ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৮০৮ বার
কৃষি: দেশে চেরি টমেটোর চাহিদা মেটাতে আরো চারটি জাত উদ্ভাবন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষণা) অধ্যাপক এ. কে. এম আমিনুল ইসলাম। জুনের প্রথম সপ্তাহে জাতগুলো জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বানিজ্যিকভাবে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করেছে।
অধ্যাপক এ. কে. এম আমিনুল ইসলাম বলেন, উদ্ভাবিত জাতগুলো হলো বিউ চেরি টমেটো ২, বিউ চেরি টমেটো ৩, বিউ চেরি টমেটো ৪ ও বিউ চেরি টমেটো ৫। আমাদের দেশে ভোক্তা ও চাষি পর্যায়ে চেরি টমেটোর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । এদের প্রায় বেশির ভাগই বিদেশী কোন জাত কে দেশী আবহাওয়ায় উপযোগী করে চাষ করা হচ্ছে। এই জাত গুলোই দেশে প্রথম বিদেশী জাতের চেরি টমেটোর সাথে দেশীয় টমেটোর সংকরায়ন এবং পরবর্তীতে পিউর লাইন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাপ্ত একেবারেই নতুন জাত হিসাবে উদ্ভাবন করা হয়েছে। দেশীয় স্বাদকে অক্ষুন্ন রেখে চেরি সাইজ আনতে গবেষক কে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭-৮ বছর। বিউ চেরি টমেটোর জাতগুলো দেশী আবহাওয়ায় কোন প্রকার অতিরিক্ত যত্নবিহীনভাবে দেশী টমেটোরমতই শীতকালে চাষযোগ্য, উচ্চফলনশীল, আকর্ষনীয় আকৃতি, বর্ণ, খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু, মিষ্টি, কম বীজযুক্ত বা প্রায় বীজ বিহীন এবং পুষ্টিকর। গাছ প্রতি ফলন আড়াই থেকে সাড়ে তিন কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই জাতগুলো আমাদের জন্য হতে পারে বিদেশী জাতগুলোর পরিপূরক।
দেশের কৃষক এবং ভোক্তার চাহিদায় প্রমান সাইজের দেশীয় টমেটোর পরে নতুন করে জনপ্রিয় হচ্ছে চেরি টমেটো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষণা) প্রফেসর ড. এ. কে. এম আমিনুল ইসলাম সম্প্রতি বিউ চেরি টমেটো ২, বিউ চেরি টমেটো ৩, বিউ চেরি টমেটো ৪ ও বিউ চেরি টমেটো ৫ নামে তিনটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। তার উদ্ভাবিত চেরি টমেটোর জাত তিনটি এ মাসে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বানিজ্যিকভাবে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করে। গবেষক জানান আমাদের দেশে ভোক্তা ও চাষি পর্যায়ে চেরি টমেটোর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । এদের প্রায় বেশির ভাগই বিদেশী কোন জাত কে দেশী আবহাওয়ায় উপযোগী করে চাষ করা হচ্ছে।
এই জাত গুলোই দেশে প্রথম বিদেশী জাতের চেরি টমেটোর সাথে দেশীয় টমেটোর সংকরায়ন এবং পরবর্তীতে পিউর লাইন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাপ্ত একেবারেই নতুন জাত হিসাবে উদ্ভাবন করা হয়েছে। দেশীয় স্বাদকে অক্ষুন্ন রেখে চেরি সাইজ আনতে গবেষক কে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭-৮ বছর। বিউ চেরি টমেটোর জাতগুলো দেশী আবহাওয়ায় কোন প্রকার অতিরিক্ত যত্নবিহীনভাবে দেশী টমেটোরমতই শীতকালে চাষযোগ্য, উচ্চফলনশীল, আকর্ষনীয় আকৃতি, বর্ণ, খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু, মিষ্টি, কম বীজযুক্ত বা প্রায় বীজ বিহীন এবং পুষ্টিকর। গাছ প্রতি ফলন ২.৫-৩.৫ কেজি। এছাড়াও সুপার শপ গুলোতে যে বিদেশী বীজ বিহীন বা কম বীজযুক্ত চেরি টমেটো পাওয়া যায় তার বেশির ভাগই প্রায় ১০০০ থেকে ১৩০০ টাকা/কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়।
নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোর রান্না ছাড়াই পাকা অবস্থায় আঙ্গুরের মত খাওয়া যায় বিধায় এবং এদের এন্টিঅক্সিডেন্ট গুনাবলী বেশী থাকায় মানবদেহে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করবে। এতে বেশী পরিমানে লাইকোপিন থাকায় ত্বকের যত্নে চেরী টমেটো খুবই উপকারী। চেরি টমেটো গাছের ক্যানোপি কম হওয়ায় ছাদ বাগানেও এ জাতগুলো সহজেই উৎপাদন করা যাবে। এ জাত উদ্ভাবনে গবেষকের সহযোগী ব্রিডার হিসেবে ছিলেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা মোস্তফা ইরা।
সহকারী অধ্যাপক ফারজানা মোস্তফা ইরা বলেন, ছাত্র অবস্থায়ই এই চেরি টেমটো নিয়ে গবেষনায় আগ্রহী ছিলাম এবং পরবর্তীতে চেরি টমেটো উদ্ভাবন প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত হই। দেশের মানুষের উৎপাদন ও খাদ্য চাহিদায় এটি কৃষকের এবং ভোক্তার প্রথম পছন্দ হবে বলে আশা করেন তিনি ।
নিচে জাতগুলোর বৈশিষ্ট্য দেয়া হলো
বিউ চেরি টমেটো ২: গাছ কিছুটা লম্বা হয়, এ টমেটো দেখতে অনেকটা নারকেলি বরই’র মতো, দুই মাথা কিছুটা চোখা আকৃতির, প্রতি গুচ্ছে ১৫-২০টি টমেটো ধরে। যার প্রতিটির ওজন হয় ২০-২২গ্রাম। প্রতি গাছে ১৮০-২০০টি টমেটো ধরে এবং ফলন হয় ২ থেকে ৩কেজি।
বিউ চেরি টমেটো ৩: গাছ কিছুটা লম্বা হয়। এর ফল ছোট, মাথা অনেকটা গোলাকৃতির, তবে ফলের নিচের দিকে ছোট বোঁটার মত অংশ থাকে। প্রতিগুচ্ছে ১০-১২টি টমেটো ধরে। যার প্রতিটির ওজন হয় ১০-১২গ্রাম। প্রতিগাছে ২০০-২২০টি টমেটো ধরে এবং ফলন হয় দুই থেকে আড়াই কেজি।
বিউ চেরি টমেটো ৪: গাছ লম্বা এবং কম ঝোপড়া। ফল কিছুটা লম্বা ও এক মাথা কিছু চোখা, প্রতিগুচ্ছে ১২-১৫টি ফল ধরে। প্রতি ফলের ওজন ১৮-২০গ্রাম। প্রতিগাছে ২০০-২৫০টি ফল ধরে, ফলন হয় আড়াই থেকে তিন কেজি।
বিউ চেরি টমেটো ৫: গাছ লম্বা ও ঝোপড়া হয়। ফল গোলাকার, প্রতিগুচ্ছে ২০-২৫টি টমেটো ধরে। প্রতিটির ওজন ১২-১৪গ্রাম। প্রতি গাছে ৩০০-৩৫০ টমেটো ধরে এবং ফলন হয় আড়াই থেকে সাড়ে তিন কেজি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ গিয়াসউদ্দীন মিয়া জানান, এ গবেষক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিকভাবে নানা শষ্যের জাত উদ্ভাবন করে যাচ্ছেন। তিনি এবার উচ্চমূল্যের চেরি টমেটোর চারটি জাত যোগ করলেন। জাতগুলোর আকর্ষনীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য এগুলো বানিজ্যিক উৎপাদন কিংবা ছাদ বাগান, উভয়ক্ষত্রেই সমান জনপ্রিয়তা পাবে। দেশী আবহাওয়া উপযোগী করে উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল এ জাতগুলো দেশের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা চেরি টমেটো চাষ করে বেশী লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন।