ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭২৩ বার
আইন আদালত: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবরে ঘটলেও মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবেই মূলত মামলাটির বিচার স্থগিত রয়েছে।
আবরার হত্যা মামলা এখন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে সাফাই সাক্ষীর পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ মামলাটির তিন আসামির সাফাই সাক্ষীর জন্য ১৮ এপ্রিল ধার্য থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে তা আটকে যায়।
এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা জানান, ‘বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যা মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য ছিল গত ১৮ এপ্রিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে নিম্ন আদালতের সব পুরনো মামলার কার্যক্রমের সঙ্গে এই মামলাও স্থগিত রয়েছে। আদালত খুলে দেওয়ার পর আশা করি মামলাটির বিচার দ্রুত হবে ও রায় ঘোষণা হবে। শুরু থেকেই আমরা রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালনা করে আসছি।’
আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ জানান, ‘আমার ছেলের হত্যা মামলার বিচার ভালোভাবেই এগোচ্ছিল। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ। আসামিদের সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় তা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা না থাকলে হয়তো এতদিনে ছেলে হত্যার বিচার পেতাম। এখনও লোকজন আমাদের জিজ্ঞেস করে, ছেলের হত্যা মামলার বিচার কতদূর। আমরা চাই আসামিদের যেন সর্বোচ্চ সাজা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আবরারকে হারিয়ে তার মা এখনও মানসিকভাবে ভেঙে আছে। এখনও ছেলের জন্য কাঁদে। হত্যার প্রায় দুই বছর হয়ে গেলো। আবরারের মা চায় মামলার কার্যক্রম যেন দ্রুত শেষ হয়।’
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরাও চাই মামলাটির বিচারকাজ দ্রুত শেষ হোক। আমরাও চাই আসামিদের মধ্যে যারা দোষী তারা যেন সাজা পায়। তবে যারা নির্দোষ, তারা যেন মুক্তি পায়।’ এর আগে ১৪ মার্চ ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে ২২ আসামি আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে।
মামলায় মোট ৪৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। গতবছরের জানুয়ারিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ পাঠানোর আদেশ দেন।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগপত্রে ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও ৬ জনের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এজাহারের বাইরে থাকা ৬ জনের মধ্যে ৫ জনসহ মোট ২২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছেন ৩ জন। অভিযোগপত্রে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এবং ২১টি আলামত ও ৮টি জব্দ তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
এজাহারে থাকা আসামিরা হলো- মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম।
এজাহারের বাইরে থাকা ছয় আসামি হলো- ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এসএম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ। পলাতক তিন আসামি-মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে প্রথম দু’জন এজাহারভুক্ত আসামি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত তিনটার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ পরে ২২ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিল।
আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।