ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৫৩ বার
অর্থনীতি ডেস্ক: প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় ব্যাংক সেবা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের যাত্রা বছর সাতেক আগে। শুরু থেকে দ্রুতগতিতেই সম্প্রসারিত হয়েছে গ্রামমুখী ব্যাংক সেবাটি। তবে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পালে সবচেয়ে বেশি হওয়া লেগেছে চলমান মহামারীতে। পরিসংখ্যান বলছে, করোনাকালের এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০৯ শতাংশ। একই সময়ে এজেন্টদের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭১ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৯৯ শতাংশে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ। ২০২০ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চের তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাসৃষ্ট আর্থিক দুর্যোগে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি সচল ছিল। এরই ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধিতে। পাশাপাশি ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর ঘরের সঞ্চিত অর্থও ব্যাংকে আসতে শুরু করেছে। শহুরে গণ্ডি ভেঙে দিয়ে এজেন্টদের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া দেশের ব্যাংক খাতের বড় সফলতা। এর মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যেই আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে কয়েক ধাপ এগিয়েছে দেশ।
এখন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি ২৮টি ব্যাংক। এর মধ্যে চারটি ব্যাংক এজেন্ট নিয়োগ, আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ ও রেমিট্যান্স আহরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এজেন্ট আউটলেট চালুর ক্ষেত্রে সবার শীর্ষে আছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। আর এজেন্টদের মাধ্যমে হিসাব সংখ্যা চালুর ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে ব্যাংক এশিয়া। এজেন্টদের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে ইসলামী ব্যাংক। এজেন্টদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহে শীর্ষস্থানও দেশের বৃহৎ ব্যাংকটির। তবে এজেন্টদের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান ব্র্যাক ব্যাংকের। এজেন্ট নিয়োগ, নতুন নতুন আউটলেট ও ব্যাংক হিসাব খোলায় একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা করছে ব্যাংকগুলোও। সেবাটিকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টিভঙ্গিও বেশ উদার।
কভিডসৃষ্ট দুর্যোগে ২০২০ সালের মার্চের শেষ নাগাদ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসে। গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিতে দেশে অর্থনৈতিক কার্যক্রম এক প্রকার বন্ধ ছিল। এরপর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এ মুহূর্তে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চের শেষ দিন পর্যন্ত দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে ২২টি ব্যাংকের এজেন্ট ছিল ৮ হাজার ২৬০টি। চলতি বছরের মার্চে এজেন্টের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৪৫-এ দাঁড়িয়েছে। করোনাকালের এক বছরে ব্যাংকগুলোর এজেন্ট সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৮৫টি। এ হিসাবে এজেন্টের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এজেন্টের মতোই গত এক বছরে ৪ হাজার ৫৪৬টি আউটলেট বেড়েছে। ২০২০ সালের মার্চ শেষে এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৮৭৫। চলতি বছরের মার্চে আউটলেটের সংখ্যা ১৬ হাজার ৪২১-এ উন্নীত হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে আউটলেট বেড়েছে ৩৮ দশমিক ২৮ শতাংশ।
২০২০ সালের ৩১ মার্চ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চালু করা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ৬৪ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫১। করোনাকালের এক বছরে ৪৫ লাখ ২৫ হাজার ১৯৫টি নতুন ব্যাংক খোলা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্টদের মাধ্যমে চালু করা ব্যাংক হিসাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ২২ হাজার ৬৪৬টি। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক হিসাবের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
করোনাকালের এক বছরে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। কিন্তু এজেন্টদের মাধ্যমে সংগৃহীত আমানত বেড়েছে ১০৮ শতাংশের বেশি। চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৯৯ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। এ আমানতের মধ্যে ১৭ হাজার ৮২২ কোটি টাকা এসেছে এজেন্টদের মাধ্যমে। অথচ ২০২০ সালের ৩১ মার্চ এজেন্টদের মাধ্যমে সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ ছিল মাত্র ৮ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। করোনাকালের এক বছরে এজেন্টদের মাধ্যমে ৯ হাজার ২৮৭ কোটি টাকার আমানত সংগৃহীত হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চে এজেন্টদের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬৭৩ কোটি টাকা। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৫০১ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ হিসাবে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭১ শতাংশেরও বেশি।