ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৯৮ বার
অর্থনীতি ডেস্ক: বিশ্বের নানা দেশে থাকা এক কোটিরও বেশি প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্সের অর্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৫ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের মে মাসে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার বা সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের মে মাসে এর পরিমাণ ছিল ১৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে এক মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে ৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রথম এগার মাসে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ের ১১ মাসে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৩৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে ১১ মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে ৬৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ৩৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
দেশের রেমিটেন্স প্রবাহের ইতিহাসে এক বছরের ব্যবধানে এত প্রবৃদ্ধির রেকর্ড নেই। রেমিটেন্স প্রবাহের জোরালো অবস্থায় সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। প্রবাসীদের অনেকে তাদের সমুদয় বিনিয়োগ নিয়ে দেশে ফিরে আসছেন কিনা তা নিয়েই তাদের প্রশ্ন। এটা হলে ভবিষ্যতে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহে সংকট সৃষ্টি হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে পৃথিবী অনেকটা থমকে গেলেও দেশের এক কোটিরও বেশি প্রবাসী নিয়মিত রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। প্রতি মাসে বাড়ছে রেমিটেন্সের পরিমাণ। গতকাল প্রকাশ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে মে মাসে দেশে ২১৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স আসার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এক মাসে এত বিশাল অংকের রেমিটেন্স আসা একটি রেকর্ড। যা আগের বছরের মে মাসের রেমিটেন্সের তুলনায় ৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বেশি। আগের বছর মে মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর আগে গত এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা ২০৬ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিটেন্স পাঠান। গত বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় প্রায় ৯৭ কোটি ডলার বেশি রেমিটেন্স এসেছিল। গত বছরের এপ্রিল মাসে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার। চলতি বছর মার্চ মাসে রেমিটেন্স আসে ১৯১ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ১৭৮ কোটি ডলার।
গত অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এবার ১১ মাসে তার চেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে। বিদ্যমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্সের পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে তা হবে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স।
গত বছরের জুলাই মাসে প্রবাসীরা ২৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স প্রেরণ করেছিলেন, যা দেশের ইতিহাসে এক মাসে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। এবারও আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চলতি মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন প্রবাসীরা বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। তিনি বলেন, আগেও দেশে প্রচুর টাকা পাঠাতেন প্রবাসীরা। তবে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানোর ফলে এসব টাকার কোনো হিসেব থাকত না। বৈদেশিক মুদ্রাও আসত না। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে সরকার রেমিটেন্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করায় রেমিটেন্সের প্রায় শতভাগই ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে। এতে একজন প্রবাসী একশ টাকা পাঠালে তার আত্মীয়স্বজন এখানে ব্যাংক থেকে ১০২ টাকা পাচ্ছেন। বিদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা আসার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। একই সাথে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও সমৃদ্ধ হচ্ছে। দুই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
এ ব্যাপারে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে পুরো পৃথিবী থমকে গেলেও আমাদের রেমিটেন্স বেড়েছে। এটি সুখবর। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী হুন্ডি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। করোনাকালে বিমান চলাচলসহ সার্বিক যোগাযোগ বিপর্যস্ত হওয়ায় হুন্ডি ব্যবসায়ীরা সুবিধা করতে পারছেন না। আগে বছরে আট থেকে দশ বিলিয়ন ডলার হুন্ডির মাধ্যমে আসত। তা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে। এতে করে রেমিটেন্স প্রবাহে সুবাতাস বইছে। অপরদিকে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়াও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, আগে প্রবাসীদের প্রেরিত ডলার বিদেশে থেকে যেত। দেশের ব্যাংকের টাকা মেরে দেওয়ার মানসিকতা সম্পন্ন ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরা সেই ডলার কিনে এদেশীয় অর্থ পরিশোধ করতেন। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের টাকা মেরে দেওয়ার পাশাপাশি তারা বিদেশে কোটি কোটি ডলার পাচার করেছেন। রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে প্রবাসীদের বিদেশে বিনিয়োগকৃত সমুদয় অর্থ দেশে চলে আসছে কিনা সেটাও দেখতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বছরে ৬/৭ লাখ লোক বিদেশ যেতেন। করোনার জন্য তা কমে একেবারে ১৪/১৫ হাজারে নেমে এসেছে। বিদেশ থেকে এসেও বহু প্রবাসী দেশে আটকা পড়েছেন, যা বেকারত্ব বাড়িয়েছে। এই অবস্থার মাঝেও রেমিটেন্স বাড়ার পেছনে প্রবাসীদের পুঁজি দেশে চলে আসছে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। প্রবাসীরা যদি বিদেশ যেতে না পারেন তাহলে ভবিষ্যতে রেমিটেন্স প্রবাহের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন ধরনের আমদানির পরিমাণ কমেছে। এতে আমাদের খরচ কমে যাওয়ায় রিজার্ভ বাড়ছে। এটা ভালো দিক। তবে আকুর পাওনা পরিশোধসহ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেলে রিজার্ভ এত থাকবে না। রিজার্ভ ধরে রাখতে রপ্তানি আয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।