ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

থেমে নেই পদ্মা রেল সেতুর কাজের গতি

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৮৭ বার


থেমে নেই পদ্মা রেল সেতুর কাজের গতি

জাতীয় ডেস্ক: ঠুকঠাক, দুরুমদারুম—এ রকম নানা শব্দ আসছে কানে। করোনায়ও একটানা চলছে পদ্মা সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ। যেমন গরমে কড়া রোদের মধ্যে, তেমনি রাতেও ঝরছে শ্রমিকের ঘাম। মেশিন চলছে, সঙ্গে মানুষের শ্রম। ব্যস্ত কারখানাপাড়া। ২৪ ঘণ্টা সরব সেতুসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আর এতেই একটু একটু করে জোড়া লাগছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর রেলের ভিতগুলো। গত সোমবারই রেল সেতুর সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া প্রান্তে মূল সেতুর সঙ্গে যুক্ত হলো রেল সংযোগ সেতু।

কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ থানার পানগাঁওয়ের কারখানায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা সবাই ব্যস্ত। যে যার কাজ করে যাচ্ছে। আর দিন শেষে দৃশ্যমান হচ্ছে দেশের অন্যতম বড় প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রকল্পের অগ্রগতি। ২১ কিলোমিটার এলিভেটেড অংশের পাইলের কাজ প্রায় শেষের পথে। পদ্মা সেতুর সঙ্গেই উদ্বোধন করা হবে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের রেলপথ। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৪১.৫০ শতাংশ আর আর্থিক অগ্রগতি ৪২.৯০ শতাংশ।

চলমান কাজের অবস্থা জানাতে গিয়ে কেরানীগঞ্জ এলাকার ব্রিজ ও ভায়াডাক্ট ইনচার্জ আমিনুল করিম বলেন, ‘দুটি কাস্টিং ইয়ার্ডে কাজ হচ্ছে। একটা এখানে, আরেকটা মাওয়ায়। তিন হাজার ৬০০ কাস্টিং হয়ে গেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন আটটা ইয়ার্ড বের হতো, এখন সেখানে কমপক্ষে ১২টা ইয়ার্ড বের হয়। আমাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার একটা চাপ আছে। করোনায় তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আশা করছি, এই বছরের মধ্যে সব সেগমেন্ট শেষ করতে পারব।’

কারখানার কাজ শেষে ইয়ার্ডগুলো স্থাপন করার গতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনটা ভাগে এগুলো স্থাপনের কাজ চলছে। প্রায় তিন কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। আবার স্টেশন ইয়ার্ডগুলোতে আলাদাভাবে কাজ চলছে। সেখানে চারটা লাইন আছে। ওখানে সবচেয়ে বেশি সেগমেন্ট দরকার। আগামী মাস থেকে ওখানে কাজের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেওয়া হবে, যেন আগামী বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যায়।

পদ্মা সেতুর ১৬৯ কিলোমিটার মেইন রেললাইনের সঙ্গে লুপ ও সাইডিং রয়েছে ৪৩.২২ কিলোমিটার। আর ডাবল লাইন তিন কিলোমিটারসহ মোট ২১৫.২২ রেল ট্র্যাক নির্মিত হচ্ছে পদ্মার বুকে। এই পুরো রেল সেতুর মধ্যে থাকছে ২৩.৩৭৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ১.৯৮ কিলোমিটার র‌্যাম্পস, ৬৬টি মেজর ব্রিজ, ২৪৪টি মাইনর ব্রিজ কালভার্ট আন্ডারপাস, একটি হাইওয়ে ওভারপাস, ২৯টি লেভেলক্রসিং। চলছে ১৪টি নতুন স্টেশন নির্মাণ এবং ছয়টি বিদ্যমান স্টেশনের উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ। সঙ্গে ২০টি স্টেশনে টেলিযোগাযোগসহ সিবিআই সিস্টেম সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপনা এবং দুই হাজার ৪২৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কারখানা থেকে বেরিয়ে ইয়ার্ডগুলো পৌঁছে যাচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। এলাকা ভাগ করে নির্মাণ শ্রমিকরা যে যাঁর কাজ করে যাচ্ছেন। রোদ বৃষ্টি করোনা কোনো কিছুই যেন তাঁদের কাজের বাধা হচ্ছে না। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার একসঙ্গে কাজ চলছে। কোথাও স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে তো, কোথাও পাইল বসানোর কাজ চলছে। আবার কোনো কোনো জায়গায় চলছে ব্রিজ নির্মাণ। এমনকি টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেমের কাজও চলছে সমান তালে। 

মাওয়া প্রান্তে কথা হয় পদ্মা রেল সেতু প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার (২) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এম মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘করোনায় এখানে সমস্যা না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, এখানে এমনিতেই মানুষ কম। আর যারা নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের তো একটা নিয়মের মধ্যে থাকতেই হয়। ফলে আমাদের সমস্যা হচ্ছে না। কাজের গতিও বেশ ভালো। মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন পদ্মা সেতুর সঙ্গেই হয়ে যাবে। বাকিটাও ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের কাজের অগ্রগতি ৬৬ শতাংশ, যার মধ্যে প্রিকাস্ট বক্সগার্ডার সেগমেন্ট বসানোর কাজ শেষ। আর মেজর ব্রিজ, ভায়াডাক্ট ৩-এর পিয়ার ও এমব্যাংকমেন্ট, স্প্যান বসানো, কালভার্ট ও আন্ডারপাসের কাজ প্রায় শেষের পথে। তবে এমব্যাংকমেন্টের কাজ অনেকটা বাকি আছে। এদিকে ঢাকা-মাওয়া অংশের কাজের অগ্রগতি ৩৬ শতাংশ আর ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের নির্মাণকাজের অগ্রগতি ২৫ শতাংশ।     

এদিকে গত সোমবার ভায়াডাক্ট ২-এর সঙ্গে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টের সংযোগকারী স্প্যানটি বসানো হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে ২.৫৮৯ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ২-এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের নভেম্বরে। প্রায় এক বছর পাঁচ মাসে ভায়াডাক্টের মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজের অগ্রগতি প্রায় ৯৬ শতাংশ। অন্যদিকে জাজিরা প্রান্তে ৪.৩১ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ৩-এর নির্মাণকাজের মধ্যে মূল অবকাঠামোর অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।

রেলপথ মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছরের মধ্যেই রেল সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের সঙ্গে মূল সেতুর সংযোগ হবে। সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করে রেলপথ নির্মাণের জন্য অনুমতি দিলেই সেতুতে ব্যালাস্টলেস রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। বাকি ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। বাকি অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক তালিকাভুক্ত করা হয়।

তিন ভাগে বিভক্ত প্রকল্পের কাজ হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া, মাওয়া-ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা-যশোর সেকশনে। এর মধ্যে ঢাকা-মাওয়া ও ভাঙ্গা-যশোরের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২৩ সাল। আর মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশনের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সাল। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি) কাজ করছে।


   আরও সংবাদ