ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭০৯ বার
অর্থনীতি:- চলতি বছরের জুন শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের মন্দ ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। গত বছরের আলোচ্য সময়ে যা ১৭ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা ছিল। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এই ছয়টি ব্যাংকের অবলোপনকৃত মন্দ ঋণ বেড়েছে ১৬২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অবলোপনকৃত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে এই ছয় ব্যাংক। অর্থ মন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
একমাত্র বিডিবিএল ছাড়া পাঁচটি ব্যাংকে অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের স্থিতি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি। অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি সবচেয়ে বেশি সোনালী ব্যাংকে। এরপর দ্বিতীয় অগ্রণী ব্যাংক ও তৃতীয় অবস্থানে আছে জনতা ব্যাংক। অন্যদিকে, অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে একমাত্র জনতা ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। আদায়ে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বেসিক ব্যাংক।
সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) অনুযায়ী, সমাপ্ত অর্থবছরে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো আদায় করেছে ১৩২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৬৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এপিএর আওতায় ২০২০-২০২১ অর্থবছর শেষে সোনালী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে গত জুন শেষে সোনালীর অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে, এপিএর আওতায় গত অর্থবছরের অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ব্যাংকটির আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৩৯ কোটি টাকা।
চুক্তির আওতায় জনতা ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫০১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অন্যদিকে, অবলোপনকৃত ঋণ থেকে জনতার আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৪২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
অগ্রণী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, অবলোপনকৃত ঋণ থেকে অগ্রণীর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৪০ কোটি টাকা।
বিডিবিএলের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৪৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে, অবলোপনকৃত ঋণ থেকে বিডিবিএলের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
রূপালী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৯৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে, অবলোপনকৃত ঋণ থেকে রূপালীর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
চুক্তির আওতায় বেসিক ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে, অবলোপনকৃত ঋণ থেকে বেসিকের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৮০ লাখ টাকা।
ঋণ শ্রেণীকরণের তিনটি ধাপ। সেগুলো হলো, সাব-স্ট্যান্ডার্ড, সন্দেহজনক এবং মন্দমান। সব ধরনের চলতি ঋণ, ডিমান্ড ঋণ, ফিক্সড টার্ম লোন অথবা যে কোনো ঋণের কিস্তি তিন মাসের বেশি, কিন্তু ৯ মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণ হিসেবে হিসাবায়ন করা হয়। ৯ মাসের বেশি কিন্তু ১২ মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা ডাউটফুল লোন বা সন্দেহজনক ঋণ হবে। আর ১২ মাসের বেশি অনাদায়ী ঋণ ব্যাড ডেবট বা মন্দ ঋণ হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এই প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।