নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৯২৪ বার
জয়পুরহাটেরপাঁচবিবি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী জাহাঙ্গীর আলমের নির্মানাধীন বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ উপজেলায় দীর্ঘদিন থেকে সরকারী চাকুরী করার সুবাধে উপজেলার দানেজপুর এলাকায় (হরিহরপুর মৌজায়) পাঁচবিবি-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে তিনি এই বহুতল বাড়ি নির্মাণ করছেন। জায়গাসহ যার নির্মাণ ব্যয় প্রায় কোটি টাকার উপরে। যা তার আয়ের সাথে বিশাল গড়মিল মনে করছেন এলাকাবাসী। অপরদিকে ভবনটি নির্মাণে স্থানীয় পৌরসভা থেকে যে নকশা অনুমোদন করা হয়েছে, সেই নকশাকে তোয়াক্কা না করে তিনি নিজের ইচ্ছেমত আন্ডার গ্রাউন্ড গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রেখে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। কিন্তুু নকশা বহির্ভূত বাড়ি নির্মাণ করার কারনে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নির্মাণ কাজ প্রায় ৫ মাস বন্ধ করে রেখেছিল। দীর্ঘদিন বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার পর পৌর কর্তৃপক্ষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পূনরায় নির্মাণ কাজ করেছেন। শুধু তাই নয় তিনি এখন পর্যন্ত কোন পৈতৃক সূত্রে বাবার সম্পদ না পেলেও তার নিজ উপজেলা পলাশবাড়ীতে দেড় বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন সরকারী চাকুরীর সুবাদে হাতে আলাউদ্দিনের চেরাগ পেয়ে যান। তিনি পাঁচবিবি উপজেলায় ২০০২ সালে সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০০৫ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এরপর গাইবান্ধা জেলার বোনারপাড়া, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট ও খানসামা, বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলাসহ পটুয়াখালী জেলায় চাকুরি করার পর পদোন্নতি নিয়ে উপজেল প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পুনরায় পাঁচবিবি উপজেলায় যোগদান করেন। এরপরেই হয়ে যান বেপরোয়া। ২০১৬ সালে হরিহরপুর গ্রামে প্রথমে আছিয়া বেগমের নিকট থেকে ৯ শতক এবং পরে আছিয়ার দুই মেয়ের নিকট থেকে ৪.৭৫ শতক মোট ১৩.৭৫ শতক জমি নিজের ও স্ত্রী লায়লা আরজুমানের নামে ক্রয় করেন। জমিক্রয় ও বাড়ি নির্মাণ এর সময়ে তিনি তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা সন্তানকে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বগুড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ রেখে তিন-চার বছর ধরে মাসে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। তার বিলাস বহুল বাড়ির নকশা বিষয়ে জানতে পাঁচবিবি পৌরসভায় গেলে সার্ভেয়ার সাহাদুল ইসলাম জানান, ২৯/০৫/২০১৯ সালে ৩৬৫নং স্মারকে শিক্ষা অফিসার তার স্ত্রী লায়লা আরজুমান বানু নামে পাঁচতালা ভবনের নকশার অনুমোদন করে নিয়েছেন। তবে তাতে আন্ডার গ্রাউন্ড এর কোন নকশা নেই। সড়েজমিনে বাড়িটির ছবি নিতে গেলে উৎস্যুক এলাকাবাসী জানান, শিক্ষা অফিসার সবার সঙ্গেই টাকার গরম দেখিয়েই খারাপ ব্যবহার করেন এবং টাকা দিয়েই সকলকে কিনে নিতে চান। শিক্ষা কর্মকর্তার আয়ের উৎস হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার ২৭/০৭/২০২১ইং তার গ্রামের বাড়ি পলাশবাড়ী উপজেলার ঘোড়াঘাট সড়কের নুনিয়াগাড়ী শিশু কানুন স্কুল এন্ড কলেজ এর পশ্চিম পার্শ্বে ভাই ভাই লাইব্রেরীসহ অনেক আগে নির্মিত পুরাতন একটি বাড়িতে তার বাবা মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুর রশিদ মাষ্টার, বড় ভাই মোস্তাঈন বিল্লাহ্ দিপুন, ছোট বোন মারুফা আক্তার দীপ্তিসহ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বললে জানা গেছে, বাবার পরিবার থেকে বাড়ি নির্মাণ বাবদ ৪ লক্ষ টাকা এবং নিজের ক্রয় করা জমি বন্ধক রাখা বাবদ দেড় লক্ষ টাকা পেয়েছেন, তবে তিনি বাবার পরিবারে মাসে মাসে খরচ বাবদ টাকা পাঠিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে তার গ্রামের বাড়ির পার্শ্বে স্থানীয় বালাইনাশক ডিলার শ্রী অনিল কুমার শীলসহ কয়েকজনের সাথে কথা বললে, তারা এসব জেনে আৎকে উঠেন এবং বলেন পরিবারের আয় থেকে তাকে দেবার মতো তার বাবার কিছু নেই। এর পরেও কোটি টাকার বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি তার এলাকার মানুষের কাছে অবাক বিষয়। এ বিষয়ে কুসুম্বা ইউনিয়নের জয়হার গ্রামে তার শ্বশুর বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে তার শ্বশুর পরিবারের লোকজন জানান, জাহাঙ্গীর শ্বশুর বাড়ি থেকে বাড়ি নির্মাণ বাবদ কোন অর্থনৈতিক সহায়তা পাননি, তবে লায়লা আরজুমান বানুর নামে যে জমিটুকু ক্রয় করা হয়েছে তাতে কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার জন্য কয়েকবার যাতায়াতকালে নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বর্তমান শিক্ষা কর্মকর্তা টাকা ছাড়া কোন ফাইলে স্বাক্ষর করেন না। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ফাইল সাক্ষর করতে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণের বিষয়টিতে তিনি নিজের আয়ের সাথে সংগতির দাবি করেন। এছাড়াও বাবার ও শ্বশুর বাড়ি থেকে বাড়ি করার ক্ষেত্রে টাকা প্রাপ্তির দাবি করেন। আর বাড়ির নির্মাণ কাজ নকশা বহির্ভুত যেটুকু হয়েছে তা তিনি গুদাম তৈরী করার জন্য করেছেন, খুব সমস্যা হলে বন্ধ করে দিবেন বলে জানান। নকশা বহির্ভুতভাবে বাড়িটি নির্মাণ করার বিষয়ে পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান হাবিবের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, অফিসকে ফাকি দিয়ে নকশা বহির্ভুতভাবে বাড়িটি নির্মাণ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
AbymÜvb Pj‡e