ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৬৩ বার
অর্থনীতি ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ বাড়ার মধ্যেই পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি করে অর্থ পাঠাচ্ছেন দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। বিদায়ী এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা প্রায় ২০৭ কোটি ডলার পাঠিয়েছে। একক মাস হিসাবে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এ নিয়ে চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২ হাজার ৬৭ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি। এটি নতুন রেকর্ড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে এপ্রিলে প্রবাসীরা আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। ঈদের কারণে চলতি মে মাসে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বাড়বে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরেও এই সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। নগদ প্রণোদনার জাদুতেই করোনার মধ্যেও রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতি ধারা বজায় রয়েছে বলে তারা জানান। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই প্রবাসী আয়ের ঊর্ধ্বগতি ধারা বজায় রয়েছে। এর অন্যতম কারণ সরকারের ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা।
এছাড়া প্রতিবছর রোজা ও ঈদ উপলক্ষ্যে প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের কাছে একটু বেশি অর্থ পাঠান। করোনা সংক্রমণ বাড়লেও এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিলে ২০৬ কোটি ৭১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের এপ্রিলে এসেছিল মাত্র ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার। আর গত মার্চে রেমিট্যান্স আসে ১৯১ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি ডলার ও জানুয়ারিতে ১৯৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার আসে।
অর্থাৎ টানা তিন মাস পর এপ্রিলে প্রবাসী আয় আবার ২০০ কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করল। সব মিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আর গত অর্থবছরের পুরো সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে ২০৫ কোটি ৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এছাড়া গত নভেম্বরে আসে ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। অক্টোবরে আসে ২১০ কোটি ২১ লাখ ডলার। এছাড়া সেপ্টেম্বরে একক মাস হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। আর জুলাইতে একক মাস হিসাবে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে। ওই মাসে প্রবাসী আয় আসে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার।
২০২০ সালেও রেমিট্যান্স আহরণে অনন্য রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। গত বছরে দেশে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ (২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। এর আগে এক বছরে দেশে এত রেমিট্যান্স আর কখনও আসেনি। এটি তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩৪০ কোটি ৯৬ লাখ ডলার বা ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।
রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথমবার রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। মাঝে কিছুটা কমার পর আবার বেড়ে এখন ৪৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রয়েছে। গতকাল দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। চলতি সপ্তাহে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।