ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

আষাঢ়ের বর্ষণ ধারা বয়ে গেছে কুড়িগ্রামের জনপদে

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৮৯ বার


আষাঢ়ের বর্ষণ ধারা বয়ে গেছে কুড়িগ্রামের জনপদে

কৃষি: সপ্তাহ জুড়ে অবিরাম বর্ষণ ধারায় কুড়িগ্রামের নদী-নালা খালবিলে জমেছে বৃষ্টির পানি। আষাঢ়ের এমন বষর্ণে নদী-নালা, নিম্নাঞ্চলসহ উঁচু স্থানের আমন ধান চাষের জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি জমে। জমিতে পানি জমলে এখানকার কৃষকরা ফিরে পায় স্বস্তি। আষাঢ়ের প্রত্যাশিত বৃষ্টিতে এবার মন ভরেছে কৃষকদের।

এখানকার কৃষক তাদের আমন চাষের জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পাওয়ার কারণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জমি তৈরিতে। আমনের ধান চারা রোপণের উপযোগী করতে কুড়িগ্রামের উঁচু এলাকার সর্বত্র দেখা গেছে কৃষকের কর্ম ব্যস্ততা। 

কৃষকরা আমনের জমি তৈরি করতে ব্যবহার করছেন পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর ও হালের গরু। বৃষ্টির জমানো পানি যাতে কোনোভাবে আমনের জমি থেকে নিষ্কাশন হতে না পারে সেজন্য জমির চতুর্থ দিকে দেয়া হচ্ছে মাটির তৈরি শক্ত বাঁধ বা আইল।

কোনো কোনো জমি থেকে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। বেশি পানি জমিতে থাকলে হালচাষ করতে অসুবিধে হবে বলে অতিরিক্ত পানি আমন চাষি জমি থেকে সরানো হচ্ছে। কেউ কেউ জমিতে থাকা আগাছা নিধনের জন্য প্রয়োগ করছে কীটনাশক।

জানা যায়, কুড়িগ্রামে দুটি মৌসুমে কৃষকরা চাষ করেন ধান। একটি হলো বোরো মৌসুম। যা মূলত শুরু শীতের শুরু থেকে। এ মৌসুমী ধান চাষকে নির্ভর করতে হয় সেচের উপর। বেদ্যুতিক সেচ পাম্প বা ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনের সেচের উপর।

অপরটি হচ্ছে আমনের মৌসুম। যেটি শুরু হয় মূলত বর্ষা মৌসুমে। এই আমন ধান চাষকে অনেকটা নির্ভর করতে হয় বৃষ্টির পানির উপর। প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টির পানির উপরই নির্ভর করে এখানকার আমন ধান চাষ করে থাকেন।
প্রতি বছরের মতো এবারো আষাঢ়ের বৃষ্টি নামার শুরু থেকেই কৃষকের আমনের জমি তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখানে কৃষকের সঙ্গে আমন ধানের জমি চারা রোপণের উপযোগী করতে কৃষককে সহযোগিতা করছেন কিষাণীরা।

স্থানীয় কৃষক মনির হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে আমরা আমন চাষ করে থাকি। বহুদিন পর এই বৃষ্টির নাগাল পেয়েছি। আমার প্রায় আড়াই বিঘা আমন চাষি জমিতে বৃষ্টির পানি জমেছে। এই জমানো পানিতে আমন ধান চারা রোপণের উপযোগী করতে আমি গরু দিয়ে হাল চাষ করছি। জমি তৈরি হলেই আমন ধান চারা রোপণ শুরু করব। 

কৃষক ও পাওয়ার টিলার মালিক মোজাম্মেল হক জানান, কুড়িগ্রামের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েকদিনের বয়ে যাওয়া বৃষ্টিতে আমন চাষি জমি গুলোতে বৃষ্টির পানি জমায় তারা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
তিনি পাওয়ার টিলার দিয়ে এক বিঘা জমি একবার চাষ করতে ২০০ টাকা করে কৃষকের কাছে চাষ খরচ নিচ্ছেন বলেও জানান।

কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, আষাঢ়ের বৃষ্টি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম-গঞ্জে কৃষকের আমন চাষের জমি তৈরির ব্যস্ততা বেড়েছে। তিনি তার পাওয়ার টিলার মেশিন দিয়ে নিজের জমিসহ আশপাশের এলাকার মানুষদের জমি চাষ করার কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।

স্থানীয় পাওয়ার টিলার চালক আনারুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামের জনপদে প্রতিদিনেই আষাঢ়ের বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নীচু, উঁচু এলাকায় কৃষকের আমন ধান চাষি জমিগুলোতে পানি থাকায় কৃষকরা আমন ক্ষেত তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

স্থানীয় এক কিষাণী ফাতেমা বেগম বলেন, আমরা আবাদ করে পেটের ভাত জোগান দেই। এবার আমন ধান রোপণের জন্য জমি তৈরিতে আমার স্বামী ও শ্বশুরকে আমি বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। নিজেদের কাজ নিজে করার দোষের নেই। 

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সরকার রাজু ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, এবার কুড়িগ্রাম জেলায় আমন ধান চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি। এ সময়ে জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় কৃষকরা আমন চাষের জমি তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আগামী এক সপ্তাহ পরেই এখানকার উঁচু স্থানের আমন চাষি জমিগুলোতে আমন চারা রোপণ কার্যক্রম শুরু হবে।

তিনি আরো জানান, তবে নদ-নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকার কৃষকরা এখনো আমন ধান রোপণের বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন না। কারণ- সামনে আসন্ন বন্যা। এ সময় আমন চারা রোপণ করলে বন্যায় নদ-নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকার আমন ধানের চারাগুলো নষ্ট হবে। 


   আরও সংবাদ