ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৮০ বার
অর্থনীতি ডেস্ক: চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বাড়ানো ও মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য খালাস রোধে ৪টি অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার বসাতে কার্যক্রম শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৬৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৩টি ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার ক্রয় ও প্রতিস্থাপন প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে ৬টি স্ক্যানার মেশিন বসানো হবে। যার ৪টি স্ক্যানারই বসবে চট্টগ্রাম বন্দরে। অন্য দুটির মধ্যে বেনাপোল এবং ভোমরা স্থলবন্দরে একটি করে স্ক্যানার স্থাপন করা হবে।
আধুনিক প্রযুক্তির স্ক্যানারগুলো এক্স-রে বা গামা-রশ্মি ইমেজিং প্রক্রিয়ায় কনটেইনার খোলা ছাড়াই এর ভেতরের রঙ্গিন ছবি তুলতে পারবে। এসব মেশিনে স্ক্যানার ছাড়াও কনটেইনারের ওজন পরিমাপ, রেডিও পোর্টাল মনিটর এবং ইমেজিং সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। নতুন স্ক্যানারগুলো ‘বোথ ওয়ে’ স্ক্যান ডিরেকশনে স্ক্যানিং করতে সক্ষম। অর্থাৎ আমদানি ও রপ্তানি উভয় কনটেইনার স্ক্যানিং করা যাবে এই মেশিনগুলো দিয়ে। ইতিমধ্যে নতুন এই ৬টি স্ক্যানার সংগ্রহ, প্রতিস্থাপন ও রক্ষনাবেক্ষণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দরপত্র আহ্বান করেছে।
একাজে পারদর্শী সংস্থাগুলোকে সাইট ভিজিট করে পর্যাপ্ত ধারণা নিয়ে ও আধুনিক মেশিনগুলোর সক্ষমতা সঠিকভাবে যাচাইয়ের পর দরপত্র জমাদানে উৎসাহী করছে এনবিআর। ডিসেম্বরের মধ্যে যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাছাই করে তাদের কার্যাদেশ দেওয়া ও আগামী বছরের মাঝামাঝি স্ক্যানার মেশিনগুলো স্থাপন করে চালু করা যাবে বলে জানিয়েছে এনবিআর সূত্র।
প্রথম ধাপে এই ৬টি কনটেইনার স্ক্যানার সফলভাবে প্রতিস্থাপন ও চালুর পর দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ৭টি কনটেইনার স্ক্যানার ক্রয়ের কথা জানিয়েছে এনবিআর। সেই ৭টি থেকেও বেশ কয়েটি চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে বলেও জানিয়েছে এনবিআর’র ওই সূত্র।
সরকার, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটের ‘অর্থ আইন-২০১৯’ এ বোঝাই পণ্য কনটেইনার বাধ্যতামূলক বৈদ্যুতিক স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনার বিধান চালু করে। বিধান অনুযায়ী সরকারি আদেশে অব্যাহতি ব্যতিরেকে কোনও চালানকে বৈদ্যুতিক স্ক্যান ছাড়া কোনও শুল্ক বন্দর বা শুল্ক স্টেশন থেকে ছাড়ানো যাবে না। বৈদুতিক স্ক্যানিং সিস্টেমের অভাবে শারীরিক পরীক্ষা করে চালান খালাসের বিধানও রাখা হয়েছে। অপ্রতুল স্ক্যানার মেশিনের কারণে এখনো সারা দেশের কাস্টম হাউসগুলো আমদানি করা চালানের ১০-১৫ শতাংশ কায়িকভাবে পরীক্ষা করে।
এদিকে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি গেটে স্ক্যানার আছে ৭টি। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ১ নম্বর গেট এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ৩ নম্বর গেটে আছে ‘এফএস ৬০০০’ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ২, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে আছে একটি করে ‘এফএস ৩০০০’ মডেলের ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। এছাড়া সিসিটি ২ ও জিসিবি ২ নম্বর গেটে রয়েছে একটি করে মোবাইল স্ক্যানার। তবে পুরোনো কয়েকটি স্ক্যানার মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে গিয়ে স্ক্যানিং কাজে ব্যঘাত ঘটায়।
নতুন স্ক্যানার মেশিন প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার ফখরুল আলম জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে চোরাচালান রোধে স্ক্যানার মেশিন বাড়ানো দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। চাহিদার প্রেক্ষিতে এখন ধাপে ধাপে নতুন নতুন আধুনিক স্ক্যানার মেশিন বসানো হচ্ছে।
নতুন আধুনিক কনটেইনার স্ক্যানারগুলোতে জৈব, অজৈব, ধাতব, প্লাস্টিক, বিভিন্ন পণ্যের রঙিন স্ক্যান ইমেজ (ছবি) পাওয়া যাবে। তাই স্ক্যান করা কনটেইনারের পণ্যের পার্থক্য নিরূপণ ও সঠিকতা যাচাই সহজ ও দ্রুততর হবে। এছাড়া নতুন স্ক্যানারগুলো শুল্কফাঁকি, চোরাচালান, মিথ্যা ঘোষণা রোধ, ঝুঁকিমুক্ত আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন স্ক্যানার মেশিন স্থাপনের খবরটি সত্যি আনন্দের বিষয়। আধুনিক স্ক্যানিং মেশিন হচ্ছে কায়িক পরীক্ষার বিকল্প। কারণ সঠিক স্ক্যানিংয়ে ডিজিটাল ইমেজে একটি কনটেইনারের ভেতরে কী আছে সব নিখুঁতভাবে ফুটে ওঠে। বন্দরের সব গেটে যদি স্ক্যানার বসে যায় তাহলে ব্যবসায়ীদের পণ্য বা কনটেইনার খালাস নিতে সময় কমবে, কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমবে, দেশ ও বন্দরের ভাবমূর্তি বাড়বে।