ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

‘তামাক-কর বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরী’

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭০৫ বার


‘তামাক-কর বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরী’

অপরাধ ডেস্ক: তামাক পণ্যে কর আরোপের পাশাপাশি এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরী বলে মন্তব্য করেছেন আইন প্রণেতা ও বিশিষ্টজনেরা। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর আয়োজিত করোনা সংলাপের ২৩ তম পর্বে এ মন্তব্য করেন অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত, এমপি, অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ, এমপি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সঞ্চালনায় ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২০২২ তামাকপণ্যে করারোপ ঃ আমাদের ভাবনা’ শীর্ষক এই লাইভ আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয় ২৪ এপ্রিল সকাল ১১টায়।

এ সময় অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত, এমপি বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্যদের দ্বারা গঠিত ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং’ ফোরাম থেকে ইতিমধ্যে ৫৩ জন সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী, অর্থ সচিব, এনবিআর এর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদেরকে তামাকের কর বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া ১৫২ জন সংসদ সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তামাক আইন সংশোধনের জন্য এবং ১৫৩ জন সংসদ সদস্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ই-সিগারেট নিষিদ্ধের জন্য চিঠি দিয়েছেন। সুতরাং, জনপ্রতিনিধিরাও কিন্তু দেশকে তামাকমুক্ত করার কাজে যথেষ্ট ভূমিকা রেখে চলেছেন। তবে সাধারণ মানুষদেরকেও তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ, এমপি বলেন, ২০২১-২২ অর্থ বছরে সুপারিশ অনুযায়ী বিদ্যমান কর ব্যবস্থা সংস্কার করলে ব্যবহার কমবে, জীবন বাঁচবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে। এছাড়া  সিগারেটের ব্যবহার প্রতি বছর ১% হারে কমবে। প্রায় ১১ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে এবং ৮ লক্ষাধিক তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে; দীর্ঘমেয়াদে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার বর্তমান ধূমপায়ী এবং ৪ লাখ তরুণের অকাল মৃত্যুরোধ করা সম্ভব হবে, ২০২০-২১ অর্থ বছরের চেয়ে সম্পূরক শুল্ক, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ এবং ভ্যাট বাবদ ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। এই পরিসংখ্যানগুলো অবশ্যই আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক। আর এজন্য সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে আমি সচেষ্ট হবো।

 
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, এনবিআর কেবল কর বাড়ালেই জনগণের মধ্যে তামাকের ব্যবহার কমানো যাবে বলে আমি মনে করি। বরং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করাটাও জরুরী। আবার তামাকের কর বাড়ালেও অনেক সময় দেখা যায় তামাক কোম্পানী কর ফাঁকি দেয়। এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়। তাই কেবল কর বৃদ্ধি করাই নয়, বরং সেই কর যথাযথ ভাবে তামাক কোম্পানীগুলো দিচ্ছে কিনা সেটিও দেখার দরকার আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, আমরা সবাই তামাকের ক্ষতির দিকগুলো সম্পর্কে জানি। এটি কেবল ব্যক্তির স্বাস্থ্যগত ক্ষতিই করে না, বরং এটি অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ক্ষতিরও কারণ। তামাকের কর বাড়ানো প্রসঙ্গে এফসিটিসিতে বলা আছে, যথাযথ কর আরোপ করে তামাক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া।

এর আলোকে বলা যায়, তামাকের দাম বাড়ালে ভোক্তার কাছে যেমন এর চাহিদা কমে তেমনি সরকারও অধিক রাজস্ব পায়। আমাদের দেশে অবশ্য বিভিন্ন তামাকজাত পণ্যের দাম বিভিন্ন। এটি আসলে একটি কমপ্লেক্স সিস্টেম। এই কর কাঠামোকে সহজ করতে হবে। এতেই কেবল তামাক-কর বৃদ্ধি করলে তা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। আলোচনায় অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত, এমপি আরো বলেন, তামাকের কোন ভালো দিক নেই। বরং একজন মানুষের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সব কয়টি অঙ্গের ক্ষতি করে তামাক ও তামাকজাত পণ্য। মহিলারা যদি ধূমপায়ী হন তাহলে তার গর্ভের সন্তান মারাত্মক ক্ষতির শিকার হতে পারেন।

বলা হয়, তামাক কোম্পানীগুলো থেকে সরকার বছরে ২২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পায়। অথচ বছরে তামাকের স্বাস্থ্য ক্ষতিই হয় ৩০ হাজার কোটি টাকার উপরে। চলতি বছরের স্বাস্থ্য খাতের বাজেটই ২৯ হাজার কোটি টাকা। তাহলে দেখা যাচ্ছে, তামাকের কারণে ক্ষতির পরিমাণ স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের চেয়েও বেশি। আরেকটি বিষয় হলো, ২০১৩ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির সংশোধন খুবই জরুরী। কেননা আমি মনে করি, তামাক নিয়ন্ত্রণে জোড়ালো আইন প্রণয়ন ও বিদ্যমান তামাক-কর কাঠামোর সংস্কারই পারে দেশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত করতে।

অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ, এমপি তামাকের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের দেশে অনেক সময়ই দেখা যায় কৃষক গাভীর দুধ বিক্রি করে বিড়ি খাচ্ছে। আবার দেখা যায় যেখানে ধূমপান নিষিদ্ধ লেখা সেখানেই মানুষ ধূমপান করে। মূলত সচেতনতার অভাবেই মানুষ এমনটি করে। এজন্য ধূমপানের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষত ধূমপানের স্বাস্থ্য ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে। এজন্য ধূমপানের ব্যবহার হ্রাস করতে ধূমপান বা বিড়ি-সিগারেটের উপর ট্যাক্স বাড়ানোর আমি পক্ষে।


   আরও সংবাদ