ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

মানুষের কল্যাণে অদৃশ্যভাবে ফেরেশতারা নিযুক্ত

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৮১২ বার


মানুষের কল্যাণে অদৃশ্যভাবে ফেরেশতারা নিযুক্ত

ইসলাম ডেস্ক: আল্লাহর বিশাল এ সৃষ্টি জগতের বিশেষ এক সৃষ্টির নাম ফেরেশতা। নূরের তৈরি এ ফেরেশতাদের পরিসংখ্যান শুধু আল্লাহ তাআলা জানেন। বিরামহীন ইবাদতের পাশাপাশি আসমান-জমিনের নানা কর্মযজ্ঞে আল্লাহ তাঁদের নিয়োজিত রেখেছেন। আল্লাহর হুকুমে মানুষের কল্যাণেও অদৃশ্যভাবে এ ফেরেশতারা নিযুক্ত আছেন। তাই ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন মৌলিক ইসলামী আকিদা-বিশ্বাসের অংশ। তাঁদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ ঈমানের দাবি। নিম্নে ফেরেশতাদের কর্মযজ্ঞ নিয়ে বর্ণনা করা হলো—

সার্বক্ষণিক ইবাদত ও আনুগত্য

আল্লাহর একনিষ্ঠ ইবাদত ও তাঁর আনুগত্য অর্জন একজন মুমিনের চির সাধনা। ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে। আর ফেরেশতারা সেই ইবাদত ও আনুগত্যে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকে। তাই স্বভাবতই ফেরেশতাদের প্রতি মুমিনের ভালোবাসা হওয়া উচিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাদের যে নির্দেশ দেন, তা তারা লঙ্ঘন করে না এবং তাদের যে নির্দেশ দেওয়া হয় তা তারা পালন করে।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)

মুমিনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা

আসমানে যেসব ফেরেশতা সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে, তারা আল্লাহর কাছে মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে, তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আপনার রহমত ও জ্ঞান সব কিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব, যারা তাওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদের ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন।’ (সুরা : গাফির, আয়াত : ৭)

মানুষের নিরাপত্তায় নিয়োজিত

মানুষের নিরাপত্তায় কাজ করাও ফেরেশতাদের অন্যতম একটি কাজ। আল্লাহর হুকুমে তাঁরা এ নিরাপত্তাকাজে যুক্ত থাকেন। ফেরেশতাদের মাধ্যমে মানুষকে অনেক বিপদ-আপদ থেকে আল্লাহ রক্ষা করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের জন্য তার সামনে ও পেছনে একের পর এক প্রহরী থাকে। তারা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ১১)

মুমিনদের প্রতি ভালোবাসা

ফেরেশতারাও আল্লাহর হুকুমে মুমিনদের ভালোবাসে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন তিনি জিবরাইল (আ.)-কে ডেকে বলেন, নিশ্চয়ই আমি অমুক বান্দাকে ভালোবাসি, কাজেই তুমিও তাকে ভালোবাসো। তখন জিবরাইল (আ.)-ও তাকে ভালোবাসেন এবং জিবরাইল (আ.) আকাশের অধিবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন। কাজেই তোমরা তাকে ভালোবাসো। তখন আকাশের অধিবাসীরা তাকে ভালোবাসতে থাকে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে সম্মানিত করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ৩২০৯)

জিকিররতদের অনুসন্ধান ও পক্ষাবলম্বন

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর একদল ফেরেশতা আছেন, যাঁরা আল্লাহ্র জিকিররত লোকদের পথে পথে অনুসন্ধান করেন। যখন তাঁরা কোথাও আল্লাহর জিকিররত লোকদের দেখতে পান, তখন ফেরেশতারা পরস্পরকে ডাক দিয়ে বলেন, তোমরা নিজ নিজ কাজ করার জন্য এগিয়ে এসো। তখন তাঁরা তাঁদের ডানাগুলো দিয়ে সেই লোকদের ঢেকে ফেলেন নিকটবর্তী আকাশ পর্যন্ত। তখন তাঁদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞেস করেন (যদিও ফেরেশতাদের চেয়ে তিনিই অধিক জানেন), আমার বান্দারা কী বলছে? তখন তাঁরা বলেন, তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, তারা আপনার শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিচ্ছে, তারা আপনার গুণগান করছে এবং তারা আপনার মাহাত্ম্য প্রকাশ করছে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? তখন তাঁরা বলবেন, হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার শপথ! তারা আপনাকে দেখেনি। তিনি বলবেন, আচ্ছা, তবে যদি তারা আমাকে দেখত? তাঁরা বলবেন, যদি তারা আপনাকে দেখত, তবে তারা আরো অধিক পরিমাণে আপনার ইবাদত করত, আরো বেশি আপনার মাহাত্ম্য ঘোষণা করত, আরো বেশি পরিমাণে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করত। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহ বলবেন, তারা আমার কাছে কী চায়? তাঁরা বলবেন, তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতারা বলবেন, না। আপনার সত্তার কসম! হে রব, তারা তা দেখেনি। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, যদি তারা দেখত তাহলে তারা কী করত? তাঁরা বলবেন, যদি তারা তা দেখত তাহলে তারা জান্নাতের আরো বেশি লোভ করত, আরো বেশি চাইত এবং এর জন্য আরো বেশি বেশি আকৃষ্ট হতো। আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞেস করবেন, তারা কি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়? ফেরেশতারা বলবেন, জাহান্নাম থেকে। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তাঁরা জবাব দেবেন, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক, তারা জাহান্নাম দেখেনি। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, যদি তারা তা দেখত তখন তাদের কী হতো? তাঁরা বলবেন, যদি তারা তা দেখত, তাহলে তারা তা থেকে দ্রুত পালিয়ে যেত এবং একে অত্যন্ত বেশি ভয় করত। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। তখন ফেরেশতাদের একজন বলবেন, তাদের মধ্যে অমুক ব্যক্তি আছে, যে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং সে কোনো প্রয়োজনে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, তারা এমন উপবেশনকারী, যাদের মজলিসে উপবেশনকারী বিমুখ হয় না। (বুখারি, হাদিস : ৬৪০৮)

যুদ্ধে মুসলমানদের সহযোগিতা

মুআজ বিন রিফাআ ইবনে রাফি জুরাকি (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তাঁর পিতা বদর যুদ্ধে যোগদানকারীদের একজন। তিনি বলেন, একবার জিবরাইল (আ.) নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, আপনারা বদর যুদ্ধে যোগদানকারী মুসলমানদের কিভাবে দেখেন? তিনি বলেন, তারা সর্বোত্তম মুসলিম অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) এরূপ কোনো শব্দ তিনি বলেছিলেন। জিবরাইল (আ.) বলেন, ফেরেশতাদের মধ্যে বদর যুদ্ধে যোগদানকারীরাও তেমনি মর্যাদার অধিকারী। (বুখারি, হাদিস : ৩৯৯২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসা পোষণের মাধ্যমে পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন।

লেখক : মুদাররিস, মারকাজুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।


   আরও সংবাদ