ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

করোনা ইউনিটে কর্মরত ১৭ কর্মচারীর মানবেতর জীবন

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৫০ বার


করোনা ইউনিটে কর্মরত ১৭ কর্মচারীর মানবেতর জীবন

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি- ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে যখন কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে ঠিক তখন আউট র্সোসিংয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ ১৭ জন সেবা কর্মীর নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধি করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। ফলে ঝিনাইদহ করোনা ইউনিটের সেবা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে ঢাকা স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত এক প্রভাবশালী কর্মচারীর আবদার রক্ষা করা হয়নি বলে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়োগ ১৭ জন কর্মচারীর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অগ্রাহ্য করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগে ক্ষমতাধর ওই কর্মচারী নাকি তার এক স্বজনকে আউট সোর্সিং নিয়োগ দিতে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়েছিল।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, করোনা মহামারি শুরু হলে ২০২০ সালের ১৬ আগষ্ট ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে জরুরী ভিত্তিতে ল্যাব এটেনডেন্ট, পরিচ্ছন্নকর্মী, ওয়ার্ডবয় ও আয়াসহ ১৭ জনকে আউট র্সোসিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী তারা দুই মাস বেতন পেলেও ৭ মাস বিনা বেতনে কাজ করেছেন। দেশের অন্যান্য হাসপাতালে এ ভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের আরো ৬ মাস মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পাশ করা হলেও একমাত্র ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের কর্মচারীদের ফাইল ফেরৎ দেওয়া হয়েছে। ফলে ঝিনাইদহ করোনা ইউনিটের সেবা কার্যক্রম নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের (প্রশাসন) দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩ ফেব্রয়ারি ১৭২ নং স্মারকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক অফিস ১৭ জন কর্মচারির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম মেয়দ বৃদ্ধির প্রস্তাবটি ২০২১ সালের ২২ এপ্রিল ১৮৫৯/১ নং স্মারকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বরাবর পাঠিয়ে দেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে প্রস্তাবটি পাশ হয়নি। এ নিয়ে হতাশায় পড়েছেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে কর্মরত ১৭ জন কর্মচারী।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের ল্যাব এটেনডেন্ট শামিম আক্তার জানান, তিনি করোনা রোগীর রক্ত নিতে গিয়ে ৩ বার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তার জীব ছিল ঝুকির মধ্যে। মেয়াদ বৃদ্ধি না হলেও এখনো করোনা ইউনিটেই সেচ্ছা শ্রমে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। এ ভাবে বিনা বেতনে কাজ করতে গিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান। রহমতুল্লা ও শিউলি বেগম জানান, করোনা ইউনিটে কাজ করতে গিয়ে তারাও করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। এতে তাদের মৃত্যুও হতে পারতো। কিন্তু নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধি না হওয়ায় তাদের ভাগ্য অনিশ্চয়তার সিঁকেয় ঝুলে আছে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে কর্মরত লুনা খাতুন, মমতাজ পারভিন, রাজু আহম্মেদ, শেখ আনাস শাকিল ও কামরুজ্জামান জানান, তারা আশা করেছিলেন অন্যান্য হাসপাতালের মতো তাদেরও নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে হয়নি। বিনা বেতনে তারা ৭ মাস করোনা ইউনিটে কাজ করছেন। তাদের ভাষ্য মেয়াদ শেষ হলেও রোগীদের দুর্দশা লাঘবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেচ্ছাসেবী হিসেবে এখন কাজ করাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ হারুন অর রশিদ জানান, ১৭ জন কর্মচারির মেয়াদ বৃদ্ধি প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তাদের মেয়াদ বৃদ্ধি প্রস্তাব অনুমোদন হয়নি।

তিনি বলেন এই ১৭ জন কর্মচারী চলে গেলে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবে। ফলে স্থানীয়ভাবে তারা বিনা বেতনে সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন।


   আরও সংবাদ