ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১০০৯ বার
আইটি: সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে ভারতে আইনি রক্ষাকবচ হারাল মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার। নয়া ডিজিটাল নজরদারি বিধি নিয়ে এমনিতেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন চলছিল প্রতিষ্ঠানটির। তার ওপর উত্তরপ্রদেশে ঘটে যাওয়া এক প্রবীণ ব্যক্তিকে নিগ্রহের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে মঙ্গলবার রাতে যোগীরাজ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই তাদের আইনি রক্ষাকবচ তুলে নেওয়া হয়েছে বলে দিল্লি সূত্রের খবর। যাতে অপরাধ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারি বিধি লঙ্ঘন করায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রক্ষাকবচ হারিয়েছে টুইটার। এবার থেকে যেকোনও ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যাবে। পদক্ষেপ নেওয়া যাবে অপরাধ আইনে।
নেটমাধ্যমে প্রকাশিত যাবতীয় লেখালেখি এবং ভিডিওর উৎস ভারত সরকারকে জানাতে হবে বলে টুইটার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইউটিউবের মতো সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ভারতে বিশেষ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে বলা হয়েছে তাদের, যার হাতে আপত্তিকর পোস্টের ওপর নজরদারি এবং তা সরানোর দায়িত্ব থাকবে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে টানাপড়েন চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। এর মধ্যেই টুইটারের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হল।
ভারত সরকারের বিধিনিষেধ বাক-স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে এর আগে সাফ জানিয়েছিলেন টুইটার কর্তৃপক্ষ। তারপরও ভারতে একজন অন্তর্বর্তীকালীন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে বলে মঙ্গলবারই জানায় তারা। যদিও সরকারের দাবি, গত মাসে চালু হওয়া নয়া বিধিনিষেধ অন্য সংস্থাগুলো মেনে নিলেও একমাত্র টুইটারই বেঁকে বসেছে।
তবে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে উত্তরপ্রদেশে দায়ের হওয়া যে মামলার কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়েও বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। সম্প্রতি একদল দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত হন সুফি আবদুস সামাদ নামের এক বৃদ্ধা। সেই ঘটনার ভিডিও নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, মাদুলি এবং কবচ বিক্রির দায়ে ওই বৃদ্ধকে ‘বন্দে মাতরম’ এবং ‘জয় শ্রী রাম’ বলতে বাধ্য করে দুষ্কৃতীরা। এমনকি তার দাড়িও কেটে নেওয়া হয়।
এই ঘটনায় গত কয়েক দিন ধরেই সরগরম নেটমাধ্যম। বিষয়টির তীব্র নিন্দা করেছেন বিশিষ্টজনেরা। সংবাদমাধ্যমেও উত্তরপ্রদেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়া হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তাদের দাবি, ভুল বুঝিয়ে কবচ বিক্রির জন্য ওই বৃদ্ধের ওপর রেগেছিলেন অনেকে। এটা কোনও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা নয়। বরং হিন্দু-মুসলিম, দু’পক্ষের ছ’জন মিলে হামলা চালায়।
উত্তরপ্রদেশের পুলিশের অভিযোগ, এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার জন্য দায়ী টুইটার কর্তৃপক্ষই। যদিও লিখিত বিবৃতিতে সেই অভিযোগ খারিজ করে দেয় টুইটার, যা ১৪ জুন উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সকলের সামনে তুলেও ধরে। কিন্তু তাদের দাবি, সতর্ক করা সত্ত্বেও ওই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক মন্তব্যগুলো মোছেনি টুইটার। নিগ্রহের ওই ভিডিওটিকে বিকৃত বলে সতর্কবার্তাও দেয়নি, তাই তাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াই উচিত। সে অনুযায়ী টুইটারের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ইন্ধন জোগানোর মামলা দায়ের করে তারা। সূত্র: আনন্দবাজার