ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৩৫ বার
অর্থনীতি ডেস্ক: করোনা সংক্রমণ রোধে বন্ধ থাকা ট্রেন লোকসান বাড়িয়েছে। গত ১৪ মাসে এ খাতে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। চার মাস পুরোপুরি যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ থাকায় প্রায় ৭শ কোটি টাকা রাজস্ব হারাতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ দেড় মাসের বেশি সময় পর সীমিত আকারে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হচ্ছে। ২৮ জোড়া (৫৬টি) আন্তঃনগর ও ৯ জোড়া মেল ও কমিউটার ট্রেন দিয়ে চলাচল শুরু হবে। অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে টিকিট বিক্রি করা হবে। যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন রোববার দুপুরে জানান, গত ১৪ মাস ধরে রেলে করোনার থাবা পড়ছে। প্রায় ৪ মাস ট্রেন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। বাকি সময় কিছু কিছু ট্রেন ৫০ শতাংশ সিট ফাঁকা রেখে চালানো হয়েছে। মাসে প্রায় পৌনে ২শ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে আজ ট্রেনে যাত্রী পরিবহণ শুরু হবে। কোনো অবস্থাতেই মাস্ক ছাড়া যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ট্রেন বন্ধ থাকায় এবং নির্ধারিত যাত্রী নিয়ে কিছু ট্রেন চলাচল করায় করোনাকালে প্রায় এক হাজার ৫শ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে রেল। বিভিন্ন সময় ৫০ শতাংশ আসন নিয়ে ট্রেন চলাচল করলেও অধিকাংশ ট্রেনেই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ (৫০ শতাংশ আসন থেকে) সিট ফাঁকা ছিল। তাছাড়া স্বাভাবিক সময়ে ১০৪টি আন্তঃনগর এবং ২৫৪টি মেল, কমিউটার ও লোকালসহ মোট ৩৫৮টি ট্রেনে সিটবিহীন টিকিট বিক্রি হতো ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। করোনাকালে চলা কোনো ট্রেনেই সিটবিহীন টিকিট বিক্রি হয়নি। প্লাটফর্ম প্রবেশ টিকিট থেকেই আয় আসত, যা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রেলে বর্তমানে প্রায় ৭৭ শতাংশ ইঞ্জিন এবং প্রায় ৭০ শতাংশ বগি মেয়াদোর্ত্তীণ-আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। এসব ইঞ্জিন কোচ যখন মাসের পর মাস বসিয়ে রাখা হচ্ছে, তখন সেগুলোর যথাযথ মেরামতও হচ্ছে না। ফলে এসব ইঞ্জিন-বগি দ্বারা ট্রেন চালানো আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। একইসঙ্গে ট্রেন বন্ধ থাকায় বিশেষ করে ইঞ্জিন ও কোচের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ইঞ্জিন-কোচ বসিয়ে রাখা হলে কার্যকারিতা নষ্ট হয়। অকেজো হয়ে পড়ে বিশেষ যন্ত্রাংশও।
রেলওয়ে বাণিজ্যিক দফতর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথে মালবাহী ট্রেন করোনার সময়গুলোতেও চলাচল করছে। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে সপ্তাহে ৬ থেকে ১০টি ট্রেন চলাচল করলেও-করোনাকালে সপ্তাহে ২ থেকে ৩টি চলাচল করছে। তবে ভারত থেকে আসা মালবাহী ট্রেন থেকে আয় বাড়ছে। প্রতি মাসে প্রায় ২৭ কোটি টাকা আয় হচ্ছে শুধু বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে মালবাহী ট্রেন চলাচল থেকে। ভারতের সঙ্গে চলাচলকারী যাত্রীবাহী দুটি ট্রেন গত বছরের ২৪ মার্চ থেকে চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব ট্রেনের আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশই বাংলাদেশ পেত। রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী জানান, করোনাকালে ট্রেন বন্ধ থাকায় এবং কিছু ট্রেন ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচল করায় লোকসানের পাল্লা ভারী হয়েছে। এখন আবারও ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলবে। এখানে লোকসান গুনতে হবে, তবে যাত্রীদের কল্যাণে আমরা ট্রেন চালাচ্ছি। এখানে লাভ-লোকসান দেখা হচ্ছে না। রেলপথ সচিব মো. সেলিম রেজা জানান, শুরুতে ৩৭ জোড়া ট্রেন চালানো হচ্ছে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। শুধু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নয়, যাত্রীদেরই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। স্টেশন ও ট্রেনে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরতে হবে। মাস্কবিহীন কোনো যাত্রীকে স্টেশনে প্রবেশ এবং ট্রেনে উঠতে দেওয়া হবে না।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আজ থেকে আন্তঃনগর ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলী, মহানগর প্রভাতি, যমুনা এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, মেঘনা এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস, তিতুমীর এক্সপ্রেস, সাগরদাড়ী এক্সপ্রেস, ঢালারচর এক্সপ্রেস, টঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস চলাচল করবে। এছাড়া মেল ও কমিউটার ট্রেনগুলো মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী, সাগরিকা, বলাকা, জামালপুর, ঢাকা, রকেট, মহানন্দা, পদ্মরাগ ও উত্তরা কমিউটার। মেল ও কমিউটার ট্রেনের টিকিট বিভিন্ন কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে।