎ আইসিইউ না পাওয়ায় তার মায়ের মৃত্যু হয়।


   আরও সংবাদ