ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬১১ বার
নিম্নমানের গম আমদানি করতে ‘স্পেসিফিকেশন’ (বিনির্দেশ) পরিবর্তন করতে যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বিনির্দেশে প্রোটিনের মাত্রা সাড়ে ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট। এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। কমিটি প্রস্তাবে সায় দিলে নিম্নমানের পচা গম আমদানির আয়োজন চূড়ান্ত হবে।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের আগে সাড়ে ১০ শতাংশ প্রোটিনের গমই কেনা হতো। সেই সুযোগে ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম আসে, যা পশু খাদ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের আমদানি করা গম দিয়েই সাধারণত পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ সরকারি সব ধরনের রেশন দেওয়া হয়। পুলিশই প্রথম ২০১৭ সালে ব্রাজিলের পচা গমের বিষয়ে আপত্তি দিয়েছিল। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে গমের বিনির্দেশ বাড়িয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ করা হয়।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে আগামীকাল এফপিএমসির বৈঠকে হবে। এতে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন।
জানতে চাইলে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘গমের বিদ্যমান বিনির্দেশে প্রোটিনের মাত্রা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে পুষ্টিবিজ্ঞান পরিষদ ও বাংলাদেশ গম গবেষণা ইনস্টিটিউট। তাদের প্রস্তাব এফপিএমসির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে।’
এদিকে চলতি আমন মৌসুমে দুই লাখ টন ধান ও সাড়ে ছয় লাখ টন চাল সংগ্রহের টার্গেট ছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। ১৫ মার্চ সংগ্রহের সময়সীমা শেষ হলেও সারাদেশে ধান-চাল মিলে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮৭ হাজার ৩৪১ টন, যা চাল আকারে পাওয়া যাবে ৮৩ হাজার ২০২ টন।
সরকারি গুদামে আপৎকালীন মজুত কমবেশি ১০ লাখ টন থাকার কথা থাকলেও আছে ৪ লাখ ৮৮ হাজার টন। ১২ এপ্রিলের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে মজুতের পরিমাণ ছিল চাল ৩ লাখ ৭১ হাজার টন ও গম ১ লাখ ১০ হাজার টন। এটা নিরাপদ খাদ্য মজুতের অর্ধেকেরও কম। গত বছর এই সময়ে মজুত ছিল ১৪ লাখ ৯৩ হাজার টন। বাজার মূল্যের চেয়ে সংগ্রহ মূল্য কম থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মজুত বাড়াতে চাল-গম দুটোই আমদানি করতে হচ্ছে সরকারকে।
চালের মতো টাকা দিয়েও গম আমদানি করতে পারছে না সরকার। গত বছরের শেষ দিকে রাশিয়া থেকে দুই লাখ টন গম আনার সিদ্ধান্ত হয়। জি-টু-জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে গম কেনার এই প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছিল সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রতি টন ২৫৮ মার্কিন ডলারে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হলেও শেষ পর্যন্ত রাশিয়া ওই দামে বাংলাদেশকে গম দেয়নি। পরে ওই চুক্তি বাতিল করে প্রতিটন ৩৫৯ ডলারে পরে নতুন চুক্তি করে এক লাখ টন গম দেয় রাশিয়া।
এ ছাড়া প্রায় সমমূল্যে আর্জেন্টিনা থেকে দেড় লাখ টন গম আনার প্রক্রিয়া চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বিদ্যমান গমে প্রোটিনের পরিমাণ সাড়ে ১২ শতাংশ থাকায় গম কেনার আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করলেও পার্টিসিপেন্টকারী প্রতিষ্ঠান বা দেশ পাওয়া যায় না। সাড়ে ১২ শতাংশ প্রোটিনের গম উৎপন্ন হয় কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, নিউজিল্যান্ড ও রাশিয়ায়। এ যাবত রাশিয়া এবং আর্জিন্টিনা গমের দরপত্রে অংশগ্রহণ করলেও অন্যান্য দেশ অংশগ্রহণ করেনি।
ভারত ও পাকিস্তান এসব দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে না। কারণ তাদের গমের প্রোটিনের পরিমাণ সাড়ে ১১ শতাংশ পর্যন্ত হয়।
এ কারণে সম্প্রতি কিছু গম সরবরাহকারী ব্যবসায়ী গ্রুপ নানাভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে গমের বিনির্দেশে প্রোটিনের পরিমাণ কমানোর পরামর্শ দেয়। সরবরাহকারীরা তাদের লাভের আশায় কম প্রেটিনের গম আমদানি করাতে চাচ্ছে। তবে তারা নিজেরা না করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পুষ্টিবিজ্ঞান পরিষদ ও বাংলাদেশ গম গবেষণা ইনস্টিটিউট গমের প্রোটিনের পরিমাণ আরও কমানোর প্রস্তাব করে চিঠি দেয়।
তারা এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের সঙ্গে বৈঠকও করে। তবে এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মতামত চাওয়া হলে খাদ্য অধিদপ্তর নেতিবাচক মত দেয়। তারপরও এফপিএমসির বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয় গমের বিনির্দেশে প্রোটিনের পরিমাণ কমানোর প্রস্তাব। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মতামত চাওয়া হয়েছে, যা বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।