ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৮৪৬ বার
অর্থনীতি ডেস্ক: দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাজার মূলধন সবচেয়ে বেশি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের। গতকাল পর্যন্ত কোম্পানিটির বাজার মূলধন ৪১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তালিকাভুক্তির এক বছরেরও কম সময়ে ওয়ালটনের ভ্যালুয়েশন বেড়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি। বাজার মূলধনে এমন উল্লম্ফনের মধ্যেই কোম্পানিটির একজন প্রভাবশালী ও এককভাবে সবচেয়ে বেশি শেয়ারধারী পরিচালক স্বতন্ত্র ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে বাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন—ওয়ালটন পরিবার এক থাকছে তো?
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০২০ সালে তালিকাভুক্ত হয়েছে পুঁজিবাজারে। এককভাবে কোম্পানির সিংহভাগ শেয়ারধারী উদ্যোক্তা পরিচালক এসএম আশরাফুল আলম। সম্প্রতি তিনি পৃথক কোম্পানির মাধ্যমে স্বতন্ত্র ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই মধ্যে মিরসরাইয়ে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জমি বরাদ্দ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তিনি। নতুন এ কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাজধানীর গুলশানে অফিস নেয়া হয়েছে।
পর্ষদে কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা জানতে চাইলে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা ব্যবসা ভালো করছি। আমাদের প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণের কাছাকাছি। পর্ষদ স্বাভাবিক গতিতে কাজ করে যাচ্ছে। কারো কোম্পানি ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। হয়তো ভুলভাবে বলা হচ্ছে। মুখরোচক কিছু কথাবার্তাও হয়তো হচ্ছে। এটির কোনো বাস্তবতা থাকলে আমার জানার কথা।
ওয়ালটনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৮ সালে। এরই মধ্যে এটি দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিকস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে পুঁজিবাজারে আসে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। তালিকাভুক্তির সময় কোম্পানিটির শেয়ারের ভ্যালুয়েশন ছিল ৭ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল লেনদেন শেষে এ ভ্যালুয়েশন দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকায়। এত কম সময়ে বাজার মূলধনে এমন উল্লম্ফন দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে কখনো দেখা যায়নি।
বাজার মূলধনের দিক দিয়ে এরই মধ্যে গ্রামীণফোন বাদে তালিকাভুক্ত স্থানীয় ও বহুজাতিক সব কোম্পানিকে ছাড়িয়ে গেছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। ডিএসইর গতকালের বাজার মূলধনের ৯ দশমিক ১ শতাংশ দখলে নিয়ে গ্রামীণফোনের পরেই রয়েছে ওয়ালটন। বাজার মূলধনে ওয়ালটনের পরে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), রবি আজিয়াটা, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ইউপিজিডিসিএল), রেনাটা লিমিটেড, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও বেক্সিমকো লিমিটেড। এগুলোর সবই বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি। আয় ও মুনাফার দিক থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শত বছরের পুরনো বহুজাতিক ইলেকট্রনিকস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক সিঙ্গার বাংলাদেশকেও ছাড়িয়ে গেছে ওয়ালটন।
ওয়ালটন গ্রুপ ও মার্সেল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এসএম নজরুল ইসলাম। ১৯৭০ সালে ইস্পাত শিল্পের মাধ্যমে তার ব্যবসার যাত্রা। ১৯৭৭ সালে তিনি রেজভি অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যার সংক্ষিপ্ত রূপ আরবি গ্রুপ। তবে ওয়ালটনের ব্যবসার প্রসার হয়েছে এসএম নজরুল ইসলামের ছেলে এসএম নুরুল আলম রেজভির হাত ধরে, যিনি বর্তমানে ওয়ালটন গ্রুপের চেয়ারম্যান।
বর্তমানে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের মোট শেয়ারের ৯৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশই রয়েছে এর উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ও দশমিক ৫২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।
পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির বাজার মূলধনে উল্লম্ফনের প্রভাবে এর উদ্যোক্তা পরিচালকেরাও বর্তমানে অন্যতম সম্পদশালীতে পরিণত হয়েছেন। এর মধ্যে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এসএম নুরুল আলম রেজভির কাছে থাকা শেয়ারের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। ভাইস চেয়ারম্যান এসএম শামসুল আলমের শেয়ারের মূল্য ৮ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। পরিচালক এসএম আশরাফুল আলমের শেয়ারের মূল্য ৮ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। পরিচালক মাহবুবুল আলমের শেয়ারের মূল্য ৭ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা, পরিচালক এসএম রেজাউল আলমের শেয়ারের মূল্য ৫ হাজার ৩০৩ কোটি, পরিচালক এসএম মনজুরুল আলম অভির শেয়ারের মূল্য ৪ হাজার ৭৯ কোটি এবং পরিচালক তাহমিনা আফরোজ তান্না ও রাইসা সিগমা হিমার প্রত্যেকের কাছে কোম্পানিটির ১ হাজার ২২৩ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার রয়েছে।
জানা গেছে, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তা পরিচালক এসএম আশরাফুল আলম স্বতন্ত্র ব্যবসার কার্যক্রম শুরু করেছেন। জমি বরাদ্দের প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরই কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হবে। চলতি বছরের মধ্যে কারখানা থেকে পণ্য বাজারে আনার পরিকল্পনাও আছে। এসএম আশরাফুল আলমের গড়ে তোলা স্বতন্ত্র এ কোম্পানির নাম রিমার্ক এইচবি লিমিটেড। এতে চেয়ারম্যান হিসেবে থাকছেন তিনি। আর তার স্ত্রী-সন্তান রয়েছেন পরিচালক হিসেবে। রিমার্ক এইচবির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন আশরাফুল আম্বিয়া।