ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৮৯ বার
আইন আদালত: মামলা করার পর শুনানি না করে এবং আদেশের সময় অনুপস্থিতি থেকে আদালতের সময় নষ্ট করায় আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। মহামারি সামাল দিতে সরকারের বিধিনিষেধ জারির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ইউনুছ আলী আকন্দ এই রিট মামলা করেছিলেন গত মাসের শেষদিকে।
কিন্তু এরপর তার আর পাত্তা না থাকায় বুধবার ওই রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ। সেই সঙ্গে ‘খরচ বাবদ’ আদালত ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন সুপ্রিমকোর্টের এই আইনজীবীকে।
গত ২৫ এপ্রিল দায়ের করা এই রিট মামলায় ইউনুছ আলী আকন্দ দাবি করেন, জরুরি অবস্থা জারি করা ছাড়া লকডাউন দেওয়ার সুযোগ নেই। চলমান লকডাউনের ওপর স্থগিতাদেশ এবং আর যাতে তা দেওয়া না হয়, সেজন্য নির্দেশনা চেয়েছিলেন তিনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটিকে বিবাদী করা হয়েছিল তার ওই রিট আবেদনে।
গত ২৭ এপ্রিল রিট আবেদনটি উপস্থাপন করলে তা কার্যতালিকায় ওঠে। আদালত কার্যতালিকার ক্রমানুসারে গত রোববার ইউনুছ আলী আকন্দকে ডাকেন। সেদিনও তিনি ছিলেন না। তখন আদালত মামলাটির শুনানি না করে গত মঙ্গলবার আদেশের জন্য রাখেন। কিন্তু মঙ্গলবারও কার্যতালিকা ধরে ডেকে ইউনুছ আলী আকন্দকে পায়নি আদালত। মামলাটি বুধবার কার্যতালিকার প্রথমেই ছিল। এদিনও কয়েকবার ডেকে রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দের সাড়া পাচ্ছিল না আদালত।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এম ইনায়েতুর রহিম তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খানের কাছে পরামর্শ চান যে, শুনানি বা আদেশের সময় আদালতে আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় মামলা খারিজের সঙ্গে খরচ বাবদ জরিমানা করা যায় কিনা। জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার এবং আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, জনস্বার্থের মামলায় এ রকম হলে খরচ বাবদ জরিমানা করা যায়।
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম তখন বলেন, ‘এই আবেদন (লকডাউন চ্যালেঞ্জ করা রিট) দিয়ে চার দিন-পাঁচ দিন (তিনি) নাই। লকডাউন চ্যালেঞ্জ করে মাঝে মাঝে উঁকি দেন, আর মামলা ধরলে থাকেন না। প্রতিদিনই এ কাজ করেন। ঠিক আছে, ডিসমিস ফর ডিফল্ট কস্ট অব টাকা টেন থাউসেন্ড।’ একজন আইনজীবী খরচ বাবদ জরিমানার ১০ হাজার টাকা মাফ করে দেওয়ার আর্জি জানান।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম তখন বলেন, ‘কেন মাফ করব? কোর্টকাছারি নিয়ে ফাজলামো নাকি? লকডাউনের মধ্যে একটা মামলা করেছেন, উনাকে একদিনও পাওয়া যায় না। উনি মামলা করে মিডিয়ায় আগে বলে দেন যে মামলা ফাইল করা হয়েছে। পাঁচ-ছয় দিন ধরে মামলা লিস্টে, উনি আসেন না। কী ধরনের কথা! লিস্টে দিয়ে উনি পেপার পত্রিকায় নিউজ দেবেন!’
আদেশের পর যোগাযোগ করা হলে আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘আমি জুমে সংযোগ পাই নাই। মিডিয়ার মাধ্যমেই শুনলাম ১০ হাজার টাকা ফাইন ফর ডিফল্ট। আমি যে মোশনটা ফাইল করেছিলাম, সেটা প্রথম এবং দ্বিতীয় লকডাউন চ্যালেঞ্জ করে। কিন্তু এই মামলার শুনানি হতে হতে আরও দুবার লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। সেগুলো আমি চ্যালেঞ্জ করিনি। ফলে এই রিটটা এমনিতেই অকার্যকর হয়ে গেছে।’
শাস্তির বিষয়ে ইউনুছ বলেন, ‘মোশন মামলা ডিফল্ট ফর ডিসমিস (আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় খারিজ) হতে পারে। কিন্তু কস্ট (খরচ বাবদ জরিমানা) দেওয়ার কোনো বিধান নেই। এ রকম কোনো নজির নেই।’ বিচার বিভাগ নিয়ে ফেসবুকে কিছু মন্তব্যের কারণে গত বছর অক্টোবরে আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দকে গুরুতর আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছিল সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।